বিজ্ঞাপন

আড়াই দশকে রেকর্ড বৃষ্টি চেরাপুঞ্জিতে, ঢলে ডুবল সিলেট-সুনামগঞ্জ

June 17, 2022 | 2:43 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

উজানের ঢলে আচমকা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত সুনামগঞ্জ ও সিলেট। দুই জেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন হাঁটু থেকে গলা পানির নিচে। জানা যাচ্ছে, ভারতের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ দুই শহর চেরাপুঞ্জি আর মৌসিনরামে গত ক’দিন ধরেই মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই দেশের উজানের দুই জেলায় আচমকা এই দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। আর ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, এর মধ্যে চেরাপুঞ্জিতে গত ২৭ বছর আর মনিরামে গত ২৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ডও হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামের এমন রেকর্ড ছাড়ানো বৃষ্টির ঢলই বাংলাদেশে চলে এসেছে। আর সে কারণেই রাতারাতি ডুবে গেছে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও গলাপানি পেরিয়ে গেছে। একটু নিচু এলাকায় একতলা উচ্চতার ঘরগুলো পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে দুই জেলার আকস্মিক এই বন্যায় ডুবে যাওয়া এলাকাগুলোতে তৎপরতা শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৮১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি শহরে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ২৪ ঘণ্টায় এত বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এই শহরে নেই।

আরও পড়ুন- সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অফিসের তথ্য, ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস জেলার এই শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার। আর এর আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের ১৫ জুন এই শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৯৩০ মিলিমিটার। এরপর গত ২৭ বছরের মধ্যে গত মঙ্গল ও বুধবারের মধ্যেকার ওই ২৪ ঘণ্টাতেই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে।

উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের ডুবে যাওয়ার পেছনে কেবল চেরাপুঞ্জি নয়, এর পাশেরই আরেক শহর মৌসিনরাম শহরের রেকর্ড বৃষ্টিপাতও দায়ী। এই শহরে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭১০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। ১৯৯৬ সালের জুনের পর এটিই এই শহরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

এর আগে, ১৯৯৬ সালের ১০ জুন মৌসিনরাম শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৭১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার। দুই দিন আগে ৭ জুন বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৯৪৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার। ভারতীয় আবহাওয়া অফিস তথ্য সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই শহরের এটিই রেকর্ড বৃষ্টিপাতের তথ্য। এরপর গত ২৬ বছরেও আর এই শহরে এত বেশি বৃষ্টিপাত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- গলা পানিতে ডুবছে সুনামগঞ্জ, ভেসে যাচ্ছে পশুপাখি

চেরাপুঞ্জিতে অবশ্য জুন মাসের ২৪ ঘণ্টায় ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ঘটনা রয়েছে আরও আটটি। তবে ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের গুয়াহাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুনিত দাস জানাচ্ছে, বর্তমানে মৌসিনরাম ভারতের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিভেজা অঞ্চল। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে এই শহরের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বছরে ১১ হাজার ৮০২ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এর পরের স্থানেই অবশ্য রয়েছে চেরাপুঞ্জি। পার্থক্যও খুব বেশি নয়। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য বলছে, চেরাপুঞ্জিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার।

ভারতে এ বছরের মৌসুমি বায়ু এরই মধ্যে অবশ্য মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিল নাড়ু ও উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এরই মধ্যে বর্ষাকালীন ভারী বর্ষণ চলছে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, অরুণাচল ও মেঘালয়ে। এর মধ্যে ভারী বর্ষণ আগামী অন্তত পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে। বাকি এলাকাগুলোতেও আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন