বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়ায় শরণার্থী নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র

June 8, 2022 | 9:00 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০১৮ সালে ২৪ বছর বয়সী মিরন সোমালিয়া থেকে শরণার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। সে সময় ইউএনএইচসিআর’র মধ্যস্থতায় তৃতীয় একটি দেশে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ নিয়েছিলেন তিনি। তার কোনো ধারণাই ছিল না মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করার পর কী পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি রেস্টুরেন্টে তিনি ওয়েটার হিসেবে কাজ নেন। শরণার্থী হওয়ায় মালিকপক্ষ তার সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি করেনি। মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে মাসিক ২৯৬ ডলারে সেখানে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু, তাকে কখনোই প্রাপ্য মজুরি দেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী ওই শরণার্থী কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রথম মাসের পর তাকে আরও এক মাস কাজ করার পর মজুরি পরিশোধ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। তারপরের মাসে তাকে আবারও বলা হয় পরের মাসে মজুরি পরিশোধ করা হবে। ততদিনে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন তার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিনা পয়সায় কাজ করিয়ে নিচ্ছে মালিকপক্ষ। তারপর তিনি সেখানকার কাজ ছেড়ে দেন।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে মিরন বলেন, ওই সময়ে তাকে বিনা পয়সায় ওভারটাইম করিয়ে নেওয়া হতো। তিনি ফ্লোর এবং টয়লেটও পরিষ্কার করেছেন। তার গায়ের রঙ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করাসহ যৌন নিপীড়নের ঘটনাও ঘটাতেন সহকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

ওইসব ঘটনা তিনি কাউকে বলতে পারেননি, এমনকিও পুলিশকেও না। কারণ, তাহলে পুলিশ তার কাজ করাই বন্ধ করে দিতো।

যদিও, অনেক দেশের শরণার্থী মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। তা সত্ত্বেও দেশটিতে আইনিভাবে শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কোনো কাঠামো নেই। এমনকি ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেশন এবং ১৯৬৭ প্রটোকলের কোনটিতেই সই করেনি মালয়েশিয়া।

যে কারণে মালয়েশিয়ায় শরণার্থীরা কাজ করার অধিকার এবং সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একইসঙ্গে, কর্মক্ষেত্রে নিপীড়িত হলেও শরণার্থীরা কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা কীভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। সেখানে বলা হয়েছে, যে কাজগুলো কঠিন, বিপদজনক এবং নোংরা মালয়েশিয়রা করতে চান না, সেই কাজগুলো শরণার্থীদের দেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই দিনে ১৬ ঘণ্টা করে কাজ করছেন কিন্তু, মজুরি পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে এসাইলাম একসেস মালয়েশিয়ার আউটরিচ ম্যানেজার শিবারঞ্জনি মানিক্যাম বলেছেন, শরণার্থীদের সঙ্গে প্রত্যেকদিন এ ধরনের নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। মালয়েশিয়ার খাদ্যশিল্প নিপীড়নের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে।

তিনি বলেন, খাদ্যশিল্পে কাজ করছেন এমন ৭০ শতাংশ শরণার্থী তাদের সঙ্গে নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ বলেছেন, বিনা বেতনে কাজ করানোসহ কারণ না দর্শিয়ে বরখাস্ত করা এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

যদিও, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা বলছে মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শরণার্থীদের সরকারি স্বীকৃতি মিললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একেএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন