বিজ্ঞাপন

একটি হলেও ছেলে সন্তান চান ভারতের ৮০% মানুষ

May 18, 2022 | 2:10 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উপমহাদেশের দেশগুলোতে ছেলে সন্তানের বিশেষ চাহিদা নতুন নয়। বিশেষ করে ভারতে গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যা হলে ভ্রুণহত্যার ঘটনাও ছিল অহরহ। দেশটিতে এক হাজার পুত্রশিশুর বিপরীতে কন্যাশিশুর সংখ্যা ৯১৮-তে নেমে এসেছিল। সরকারি নানা পদক্ষেপে এ পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরণ ঘটলেও দেশটির জাতীয় এক জরিপের তথ্য বলছে, ভারতীয় নাগরিকদের পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা এখনো তীব্র।

বিজ্ঞাপন

ভারত সরকারের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (এনএফএইচএস-৫) তথ্য বলছে, দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একটি হলেও পুত্র সন্তান প্রত্যাশা করেন। আর এর পেছনে কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করার জন্য পুত্র সন্তানই ভরসা।

জরিপের তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ নির্ভরতার কারণেই পুত্র সন্তান চান ভারতীয় নাগরিকরা। তারা মনে করেন, মেয়েরা বিয়ের পর বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। তাছাড়া বিয়ের সময় তাদের বিপুল পরিমাণ যৌতুকও দিতে হবে। অন্যদিকে পুত্র সন্তানই মা-বাবার সঙ্গে থাকে এবং তাদের দেখাশোনা করে।

ভারতে গত একশ বছরেরও বেশি সময়ের আদমশুমারির তথ্য বলছে, দেশটিতে নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য, প্রতি ১ হাজার পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা ছিল ৯৪০ জন। আর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এক হাজার ছেলের বিপরীতে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ছিল ৯১৮। কন্যাশিশু ও নারীদের এভাবে ব্যাপক পরিমাণে পিছিয়ে থাকাকে ভারতের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করেন সমালোচকরা। এ কারণে ভারতকে ‘নিখোঁজ মেয়েদের দেশ’ বলেও অভিহিত করেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতিতেও ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে এনএফএইচএস-৫-এর এক জরিপে ভারতের নারী-পুরুষের সংখ্যার পার্থক্যে অনেক অগ্রগতি দেখা যায়। জরিপে উঠে আসে, প্রথমবারের মতো দেশটিতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেড়েছে! ওই জরিপে প্রতি এক হাজার পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা পাওয়া যায় এক হাজার ২০ জন। তবে প্রায় ৩০ কোটি পরিবারের মধ্যে ৬ লাখ ৩০ হাজার পরিবারে জরিপ চালানোর কাণে এতে প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনেই।

ওই জরিপে নারীদের সংখ্যায় এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও ভারতে সুদীর্ঘকাল থেকেই ছেলে সন্তানের প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি প্রায় একই রকম থাকতে দেখা গেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১৫ শতাংশ ব্যক্তিই বলছেন (১৬ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ শতাংশ নারী), তারা ছেলে সন্তান চান, মেয়ে সন্তান চান না। ২০১৫-১৬ সালের এনএফএইচএস-৪ জরিপের থেকে অবশ্য এই জরিপে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। ওই জরিপে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ১৯ শতাংশ পুরুষ ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন।

ভারতের অনেক দম্পতিই ছেলে সন্তানের আশায় একের পর এক মেয়ে জন্ম দিয়ে গেছেন। তাদেরই একজন দিল্লির বাসিন্দা ইন্দ্রানী দেবী। ৩২ বছরের ইন্দ্রাণী তিন কন্যাশিশুর জননী। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ‘পরিপূর্ণ পরিবারে’র স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তার আশায় পরপর তিনটি মেয়ে হওয়ায় এখন আর সন্তান নিতে চান না ইন্দ্রানী। পেশায় গৃহকর্মী ইন্দ্রানীর স্বামী বাসচালক। ইন্দ্রানী জানাচ্ছেন, তাদের পক্ষে তিনটির বেশি সন্তানকে বড় করা সম্ভব না।

বিজ্ঞাপন

ইন্দ্রানী দেবী ভারতের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সেই ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারীদের এক জন, যাদের কমপক্ষে দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে, কোনো পুত্র সন্তান নেই এবং তারা আর কোনো সন্তান চান না। দুই বা তার বেশি কন্যা সন্তান রয়েছে, পুত্র সন্তান নেই এবং আর কোনো সন্তান চান না- আগের জরিপে এমন নারীর সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ নতুন জরিপে এমন নারীর সংখ্যা বেড়েছে ২ শতাংশ।

শুধু তাই না, পুত্র সন্তানের বদলে কন্যা সন্তানের আকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে ভারতীয়দের মধ্যে। জরিপের তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ সালে যেখানে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ পুত্র সন্তানের বদলে কন্যা সন্তানের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন, সেখানে এই হার এখন বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন প্রবণতা ভারতের ক্রমহ্রাসমান প্রজনন হারে প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই নগরায়ন, নারী সাক্ষরতার ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি এবং গর্ভনিরোধক পণ্য ব্যবহারের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির নারীদের প্রজনন হার ২ শতাংশে নেমে আসে। এই হার ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে গেলে সাধারণত জনসংখ্যা কমতে শুরু করে।

১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের জন্য জনসংখ্যার পরিমাণের নিম্নগতিকে খারাপ কোনো বিষয় হিসেবে অভিহিত করতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। তবে জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাতে ভারসাম্য না থাকলে সেটি স্বাস্থ্যকর হবে না বলে মন্তব্য তাদের।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন