বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে শেষদিনে বিক্রি প্রচুর, গরুর দামও বেশি

July 9, 2022 | 8:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোরবানির ইদের আগের দিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতার সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে গরুর বাজার। বন্দর নগরীর বাজারে এবার গরুও এসেছে অনেক। গত দুই বছরের চেয়ে এবার বিক্রিও প্রচুর হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা জানিয়েছেন, গরু বেশি এলেও এবার দাম বেশি। লাখ টাকার নিচে গরু তেমন মেলেনি বাজারগুলোতে। এজন্য অনেকেই গ্রামগঞ্জের গৃহস্থ এবং প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন গরু।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজারগুলো ক্রেতার সমাগম শুরু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই অবশ্য ক্রেতার আনাগোণা বাড়তে থাকে। শুক্রবার দিনভর এবং গভীর রাত পর্যন্তও বাজারগুলো ক্রেতার পদচারণা, বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর ছিল। শনিবার দুপুরের পর থেকে বাজারগুলোতে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়। এবার বাজারে বড় গরুর চাহিদা কমেছে। ক্রেতাদের ঝোঁক ছোট ও মাঝারি গরুর দিকে।

গত ১ জুলাই থেকে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় গরুর বাজারে বিক্রি শুরু হয়। খামারে অবশ্য এর আগ থেকেই গরু বেচাকেনা শুরু হয়। চট্টগ্রাম নগরীতে মোট দশটি স্থানে কোরবানি পশুর বাজার বসেছে। এগুলো হচ্ছে- বিবিরহাট, সাগরিকা, কর্ণফুলী, পোস্তার পাড় ছাগলের বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন মাঠ, পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণ পাশ, ফকিরনীর হাট, মইজ্জ্যারটেক, কলেজ বাজার, ফাজিল খাঁর হাট এবং ইপিজেড খেজুরতলা বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে বরাবরের মতো বিবিরহাট, সাগরিকা ও কর্ণফুলী বাজারে সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু ও ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটেছে।

শুক্রবার রাতে ২০টি গরু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সাগরিকা বাজারে আসেন বেপারি জায়েদ আলী। এক রাতের মধ্যেই ১৪টি গরু তিনি বিক্রি করতে সক্ষম হন। তার সবগুলো গরুই মাঝারি আকারের।

বিজ্ঞাপন

শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, জায়েদ আলীর বাকি ৬টি গরু নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই। চলছে সমানতালে দর কষাকষি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার কাস্টমার বেশি। এক রাতে ১৪টা গরু বিক্রি করে ফেলতে পারব ভাবিনি। দামও ভালো পেয়েছি।’

কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু নিয়ে সাগরিকা বাজারে আসা মন্টু মন্ডলের কাছে শনিবার বিকেলে বিক্রির জন্য আছে আর মাত্র একটি গরু। তিনি সেটির দাম হেঁকেছেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। মন্টু মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই একটা গরু বিক্রি হলে বাড়ি চলে যাব। এবার গরুর দাম ভালো পেয়েছি। এক লাখ ৬০ হাজার, এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করেছি। লাখের নিচে গরু বিক্রি করিনি।’

ফটিকছড়ি থেকে ২৮টি গরু নিয়ে আসা মোহাম্মদ ভুট্টুর কাছে শনিবার বিকেলে বিক্রির বাকি ছিল মাত্র দুইটি গরু। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার দুপুরের মধ্যে তিনি ২৬টি গরুই বিক্রি করতে সক্ষম হন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বিক্রি ভালো, দামও ভালো পেয়েছি। গরু প্রচুর আছে। কাস্টমারও অনেক। তবে গরু কম পড়বে না।’

বিজ্ঞাপন

নিজের ঘরে লালনপালন করা ৪টি গরু নিয়ে বাঁশখালী থেকে এসেছেন রবিউল হোসেন। শনিবার সকালে তিনি সাগরিকা বাজারে আসেন। প্রতিটির দাম হেঁকেছেন তিন লাখ টাকা। তবে বড় আকারের এসব গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম দেখা গেছে।

নগরীর পাহাড়তলীর বাসিন্দা জাহেদ হোসেন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩১০টি গরু কিনে সাগরিকা বাজারে এসেছেন বিক্রি করতে। গত এক সপ্তাহে তিনি ২৭০টি গরুই বিক্রি করতে পেরেছেন। বাজারে গরুর দাম এবার বেশি- ক্রেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাহেদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই বছর গরুর দাম সস্তা গেছে। এবার গরুর খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে, কস্টিং বেড়েছে। সুতরাং মানুষ যদি মনে করে গত দুই বছরের মতো সস্তায় গরু পাবে, তাহলে সেটা ভুল হবে। দাম কিছুটা বাড়তি হওয়ার পরও এবার বিক্রি প্রচুর।’

বিবিরহাট বাজারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া থেকে ১০টি গরু নিয়ে আসা মাসুদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে লাখ টাকার নিচে গরু আসলেই তেমন নেই। মাঝারি গরুর দাম বরং আরও বেশি। বড় গরুর কাস্টমার নাই। এবার দাম বেড়েছে কারণ ভূষি, ছোলা, কুড়ার দাম বেড়েছে। আমার গরুগুলো একেবারে ঘরে পালা বাচ্চা গরু। এগুলো লালনপালন করতে আমার যে টাকা খরচ হয়েছে, আমি তো অবশ্যই লাভ করে বিক্রি করব। আমার আটটা গরু বিক্রি হয়ে গেছে, দুইটি আছে। সেগুলো বিক্রি হয়ে গেলে চলে যাব।’

বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়া থেকে ২৫টি গরু নিয়ে সাগরিকা বাজারে আসা ডালিম মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার গরুর দাম বেশি। ২০ হাজার টাকার গরু এবার ৪০ হাজার টাকা। তারপরও গরু বিক্রি এবার ভালো।’

হালিশহরের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা পারভেজ আলম সাগরিকা বাজার থেকে শুক্রবার একটি গরু কেনেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়। শনিবার দুপুরে তিনি আরেকটি গরু কেনেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরুর অভাব নাই। কিন্তু বেপারিরা দাম ধরে রেখেছেন। লাখ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না। ছোট ছোট গরু, দেড় লাখ টাকা দাম চাচ্ছে। এজন্য এবার অনেকে বাজারের বাইরে লোকাল মার্কেট থেকে গরু কিনে ফেলেছেন।’

প্রান্তিক চাষী থেকে গরু কিনে কিছুটা কম দামে পেয়েছেন বলে জানালেন সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতর গ্রামের বাসিন্দা এস এম আবু ইউসুফ। তিনি ৬৭ হাজার টাকায় পেয়েছেন মাঝারি আকারের একটি গরু। ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ’৬৭ হাজার টাকায় যে গরু কিনতে পেরেছি, সেটা শহরের বাজারে হলে লাখ টাকার ওপরে হত। ঘরে পালা গরু, সেজন্য অল্প লাভে মালিক বিক্রি করে দিয়েছেন।’

প্রতিবছর চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহ্যবাহী বাজার থেকে গরু কেনেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন। নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা মোমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বাজারে যাইনি। বাজারে মানুষের ভিড়। বোয়ালখালীর চরণদ্বীপে গিয়ে ঘরে লালনপালন করা দুইটি গরু কিনে এনেছি। দামেও সস্তা পেয়েছি।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এবার কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট আট লাখ ২১ হাজার পশু। এর মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩, মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৮৯ হাজার ৬২ এবং অন্যান্য ৯৯টি পশু রয়েছে। ২০২১ সালে সাত লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু কোরবানি হয়েছিল।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন