বিজ্ঞাপন

আয়োজকদের অবহেলাই কি কেড়ে নিয়েছে কে কে’র প্রাণ?

June 1, 2022 | 1:16 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বলিউডের জনপ্রিয় শিল্পী কে কে’র প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ভারত। বলতে গেলে মঞ্চে গাইতে গাইতেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন তিনি। কলকাতার নজরুল মঞ্চে ছিল সেই কনসার্ট। সেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কনসার্টের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, প্রচণ্ড ঘেমে উঠেছেন কে কে। বারবার ঘাম মুছছিলেন। একইসঙ্গে এসি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, বারবার সেটিই জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু সে কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, তিন হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার নজরুল মঞ্চে ছয় থেকে সাত হাজার শ্রোতা কে কে’র গান শুনতে জমায়েত হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন কনসার্টে উপস্থিত দর্শকরা। তারাই বলছেন, কলকাতার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ধারণসংখ্যার দ্বিগুণ দর্শকের উপস্থিতির সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র কাজ না করা— কোনোটিই আয়োজকরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এমনকি মঞ্চের ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন দর্শকরা। তাতেই অসুস্থ হয়ে মঞ্চ ছাড়েন কে কে। আয়োজকদের এই অবহেলাই কি তবে কেড়ে নিয়েছে কে কে’র প্রাণ— এমন প্রশ্নই এখন গোটা ভারতে।

কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানাচ্ছে, গান গাইতে শুরুর করার পর অনুষ্ঠানের মাঝেই অসুস্থবোধ করছিলেন কে কে। মাঝে ১০ মিনিটের বিরতিও নেন। কিন্তু চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের প্রমাণ রেখে কে কে মঞ্চ ছাড়েননি, ভক্তদের জন্য গেয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত যখন মঞ্চ ছাড়লেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই কে কে মারা গেছেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে বিস্তারিত।

 

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন— এমন অনেকেই বলছেন, মঞ্চে দরদর করে ঘামছিলেন শিল্পী। অনেকেই অভিযোগ করছেন, নজরুল মঞ্চের এসি ঠিকঠাক কাজ করছিল না। অনেকেই বলছেন, নজরুল মঞ্চের আসনসংখ্যা চেয়ে অনেক বেশি লোক সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে কনসার্টের বিভিন্ন মুহূর্তের ভিডিও। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কে কে স্টেজের এক পাশে দাঁড়িয়ে রীতিমতো হাঁসফাঁস করছেন গরমে। ছোট তোয়ালে দিয়ে বারবার ঘাম মুছছেন। আশপাশে যারা ছিলেন, তাদের বারবার বলছিলেন এসি ঠিকমতো কাজ করছে কি না। তবে তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি ফিরে যান গান গাইতে।

https://www.facebook.com/100007790555094/videos/pcb.3177378795865108/1118730232016875

বিজ্ঞাপন

কে কে যখন শেষ পর্যন্ত মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, তখনকার একটি ভিডিও-ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, এতটাই অসুস্থ বোধ করছেন যে তাকে রীতিমতো ধরে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এর পরের আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, হোটেলের রুমে গিয়ে বলতে গেলে বিছানার ওপর লুটিয়ে পড়লেন কে কে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসকরা কে কে’র মৃত্যুর পেছনে হার্ট অ্যাটাককেই কারণ মনে করছেন। তবে নজরুল মঞ্চের পরিবেশ আর সার্বিক অব্যবস্থাপনা তাকে হার্ট অ্যাটাকের দিকে ঠেলে দিয়েছে কি না— সেই প্রশ্নই সবার।

নজরুল মঞ্চে অব্যবস্থাপনার এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। ফসিলস ব্যান্ডের রুপমের স্ত্রী রুপসা দাশগুপ্ত যেমন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সম্প্রতি তারা নজরুল মঞ্চে দুইটি শো করেছেন। দু’বারই অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ দর্শক উপস্থিত ছিল। মঞ্চে পর্যন্ত উঠে আসত দর্শকরা। আর এসি কাজ করত না। তাতে বদ্ধ পরিবেশে রুপমসহ ব্যান্ডের সদস্যরা সবাই কোনো না কোনো পর্যায়ে বলছিলেন, মঞ্চে নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। আর সেখানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা থাকেন, কিছু বললেই তাদের উত্তর— এত লোকের মধ্যে এসি কী করে কাজ করবে!

বলিউড প্লেব্যাকের জনপ্রিয় শিল্পী কে কে’র মূল নাম কৃষ্ণকুমার কুনাথ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোথাও গান না শিখলেও গান ভালোবাসতেন। গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তার পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ ছবিতে ইসমাইল দরবার তাকে দিয়ে গাওয়ান ‘তাড়াপ তাড়াপ সে ইস দিল’। সালমানের লিপে সেই গান উন্মাদনা ছড়ায়। একই বছর মুক্তি পায় তার সলো অ্যালবাম ‘পাল’। ওই অ্যালবামের ‘পেয়ার কা পাল’ তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
র‌্যাহনা হে তেরে দিল মে সিনেমায় ‘সাচ ক্যাহ রাহা হ্যায় দিওয়ানা’, গ্যাংস্টার সিনেমায় ‘তুহি মেরি সাব হ্যায়’, বাচনা অ্যায় হাসিনো সিনেমায় ‘খুদা জানে’, ওম শান্তি ওম সিনেমায় ‘আখোমে তেরি আজাব সি’, লাইফ ইন আ মেট্রো সিনেমায় ‘আলবিদা’, ভুল ভুলাইয়া সিনেমায় ‘লাবো কো লাবো পে’, তুম মিলে সিনেমায় ‘দিল ইবাদাত’, জান্নাত সিনেমায় ‘জারা সা দিল মে’— একের পর এক এমন অসামান্য জনপ্রিয় সব গান তুলে দেন ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়। হয়ে ওঠেন ভারতের ‘ভয়েস অব লাভ’।

বিজ্ঞাপন

বলিউডের জনপ্রিয় প্রায় সব সংগীত পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন কে কে। হিন্দি ছাড়াও গেয়েছেন তামিল, তেলেগু, মালায়লাম, কন্নড়, অসমীয় ভাষার গান। এমনকি বাংলাতেও গেয়েছেন তিনি। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া কে কে মঙ্গলবার (৩১ মে) মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।

আরও পড়ুন- মঞ্চ থেকেই না ফেরার দেশে সংগীতশিল্পী কে কে

সারাবাংলা/টিআর/এসএসএ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন