বিজ্ঞাপন

তেঁতুলতলা মাঠকে ‘নিজের বাড়ি’ বলে দাবি বিলকিস বানুর

May 31, 2022 | 4:59 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠকে ‘নিজের বাড়ি’ বলে দাবি করেছেন বিলকিস বানু নামে এক নারী। তিনি বলেছেন, সেখানে তার বাড়ি ছিল এবং তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সেখানে বাড়ির একাংশ রয়ে গেছে বলেও তার দাবি। এমনকি জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্যকে গুজব বলেও দাবি করেছেন। মঙ্গলবার (৩১ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিলকিস বানু।

বিজ্ঞাপন

বিলকিস বানু বলেন, ‘কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ নামে যে জায়গাটির কথা বলা হচ্ছে সেটি আমার বসতবাড়ি। ওখানে একটি সন্ত্রাসী গ্যাং আছে। ওই গ্যাংটিকে সেফ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার বাড়িটিকে মাঠ হিসেবে জানিয়েছে। মূলত ওইটা মাঠ না, ওটা আমার বাড়ি। তারা অপরাধগুলো (দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মিথ্যা বিভ্রান্তিকর তথ্য) ঢাকার জন্য আমার জায়গাটিকে খেলার মাঠ নামে গুজব ছড়িয়েছে।’

ওখানে তো মাঠ আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওটা মাঠ না, ওটা আমার বাড়ি। আমার বাড়িঘর ভেঙে ফাঁকা করে ফেলেছে ২০১৫ সালে। সেখানে আমার বাড়ি-ঘর ছিল, এখনও কিছু অংশ আছে। সেটা আসলে গেজেটভুক্ত সরকারি বাড়ি। সত্যি কথা বলতে ওখানে ছদ্মবেশে থাকি আমি। যখন মনে করি আমি সেফ আছি, তখন আমার মতো করে থাকি। যখন আমি নিরাপদ না, তখন জায়গাটা ফাঁকা দেখা যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাকে ওখানে আমার মতো করে থাকতে হয়। সেখানে মোট সম্পত্তি ৩১ শতাংশ। ফাঁকা জায়গা যেটা দেখছেন সেটা ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে বাড়িটি ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা। আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিল কলাবাগান থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত ও সেখানাকার মাদক ব্যবসায়ীরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এখানে থাকতে হলে টাকা দিতে হবে। আমরা যেভাবে কাজ করছি, সেভাবে কাজ করতে দিতে হবে। আমি রাজি না হওয়ায় আমার বাড়ি ভেঙে দেয়। সন্ত্রাসীরা হামলা করে।’

বিজ্ঞাপন

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারি গেজেটভুক্ত একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এটি আমার পক্ষে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে ২০১৩ সালে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে ডিসি হারুনকে বলেছেন জায়গাটি আমাকে বুঝিয়ে দিতে। উনারা আমাকে বুঝিয়ে দেননি। পরে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, এটি আমাকে বুঝিয়ে দিতে।’

জায়গাটি কলাবাগান থানার কি না? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বিলকিস বানু বলেন, ‘কলাবাগান থানা অধিগ্রহণের চেষ্টা করেছিল ওসি ইয়াসির আরাফাতসহ পুলিশ বিভাগ। সেটিকে আমি বাতিল করিয়েছি। ২০২০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় কলাবাগান থানার অধিগ্রহণ বাতিল করেছে।’

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুজব আখ্যা দিয়ে বিলকিস বানু বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা তারা অধিগ্রহণ করেছেন। ২৭ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। আমরা মিডিয়াতে দেখেছি। এটা গুজব, মিথ্যা কথা।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিলকিস বানু নিজেই। এ সময় তার পাশে কেউ ছিলেন না। ব্যানারে তার নামের পাশে লেখা ছিলো মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বিলকিস বানু, পিতা-মৃত এম এ খালেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বামী অ্যাডভোকেট কাজী ওবায়দুর রহমান। বর্তমান ঠিকানা- বাড়ি#২৪, উত্তর ধানমন্ডি, কলাবাগান, ঢাকা এই মর্মে আপনাদের মাধ্যমে সকলকে অবগত করছি যে, হাওয়া ভবনের গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও প্রভাবশালী ভূমিদস্যু আমার স্বামীর গাজীপুরের বসতভিটাসহ সকল সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করে ২০০১-২০০২ সালে। এমনকি আমার স্বামী আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সদস্য নির্বাচিত হলে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ফলে আমার স্বামীর ব্যারিস্টারি পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। সব শেষে প্রাণনাশের হুমকির মধ্যে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। হাওয়া ভবেনর গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের গাজীপুরের দু’টি বাড়ির মধ্যে একটি আমার স্বামীর জমিতে।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মৃত কাজী কামাল উদ্দিন (বীর বিক্রম) পরিবারের একজন সদস্য। দীর্ঘ ২৬ বছর তিনি আইনজীবী হিসাবে নিরীহ অসহায় মানুষকে আইনি সেবা দিয়ে রাষ্ট্রে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মহামান্য হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০১৩ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব ঘটনা তুলে ধরি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার জেলা প্রশাসক (তৎকালীন) ইউসুফ হারুনকে দ্রুত একটি আবাসন প্রদানের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালন না করলে যাবতীয় ঘটনা হাইকোর্টের নজরে তুলে ধরি। হাইকোর্ট বিভাগের রিট মামলাতে (৪১৬১/২০১৩) আমাকে একটি বাড়ি প্রদানের নিষ্পত্তির আদেশও জারি হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, হাইকোর্টের আদেশ এবং সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ বলে ২০১৫ সালে থেকে উত্তর ধানমন্ডি, কলাবাগানের ২৪ নম্বর বাড়িটি (পরিত্যক্ত) আমার একমাত্র ঠিকানা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘কলাবাগানের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী চক্র, ওসি ইয়াসির আরাফাত, এসপি মারুফ হোসেন সরদারসহ সংশ্লিষ্টরা আমার বাড়িকে কখনও থানা অধিগ্রহণ, কখনও খেলার মাঠ গুজব প্রচারণা চালাতে থাকে ২০১৫ সাল থেকে। ফলে থানা অধিগ্রহণ দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমি প্রচলিত আইনে দফায় দফায় আইনি পদক্ষেপসহ মামলা দায়ের করি। ওই সব মামলা এবং অধিগ্রহণ দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই তেঁতুলতলা মাঠটি কলাবাগান থানার বলে দাবি করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন