বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

June 14, 2022 | 3:09 pm

আয়েশা আখতার ডালিয়া

আব্বাসউদ্দীনের ‘পদ্মার ঢেউরে…’ গানটা ছোটকালে কতো বছর বয়সে শুনেছিলাম মনে নেই। মনে আছে আমার প্রথম স্কুলটি ছিলো পদ্মাকে স্পর্শ করে। বাড়ী থেকে সামনে তাকালেও পদ্মা। দাদাবাড়ি বা নানাবাড়ি যেতাম– সেও পদ্মাকে ছুঁয়েই।

বিজ্ঞাপন

জন্মের পর পরিবারের সদস্যদের চেনার সাথে সাথেই চিনেছিলাম প্রমত্ত পদ্মা নদীকে। কখনো প্রখর স্রোত, কখনো শীতে একটু বিষন্ন নদীর রুপ। সেই পদ্মা পারের এই মানুষটি যখন দেখি– প্রমত্ত পদ্মার বুকে সেতুটি পূর্নাংঙ্গ আকার পেয়েছে। দেশজুড়ে মানুষ প্রবল উৎসাহে দিন গুনছেন স্বপ্নসেতুর উদ্বোধনের। ঠিক তখন কেমন যেন একটা অহংকার আসে। আসে নিজেদের শক্ত পায়ে দাঁড়ানো দেখার স্বস্তি। একজন মানুষের যোগ্য নেতৃত্ব একটি জাতিকে কোথায় নিতে পারে? সেই প্রশ্নের উত্তরও তো আমাদের পদ্মাসেতুই।

অনেক তাত্ত্বিক-বিশ্লেষক তাদের বিস্তর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে পদ্মাসেতুর বিষয়ে লিখবেন। তারা লিখুন, আমি এই রাষ্ট্রের একজন নিতান্ত সাধারন মানুষের চোখে গত কয়বছর ধরে দেখেছি পদ্মাসেতুর গড়ে ওঠা। দেখছি সঠিক নেতৃত্ব শুধু গালভরা বুলি দেয় না, শুধু স্বপ্ন দেখিয়েই থেমে থাকে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করে। যেমনটি করেছে বঙ্গবন্ধুর সন্তানের নেতৃত্বে থাকা সরকার।

দেশের বৃহত্তর এই স্থাপনাটি সত্যিই বিশাল কংক্রিটের স্থাপনা বলে মনে করি না। এই স্থাপনার সাথে একদিকে যেমন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নের স্বকীয়তা রয়েছে, তেমনই শুধু রাজনৈতিক কারনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নোবেল জয়ী থেকে দু’একজন সম্পাদকদের তৎপরতাও আমরা দেখেছি। দেখেছি কল্পিত দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শত শত টকশো। দেখেছি মিথ্যা তথ্যের উৎসবে মেতে ওঠা অনেক দেশি বিদেশী মানুষদের।

বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতু থেকে সরাসরি দেশের মানুষের যে উপকার- সেই উপকারের কথা না মেনে যারা প্রথম থেকেই বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। ই-মেইল চালাচালি থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে ধর্না দিয়েছেন মিথ্যা তথ্যের সম্ভার নিয়ে– তারা কি একবারও আজ এখন সেতুটি যখন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত, তখন নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেছেন? কি উত্তর দেবেন সেই কথিত ‘বড়’ মানুষেরা?

না, তারা কখনোই বিবেক শব্দটিকে নিজের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন না। কারন তারা বিবেকের ঘরে তালা লাগিয়েই নিজেদের তুলেছেন মুক্ত বাজারের পন্য হিসেবে। অবশ্য এটি নতুন নয়- ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, সিরাজ যখন নবাব ছিলেন জগত শেঠ ছিলেন সেই সময়ের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। যার অন্যতম একটি ব্যবসা ছিলো টাকা ধার দেওয়া, বিনিময়ে মুনাফা নেয়া। তার ভুমিকা তো আমরা জানি। তাই এখন আজকের বাংলাদেশে এই পরম্পরা থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। একজন নাগরিক হিসেবে আমিও দেশপ্রেমিক সুশীল সমাজ চাই- কিন্ত আজকেও এই বাংলাদেশে জগত শেঠের উত্তরাধিকার চাই না।

পদ্মাসেতু সত্যিই শুধু সেতু নয়। এই সেতু একদিকে যেমন দেশের অর্থায়নে তৈরি হওয়া প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, তেমনই এই সেতু আমাদের চিনিয়ে দিয়েছে– দেশের আলো হাওয়াতে থেকেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের। আমার বিশ্বাস- অনেক বছর পরে একদিন নতুন প্রজন্মের গবেষকের আমাদের আজকের সময়ের দিকে তাদের লেন্স স্থাপন করবেন। চলবে বিস্তর গবেষনা– বেরিয়ে আসবে অনেক টুকরো টুকরো ইতিহাস। তারাও তখন বলবেন- পদ্মাসেতু শুধুমাত্র বদলে যাওয়া বাংলাদেশের একটি বিশাল চিহ্নই নয়। বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাসের দেশবিরোধীদের চিনে নেয়ার ফিল্টারও।

বিজ্ঞাপন

আজ আমরা যারা দেশের ইতিহাস গড়ে তোলা এই স্থাপনা দেখে আবেগে উদ্বেলিত হচ্ছি, সেদিন হয়তো আমরা কেউ থাকবো না, থাকবে আমাদের আগামী প্রজন্ম– তাদের কাছে ইতিহাস থাকবে। সেই ইতিহাসই দেখিয়ে দেবে কারা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিপক্ষ ছিলো? কারা দেশে সম্মান নষ্ট করতে বিদেশীদের কাছে মিথ্যার ঝুলি খুলে বসেছিলো?

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সত্যি হলো– ইতিহাস প্রচন্ড নির্মম। সেখানে প্রত্যেকেই তার নিজের কৃতকর্মের কারনেই নিজ নিজ অবস্থানে থাকে। যারা পদ্মাসেতুর সূচনা থেকে বিরোধিতা করেছেন, ষড়যন্ত্র করেছেন- তারা তাদের প্রাপ্য ঘৃণা নিয়েই থাকবেন ইতিহাসে। অন্যদিকে এই সেতুটির নির্মাণের যে লড়াই- সেই লড়াইয়ের কারনেই অনন্য উচ্চতায় ইতিহাসে স্থায়ী স্থানে থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ হাসিনা।

লেখক: সমাজকর্মী

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন