বিজ্ঞাপন

‘অপরাধ করে পার পাবে না জনগণের মাঝে এ উপলব্ধি প্রতিষ্ঠা হয়েছে’

June 16, 2022 | 7:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য।এ লক্ষ্যে সরকার একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোন অপরাধীই অপরাধ করে পার পাবে না জনগণের মাঝে এ উপলব্ধি বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) জাতীয় সংসদে ঢাকা ৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে প্রশ্ন উত্তর টেবিলে উত্থপিত হয়।

আইনমন্ত্রী সংসদে জানান, স্পর্শকাতর মামলাসমূহের বিচার সম্পন্ন করে বিচার বিভাগ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে জনগণের আস্থা কুড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ৭৫ পরবর্তী সময়ে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যেন বিচারের সম্মুখীন হতে না হয়, সে জন্য খুনি মোশতাক ১৯৭৫ সনের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম জেনারেল জিয়াউর রহমানও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বহাল রাখে এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এরপর জেনারেল এরশাদ ও থাকাকালীন সময়েওবিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আত্মস্বীকৃত খুনীদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বহাল রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রচলিত আইনে এবং প্রচলিত আদালতেই হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া এবং আপীল শুনানী শেষে হত্যাকারীদের সাজা এরইমধ্যে কার্যকরও হয়েছে। তবে এখনও যে সব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এবং পাক হানাদারদের দোসর যুদ্ধপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ সব ঘৃণ্য যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের উদ্যোগে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের মত জঘন্য একটি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাজা কার্যকর করার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামরিকালে দেশের মানুষ যেন নুন্যতম বিচারিক সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে দেশের সকল আদালতে বিচারিক কাজ চলমান রাখতে ভর্র্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। গত ১১ মে ২০১০ প্রল ২০১১ তে ১০ আগস্ট ২০১১ তারি আদালতের মাধ্যমে মোট ৩,১৪,৪৮টি আমিনের ২,৫৮,১৪৬ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। ফলে করোনাকালে জেলখানায় বন্দী আসামীদের অতিরিক্ত চাপ কিছুটা এড়ানো গেছে।’

এ ছাড়া নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে শশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি বিচার কার্য পরিচালিত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে নারী ও সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে। ধর্ষণের দড় করে ইতোমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০ সংশোধন করা হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশের সকল নাগরিকের বিচার প্রাপ্তির সংবিধান স্বীকৃত যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তার নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ সরকারই ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০পাশ করে। যার ফলে দুস্থ অসহায়, সহায়-সম্বলহীন যারা বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ ছিল তারা বিনা খরচে সরকারি সহায়তায় বিচার পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশে নিরপেক্ষ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সংখ্যক বিচারকসহ সহায়ক জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। এ লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সহায়ক জনবলসহ ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ইব্যুনাল, ৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ৭টি মানবপাচার ট্রাইবুন্যাল, ভোলা জেলার চরফ্যাশনে ১টি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, সারাদেশে ৬২টি অতিরিক্ত জেলা জজ, ১১টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত, গাজীপুর ও রংপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১টি সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ২টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩০টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ২২টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সৃজন করা তাছাড়া, গাজীপুর, রংপুর ও বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালত, ১১১টি যুগ্ম জেলা জজ, ৩৪টি যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ও ১৪টি অর্থঋণ আদালত, ২১৪টি সহকারী জজ আদালত সৃজনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতাধীন সরকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম. আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বিচারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে মামলার সাক্ষী। সাক্ষীদের প্রদত্ত সাক্ষ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচারক রায় প্রদান করেন। আদালতে সাক্ষীরা হয়েছে। যেন ভোগান্তিহীনভাবে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারেন সে জন্য জেলাগুলোতে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা। এ ছাড়া, সাক্ষীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার আইন প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে দ্রুততম সময়ে সাক্ষীদের অবহিত করার জন্য মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে সাক্ষীদের প্রতি সমন জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ফৌজদারি মামলার সাক্ষীগণ আদালতে বিচারাধীন মেলার ধার্য তারিখ সম্পর্কে বিদ্যমান সমন জারি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এসএমএস-এর মাধ্যমে অবগত মলা নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। ফলে সহজে ও স্বল্প খরচে আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত হবে, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন