বিজ্ঞাপন

সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়

June 18, 2022 | 1:51 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিলেট: সিলেটবাসীদের অভিজ্ঞতায় এরকম বন্যা আগে কখনও দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে- এই বন্যার ফলে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

সিলেট নগরীর বিশ্বরোডেও পানি। সোবাহানীঘাট-চালিবন্দর এ বিশ্বরোডে এর আগে পানি ওঠেনি। প্রশাসন বলছে সিলেটে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট-সুনামগঞ্জের গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন শনিবার সকাল দশটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। রিকশা ও বড় যান পানি ডিঙিয়ে চলছে। শুধু বিশ্বরোডে নয়, নগরীর সুবিদবাজার রোডসহ একাধিক মূল সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া নগরীর চারদিকে থৈ থৈ পানি। রাস্তা, দোকানপাট, বাসাবাড়ি, ঘরের মধ্যে পানি। কোথাও কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

সিলেট নগরীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপশহর এখন পুরো বিপর্যস্ত, এটি যেন আলাদা দ্বীপ। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবল বর্ষণ অব‍্যাহত থাকায় রাস্তায় কম মানুষ দেখা গেছে।

এদিকে চালিবন্দর, মিরাবাজার, আগপাড়া, শাহীঈদগাহ, টিবি গেট, কাজলশাহসহ ২০-৩০টি এলাকায় নতুন করে পানি প্রবেশে করেছ। সবমিলিয়ে শতাধিক মহল্লার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য নৌবাহিনীরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বানভাসীদের উদ্ধারকাজ আরও বেগবান হবে।

এরই মধ্যে বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে সেনাবাহিনী। দুই জেলার ৮ উপজেলায় সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন এবং ৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয় আসছেন সেনা সদস্যরা।

সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেটের ৩ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম চালাবে। এর মধ্যে সিলেট জেলার সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলা রয়েছে।

জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঁচটি কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা। স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।

বিজ্ঞাপন

সেনাবাহিনী আরও জানায়, সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের নৌকাগুলোও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নদনদী ও হাওরের পানি হু হু করে বাড়ছে। সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড় ফুট করে পানি বেড়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সময়ে সময়ে পানি বাড়ায় পুরো শহর প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এ কারণে পানি কমার সম্ভাবনা নেই। পানি আরও বাড়লে সিলেটে চরম বিপর্যয় দেখা দেবে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে জেনারেটরেরও তেলও ফুরিয়ে আসছে।

জেনারেটরের সাহায্যে এক্স-রে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হয় না বলে সেই সেবাগুলো রয়েছে বন্ধ।

এই অবস্থা চলতে থাকলে সেবা আরও ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন