বিজ্ঞাপন

সেতু ভেঙে সেভেরোদোনেৎস্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে রুশ সেনারা

June 14, 2022 | 9:42 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শিল্পশহরের সবকটি সংযোগ সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে শহরটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় গভর্নর সের্হি হাইদাই বলেছেন, শহরে খাদ্য সরবরাহ এবং বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের ভাগ্য সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের উপর নির্ভর করছে বলে মনে করে ইউক্রেন ও রুশ সরকার। ফলে শহরটিতে দুই সামরিক শক্তি কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পূর্ব ডনবাসের জন্য এই যুদ্ধকে ইউরোপীয় ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস একটি যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এই যুদ্ধের মূল্য অনেক বেশি। এটি ভয়ংকর একটি যুদ্ধ।’ জেলেনস্কি মিত্রদের কাছে অস্ত্র সহায়তা চেয়ে বলেন, আমরা প্রতিদিন আমাদের মিত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছি। ইউক্রেনের জন্য এখন পর্যাপ্ত আধুনিক কামান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

ইউক্রেন সরকারের কর্মকর্তারা স্বীকার করে বলেছেন, ওই শহরে রুশ কামানের তোপে ইউক্রেনীয় সেনারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। ফলে শহরের কেন্দ্রসহ প্রায় ৭০ ভাগ এলাকা এখন রুশদের দখলে। রাশিয়াপন্থী স্বঘোষিত ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের একজন সামরিক প্রতিনিধি বলেছেন, শহরে থাকা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা মরতে হবে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে রাশিয়া প্রধান সামরিক লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছে। এর কারণ হলো, সেভেরোদোনেৎস্ক এবং নিকটবর্তী শহর লাইসিচানস্কের নিয়ন্ত্রণ নিলে পুরো লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পাবে মস্কো।  লুহানস্কের বেশিরভাগ এলাকা ইতোমধ্যে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৪ জুন) গভর্নর হাইদাই টেলিগ্রাম পোস্টে জানান, সেভেরোদোনেৎস্কের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শহরের তিনটি সংযোগ সেতু রয়েছে, যা শহরটিকে বাইরের অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে। এই তিনটি সেতুই ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। শহরে অবশিষ্ট বেসামরিক বাসিন্দাদের অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।

যুদ্ধের আগের তথ্য অনুযায়ী সেভেরোদোনেৎস্ক প্রায় ১ লাখ বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছিল। ওই শহরে ইউক্রেনের পক্ষে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী যুদ্ধারাও অংশ নিয়েছেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈনিক জর্ডান গ্যাটলি শহরটি রক্ষা করার জন্য লড়াই করার সময় নিহত হয়েছেন বলে রোববার তার পরিবার নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেক্সান্ডার মোতুজিয়ানিক সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, লুহানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একটি হলো সেভেরোদোনেৎস্ক। এ শহরে তীব্র লড়াই চলছে। শহরের প্রধান কেন্দ্রসহ প্রায় ৭০ ভাগ এলাকার দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।

রুশ বাহিনীর ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও সেভেরোদোনেৎস্ক তীব্র যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য লড়াই অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।

ওই শহর দখলের লড়াইয়ের রুশ বাহিনীর সামরিক শক্তির জায়গাটি চিহ্নিত করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া সক্রিয়ভাবে কামান গোলাবারুদ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। মাল্টিপল রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে তারা। রাশিয়ার সুবিধা তাদের বিমান শক্তি, যে কারণে তারা অগ্রসর হচ্ছে। তবে রাশিয়া সশস্ত্র যুদ্ধে প্রচুর সৈন্য হারাচ্ছে।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরি সাক তার সেনাদের দুর্বলতার জায়গাটি তুলে ধরে বলেছেন, ‘সেভেরোদোনেটস্কের প্রতিরক্ষাকারী ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে যদি আগে থেকেই পর্যাপ্ত ভারী অস্ত্র দেওয়া যেত তাহলে তারা কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত। সেনাদের হাতে যা আছে তা দিয়েই তারা শহরটিকে রক্ষা করছে, কিন্তু শত্রুকে প্রতিহত করতে এবং ইউক্রেনের ভূমি মুক্ত করতে অনেক বেশি ভারী অস্ত্র দরকার।’

বিজ্ঞাপন

তিনি রুশ সেনাদের অগ্রগতির কারণ হিসেবে বলেন, ‘রাশিয়া এই শহরে হামলায় যথেষ্ট সুবিধা উপভোগ করেছে। তারা প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার রাউন্ড গুলি, মর্টার শেল, বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ এবং একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে।’

উল্লেখ্য যে, গত সপ্তায় ইউক্রেনে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য ভারী অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এই প্রথমবারের যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় সহায়তা করার জন্য কিয়েভে মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম পাঠানো হবে।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন