বিজ্ঞাপন

সংসদে আলোচনা— পদ্মা সেতুর কারণে সারাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে

June 20, 2022 | 10:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ঘিরে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতুর কারণে সারাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে। তবে এখনো বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তারা এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সরকারি দলের কাজী কেরামত আলী, বেগম মুনিরা সুলতানা, মুহিবুর রহমান মানিক, জিল্লুল হাকিম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেনজির আহমেদ, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বেগম হাবিবা রহমান খান, হোসনে আরা, রানা মোহাম্মদ সোহেল, সালমা চৌধুরী ও আদিবা আনজুম মিতা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এ সময়ে সারাদেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র ও বাধা মোকাবিলা করেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে সারাদেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়ে সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করেছেন, যা বিশ্বের কাছে প্রশংসা পাচ্ছে।

সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসা পাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি সেই উন্নয়ন দেখতে পায় না। জনবিচ্ছিন্ন এই দলটি এখনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় লিপ্ত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা বুকে ধারণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এর মাধ্যমে একদিকে শেখ হাসিনা একজন আত্মবিশ্বাাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন, অন্যদিকে বিশ্ববাসীও বাংলাদেশের সক্ষমতা জানতে পেরেছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি অনেকে বেড়েছে।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে প্রস্তাবিত বাজেটের সুযোগটি সঠিক উল্লেখ করে বিকল্পধারার এই এমপি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ নানা কলা-কৌশলে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত এনে বিনিয়োগ করে। আমাদেরও এসব টাকা ফেরত এনে পুঁজিবাজার কিংবা শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ কর যেতে পারে।

সিলেট-সুনামগঞ্জের চলমান বন্যাকে স্মরণকালের বড় বন্যা বলে উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় এমপি আজ বন্যা নিয়ে মানবতা দেখানোর চেষ্টা করলেও তাদের দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯৫ ও ২০০৪ সালের বন্যায় বন্যাকবলিত মানুষর পাশে দাঁড়ায়নি। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে বন্যায় ৬১ কেজি ওজনের কেক কাটতে দেখেছি।

বিজ্ঞাপন

১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা— এই তথ্যটি ঠিক নয় উল্লেখ করে মুহিবুর রহমান বলেন, বড় বন্যা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের ইতিহাসে একদিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। ১২২ বছরের ইতিহাসে এত বড় বন্যা হয়নি, সেটি বলব না। তবে ১৯৮৮, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৭ সালের বন্যা আমি দেখেছি। আমি মনে করি, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বন্যা। সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বন্যা মোকাবিলার জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে তৈরি করতে হবে। সুরমা কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর উৎসস্থল খননের প্রয়োজন। হাওর জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলো থেকে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো করা সম্ভব হলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারব।

বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। তাদের জন্য কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে? এ নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। তাই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি পদ্মা সেতুসহ দেশে একের পর এক বৃহত্তর প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এটি শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সারাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। উপকূলের উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সরকারি দলের মুনিরা সুলতানা বলেন, সরকারের উন্নয়ন দেখলেই বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে যায়। এরা দেশ ও দেশের মানুষের শত্রু। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে এরা নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত। এরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আবার যদি বিএনপি নেতারা এ ধরনের হুমকি দেয়, পুরুষদের লাগবে না, আমরা নারীরাই রাজপথে তাদের মোকাবিলা করে দাঁতভাঙা জবাব দেবো।

কাজী কেরামত আলী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির আমলে দু’টি সরকার ছিল— একটি হওয়া ভবনের, অন্যটি খালেদা জিয়ার সরকার। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আজ তারাই বড় বড় কথা বলেন।

তিনি বলেন, শত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশাবাদী, এরপর দৌলদিয়া-পাটুরিয়াতেও তিনি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন।

তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সোনার সেতু। সক্ষমতার প্রতীক। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। দেশে কিছু করতে না পারে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। মিথ্যাচার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

আবিদা আনজুম মিতা বিএনপিকে খুনির দল উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলেই ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবনে বসে পরিকল্পনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। এখন তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেদিন আর তাদের কোনোদিন আসবে না, বিএনপির স্বপ্নও কোনোদিন পূরণ হবে না।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন