বিজ্ঞাপন

বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৫%

July 3, 2022 | 8:15 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রফতানি আয় ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় কমেছে ১৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (১ ডলার ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। সে হিসাবে এই অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কম এসেছে ৩০০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা ১৫ শতাংশ কম।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে হঠাৎ যে উল্লম্ফন, তার ভিন্ন প্রেক্ষাপট ছিল। অনেকেই তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় করোনা মহামারির কারণে পুরো বিশ্ব কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোও বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা সব টাকা পাঠিয়েছিলেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সে কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছিল।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজারে) ডলারের দাম বেশি থাকায় এখন আগের মতোই অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তাই বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স কম এসেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রেমিট্যান্সে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছিল, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু পুরো অর্থবছরের প্রবাসী আয় কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে রিজার্ভের পরিমাণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ধারা নিম্নমুখী হয়ে যায়।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স

২০২১ সালে প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। পরের মাস আগস্ট তা নেমে আসে ১৮১ কোটি ডলারে। পরের তিন মাসেও রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ডলার ও নভেম্বরে ১৫৩ কোটি ডলার।

এর পরের দুই মাসে ফের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পিরে আসে রেমিট্যান্স প্রবাহ। ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ডলার ও জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরে অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ১৪৯ কোটি ডলারে, যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বিজ্ঞাপন

এরপর মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার ও এপ্রিলে ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এর মধ্যে এপ্রিলে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ এই অর্থবছরের মধ্যে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। এরপর মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ও সদ্য বিদায়ী জুন মাসে ১৮৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ ডলার রেমিট্যান্স। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স

বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২ হাজার ২০৭ ডলার বা ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন