বিজ্ঞাপন

‘জনগণের ভোট কেড়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, থাকবও না’

June 22, 2022 | 4:57 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জানিয়ে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি জনগণের ভোট কেড়ে ক্ষমতায় থাকতে চান না, থাকবেনও না।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, সেটা থাকবও না। এটা সামরিক শাসকরা (মিলিটারি ডিটেকটর) করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি। আমিই কথা বলেছি। জেল-জুলুম, বোমা-গ্রেনেড-গুলির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু গণতন্ত্রটা (চর্চা) করতে পেরেছি বলেই এর ধারাবাহিকতায় আজ দেশের এই উন্নতি।

বুধবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শাপলা হলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশে প্রাচীন দলের মধ্যে একটি দল। দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একেবারে গণমানুষের মধ্য থেকে। ওই সময় পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আমাদের প্রতিপক্ষ যে কয়েকটি দল আছে, তাদের জন্মস্থানটা কোথায়?

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এসময় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি ও আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে জাতীয় পার্টির গড়ে ওঠার ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে দলগুলো তৃণমূল থেকে উঠে আসেনি, সেই দলগুলোর কাছে আপনারা কী আশা করেন? তারপর আবার দলের নেতৃত্বটা কার হাতে? কে নেতা? এতিমের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি, আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন পলাতক আসামি (ফিউজিটিভ)। আরেকজনকে অবশ্য আমি নির্বাহী ক্ষমতায় সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগটা দিয়েছি বয়সের কথা বিবেচনা করে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নে নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে এলে এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি একেকটি আসনে কয়জনকে মনোনয়ন (নমিনেশন) দিয়েছিল? এক সিটে সকালে একজনকে (মনোনয়ন) দেয়, দুপুরে সেটা পরিবর্তন হয়ে আরেকজন হয়। তারপর তৃতীয় দফায় আরেক জনের নাম দেয়। যে যত বেশি টাকা দিচ্ছে, তাকে নমিনেশন দিয়ে দিচ্ছে। আবার ঢাকা থেকে একজন প্রার্থী দিচ্ছে তো লন্ডন থেকে প্রার্থী দিচ্ছে আরেকজন। দিনে তিন বার নমিনেশন বদলান। তারপর দেখা গেল, মাঝখানে নির্বাচন ছেড়ে চলে গেল। এটা কি অস্বীকার করতে পারবে বিএনপি?

তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে অংশগ্রহণমূলক হয়নি— সে প্রশ্নই তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যখন আপনি নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে মধ্য পথে চলে যান, তখন তো মাঠ ফাঁকা। তখন পাবলিকের যা খুশি তাই করতে পারে। সে দোষটা কাকে দেবেন? এটা (দোষ) তো আওয়ামী লীগকে দিতে পারেন না! অথচ আমাদের এখানে অনেকেই আছে বা বিদেশেও যারা আছে, তাদের কাছে অপপ্রচার করা হয় যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি।

এসময় বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরও সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। সমালোচনা করেন বাম দলগুলোরও। বলেন, বাকি ছিল আমাদের বাম দলগুলো। তারা তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হতে হতে… দাঁড়ি বসবে নাকি কমা বসবে নাকি সেমিকোলন বসবে— এই করতে করতেও তারা দল ভাঙে। ভাঙতে ভাঙতে তাদের অবস্থাও (শোচনীয়)… তারা এখন বাম হয়ে কখনো ডাইনে কাইত হয়, কখনো বামে কাইত হয়। তাহলে আছে কে, সেটা বলেন না! একটা ভালো শক্তিশালী দল করে দেন, আমরা মাঠে দেখব। কমপিটিশনে জনগণ যাকে চায়, বেছে নেবে।

বিজ্ঞাপন

নিজের ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের সেবা করার জন্য ক্ষমতায় যেতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও জাতীয় পার্টি ও জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সেবার সরকার গঠন করতে রাজি হননি তিনি। ২০০১ সালে ও দেশবিরোধী কাজের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এসময় সুনির্দিষ্টভাবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর গ্যাস উত্তোলন করে ভারতের কাছে বিক্রির প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ ও ৫০ বছরের গ্যাসের মজুত নিশ্চিত না করে গ্যাস বিক্রিতে রাজি হননি বলেই ওই সময় ক্ষমতায় যেতে পারেননি তিনি।

ওয়ান-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেফতারের পর তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন না করলে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধামন্ত্রীর পাশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন