বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে গরুর চেয়ে ছাগল-ভেড়া বেশি

July 2, 2022 | 10:54 am

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে গবাদি পশু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও পর্যাপ্ত পশু দেশের বিভিন্ন স্থানের বিক্রির প্রস্তুতি রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, চাহিদার চেয়েও ১০ হাজার পশু বেশি রয়েছে। বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে ছাগল ও ভেড়া।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের আট বিভাগের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে রাজশাহীতে। এই বিভাগে ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬৩৯টি কোরবানিযোগ্য ছাগল আছে। ছাগলের সঙ্গে ভেড়ার সংখ্যাও বেশি রাজশাহী বিভাগে। বিভাগের আট জেলায় আছে চার লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭টি ভেড়া। এছাড়া ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯টি গরু ও ২১ হাজার ৫২১টি মহিষ আছে রাজশাহীতে। রাজশাহী বিভাগের এক লাখ ৩০ হাজার ২৬৫ জন খামারি এসব পশু লালন-পালন করছেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য জানাচ্ছে, ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারির কাছে আছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫টি ভেড়া ও তিন হাজার ২১১টি মহিষ আছে। মোট কোরবানির পশু আছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৮৫২টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে রাজশাহীর ৯ উপজেলায়।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব মতে, গত বছর রাজশাহীতে কোরবানির জন্য তিন লাখ ৮২ হাজার পশু পালন করা হয়েছিল। আর কোরবানি হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৯ হাজার পশু।

বিজ্ঞাপন

হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের প্রায় ৭৩ হাজার কোরবানির পশু অবিক্রিত থেকে গেছে। ইদে রাজশাহীতে কোরবানির জন্য গরু পালন হয়েছিল এক লাখ ৬ হাজার ৬৬৬টি। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৬২ হাজার ৮৫৪টি। বিক্রি হয়নি ৪৩ হাজার ৮১২টি গরু। আর দুই হাজার ৯৫৬টি মহিষের মধ্যে মাত্র ৩১৫টি মহিষ বিক্রি হয়েছে।

তবে গত ইদে ছাগল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হয়। ওই বছর রাজশাহীতে ছাগল প্রস্তুত ছিল প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে দুই লাখ ২৬ হাজার। ভেড়া পালন হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কোরবানি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩ টি।

আর গত বছরের অবিক্রিত পশুসহ সব মিলিয়ে এবার রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার পশু বেশি রয়েছে। ইদের কয়েকদিন আগে রাজশাহীর পশুহাটগুলো বেচাকেনায় জমে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার করোনা না থাকার কারণে হাট জমবে। ভালো দামও পাবেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এমনই আশা করছে।

বিজ্ঞাপন

তবে সাধারণ খামারিরা পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, চড়া দামে খাবার কিনে পশুকে খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অবস্থাও এখন ভালো নেই। গবাদি পশুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে খামারিদের।

রাজশাহী নগরীর সপুরা আবাসিক এলাকার সপুরা অ্যাগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী সুমন ইসলাম বলেন, ‘খামারে প্রায় দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। খামারে রয়েছে প্রায় ১১০ পশু। এর মধ্যে গরু ৮৫টি ও মহিষ রয়েছে ২৫টি। এই খামারে গরু ও মহিষ লালন-পালন করার জন্য ছয়জন আছেন। গত বছর প্রতিমাসে তাদের বেতনসহ পশু পালনে ব্যয় হয় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। কিন্তু এবার পশুখাদ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এর আগের দুই বছর লোকসান হয়েছে করোনার কারণে। আর এবার লোকসানের আশঙ্কা করছি, পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে।’

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর হাটে তেমন কেনাবেচা হয়নি। এবার মহামারি নেই তাই তারা আশা করছেন শুরু থেকেই এবার কোরবানির পশুর হাট জমে উঠবে। তারাও ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন। রোববার থেকে প্রতিদিন হাট বসবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, ‘এবার করোনা নেই। আবার গবাদি পশু লালন-পালনে খরচ বেড়েছে। তাই এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে হাটে দাম বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে কত গবাদিপশু আছে তার একটা প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী জেলায় পশুর কোনো সঙ্কট নেই। রাজশাহীর পশু দিয়ে এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতেও পাঠানো যাবে।’

সারাবাংলা/একেএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন