বিজ্ঞাপন

বন্যা হলেও পদ্মা সেতু হবে আল্লাহর আশীর্বাদ: প্রধানমন্ত্রী

June 19, 2022 | 4:10 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পূর্বে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের ফলে বন্যা মোকাবিলা সহজ হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব ইনশাআল্লাহ। এই উদ্বোধনের ফলে মনে করি এটিও আল্লাহর একটি আশীর্বাদ হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সাফ চ্যাম্পিয়ন-২০২১ বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দলকে সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক চর্চায় ভালোভাবে সহযোগিতা করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটি সরকারের পক্ষ থেকে করতে পারি, বেসরকারি খাত থেকে করতে পারি। যত সহযোগিতা করব তত আমাদের খেলার উৎকর্ষতা বাড়বে। এখন ঘর সংসারের চিন্তা করব না খেলায় মন দেব বা আমি সংস্কৃতিতে মন দেব, এই দোটানায় যেন না পড়ে। যারা খেলবে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে তাদের জীবন জীবিকার সুযোগটাও আমাদের করে দিতে হবে।’

সরকারের পক্ষ থেকে তো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়াই উচিত। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ ধরনের সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালি ব্যবসা করবেন আর ইন্ড্রাস্টি করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটি তো হয় না। দেশের জন্য তো করতে হবে। সেটিই আমি চাই। আমার মনে হয়, এই মেসেজটা আমাদের সব ব্যবসায়ীকে দেওয়া উচিত।’

বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী ফাউন্ডেশন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো আমি আছি। কিন্তু চিরদিন তো থাকব না। তাই একটা স্থায়ী বন্দোবস্ত যেন হয় তার জন্যই বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি। এখানে সীড মানিও দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

আমাদের একটা আধুনিক খেলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমাদের দেশের মানুষ দরিদ্র থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা বাধা দিয়েছে। কিন্তু এই বাধা বাংলাদেশের জন্য কিছু না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে চলব।’

আগামী ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি পদ্মা সেতু এমন একটা সময়ে উদ্বোধন করতে যাচ্ছি যেখানে বন্যা যেমন একদিকে শুরু হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে এই বন্যা দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। আমি সবাইকে স্মরণ করাতে চাই, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়। ঠিক সেই বন্যার শুরুর আগেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। সেটি উদ্বোধন করেছিলাম বলেই তখন সুবিধাটা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন থেকে সব কাজগুলো করা যাচ্ছিল।’

বন্যায় যেহেতু আমাদের নদী অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে ওঠে, খরস্রোতা হয়ে ওঠে। যোগাযোগের সুবিধা থাকে না। কিন্তু সেই সময় আমাদের এই দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত ছিল। উত্তরাঞ্চল থেকে তখন আমরা সবসময় সহযোগিতা পেয়েছিলাম। সেই বন্যা আমরা খুব সফলভাবে মোকাবিলা করেছি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থা বিবিসি থেকে ঘোষণা দিয়েছিল, ইউএনডিপি বলেছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেছিল অনেকে বলেছিল এই বন্যায় দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি বলেছিলাম একটি মানুষকেও আল্লাহর রহমতে আমরা না খেয়ে মরতে দেব না, আমি দেইনি। ওই সেতুটা আমরা তখন উদ্বোধন করেছিলাম। বন্যা মোকাবিলায় অনেক সহযোগিতা করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

‘‘ঠিক আমি জানি না, আজকে আমার এই কথাটা মনে পড়ল, আমরা ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব ইনশাআল্লাহ। এই উদ্বোধনের ফলে আমি মনে করি, এটিও একটা আল্লাহর আশীর্বাদ হবে।’

‘কারণ আমরা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখতে পারব। বন্যা মোকাবিলায় মানুষের পাশে থাকা, পণ্য পরিবহন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদেরকে সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে।’

বন্যায় সময় নদীতে চলাই কঠিন হয়ে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত খরস্রোতা পদ্মা নদী এটা পাড়ি দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। মানুষগুলো আটকা পড়ে এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় আমি টুঙ্গিপাড়া ছিলাম আমি ঢাকায় আসতে পারিনি, আটকা পড়ে গিয়েছিলাম। তখন যদি ওই রকম পদ্মা সেতু তাহলে চলে আসতে পারতাম। কাজেই সেদিক দিয়ে এই সেতু যখন আমরা উদ্বোধন করার পরে তখন আমাদের এই সুযোগটা হবে, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে অন্তত আমাদের রিলিফ দেওয়া, মানুষকে সাহায্য করা, ঔষধ-টৌষুধসবকিছু দেওয়াসহ সব ধরনের কাজ আমরা করতে পারব।’

আমার কাছে কেন যেন মন হল যে সময়টা বোধহয় ওইরকমই আসে আমাদের জীবনে বলেও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

পদ্মা সেতু এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচাইতে খরস্রোতা নদী আমাজন এবং পদ্মা। এই পদ্মায় আমরা ব্রিজ সফলভাবে করতে পেরেছি। তাছাড়া অনেক বাধাও ছিল জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেটা মোকাবিলা করেই কিন্তু অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছি যে আমরা নিজের টাকায় এই সেতু করব।’

‘অর্থাৎ বাংলাদেশ পারে। কারও কাছে হাত পেতে না, কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে না, আমরা মাথাউঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলব। কারণ আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসাবেই মাথা উঁচু করে চলব।’

খেলোয়াড়দের সবাইকে এই কথা মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলার মাঠে সববময় চিন্তা রাখতে হবে, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। হারজিত আছে এটা ঠিক। কিন্তু মাথায় যেন থাকে আমাকে জিততেই হবে। প্লেয়ারদের মাথায় এই স্পোর্টসম্যান স্পিরিট থাকতে হবে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন