‘অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোট প্রত্যাশা কূটনীতিকদের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোট হলে অন্যদের পাশাপাশি কূটনীতিকরাও খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

রোববার (৩ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলোপমেন্ট’র (ওইএসডি) সদস্য কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি এসব কথা বলেন। দেড়ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সিইসি ছাড়াও কমিশনার আহসান হাবিব, মো. আলমগীর ও রাশেদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ‘উনারা এসেছেন এটা একটা ট্রেডিশন। আগেও এসেছেন, তারই ধাবাবাহিকতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন-কানুন ও আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের কার্যক্রমগুলো জানিয়েছি।’

তিনি বলেন ‘উনারা সাধারণত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। ইলেকশনটা যদি ইনক্লুসিভ, একসেপ্টবল, ফ্রি এবং ফেয়ার হয় তাহলে উনারাও খুশি হবেন। এছাড়া পুরো দেশবাসী খুশি হবেন- এই আশাবাদ উনারা ব্যক্ত করেছেন।’

আপনারা কী বলেছেন?- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন হিসেবে আমাদের যা যা করণীয় আমরা করব। উনারা প্লিজড। বলেছি ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজন হয়, আসবেন।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এ বিষয়ে উনারা তেমন কিছু বলেনি। উনারাও খুব ভালো করেই জানেন, এখনও কিছু কিছু দল ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। উনারাও বিশ্বাস করেন, আমরাও চেষ্টা করে যাব, যেন ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।’

নির্বাচন কমিশন কূটনীতিকদের কাছে কোনো সহায়তা চেয়েছে কি না?- এমন প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা চট করেই সহযোগিতা চাই না। ওরা সহযোগিতা করার কথা বলেছে। আমরা নিজেরা কিছু বলিনি। আমরা বলেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখব। কোনো ট্যাকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা উনাদের জানাব।’

বিদেশিরা কী ধরনের সযোগিতা করবে? এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা বলেছি সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখব। আমরা এখনো সহযোগিতা চাইনি।’

বৈঠকে কূটনীতিকরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কথা বলেছেন বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের এদিক থেকে কোনো বাধা নেই। তবে এ বিষয়ে ডিপ্লোমেটিকলি আলোচনা করে দেখতে পারেন। ফরেন ওবজারভারদের বিষয়ে আপনারা ফরেন মিনিস্ট্রিতে একটু কথা বলে দেখতে পারেন।’

কূটনীতিকদের পক্ষে ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ভোট নিশ্চিত করতে তারা সবধরনের সহযোগিতা দেবেন। নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, গণতন্ত্রকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে সহায়ক অবস্থা তৈরি করতে হবে। সকল অংশীজনের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমাদের দেশগুলো নির্বাচন কমিশনকে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও শানিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায় ওইসিডি সদস্য দেশগুলো।’

উল্লেখ্য, ওএসডি মূলত আন্তঃসরকারি সংস্থা। বিশ্বের ৩৮টি দেশ এই সংস্থার সদস্য হলেও সভায় ১৫টি দেশের প্রতিনিধিদের আসার কথা ছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুর আসেননি। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন, ফ্রান্সের সহকারী রাষ্ট্রদূত গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আছিম ট্রস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকোনুনজিয়াটা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি গিয়ার্ড ভ্যান লিউয়েন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি আসিস বেনিটেজ সালাস, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তোরান ও জাপানের হেড অব মিশন ইয়ামায়া হিরোয়ুকি অংশ নেন।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম