বিজ্ঞাপন

পথ চলতে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বেছে নেবে জাপা

July 11, 2022 | 8:13 am

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি হিসাব নিকাশ করছে। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটে যাবে নাকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকবে সে বিষয় নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগামী নির্বাচন ইভিএমে নেওয়া হলে এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না? মোট কথা পথ চলতে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বেছে নেবে দলটি।

বিজ্ঞাপন

আগামী নির্বাচন ইস্যুতে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পক্ষে নাকি বিপক্ষে থাকবে সে ব্যাপারেও অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে দলটি। তবে আওয়ামী লীগ বিপজ্জনক কিছু করলে তার পক্ষে জাপা থাকবে না এরকম সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে।

জাপার সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে- দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এরইমধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ইভিএমএ ভোটগ্রহণ হলে সে নির্বাচনে জাপা অংশ নেবে না। তার মতে- ইভিএমের ভেতরে শয়তান আছে।

অপরদিকে নির্বাচনের আগে দলটি ভাঙনের মুখে পড়লে তখন কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয় তিনি পরবর্তী সময়ে জানাবেন। তবে দলটিকে ভাঙনের মুখ থেকে রক্ষার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এখন থেকেই সজাগ দৃষ্টিতে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়েছেন, একটি বিশেষ মহল জাতীয় পার্টিকে ভাঙনের মুখে ফেলতে বেগম রওশন এরশাদকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে আসে। এ সময় বেগম রওশন এরশাদ হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। রওশন এরশাদসহ ডাক্তার ও নার্সদের রাজধানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলেও রাখা হয়।

এই অবস্থায় দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করার উদ্যোগ নেন রওশন এরশাদ। তার পিএস ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহ এ বিষয়ে সবাইকে ফোন করেন।

বিষয়টি জি এম এরশাদ ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু জানতে পেরে বেগম রওশন এরশাদকে ফোন করেন। রওশন এরশাদকে বলা হয়— আপনি দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন না। প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের কোনো নেতাদের ডাকার এখতিয়ার গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার নেই।

বিজ্ঞাপন

এ সময় বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কথার বাহাস চলে।

জি এম কাদের ওই বৈঠকে জানিয়েছেন, এ পর্যায়ে বেগম রওশন এরশাদের মিশন সফল হয়নি। সে জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর নির্বাচন জোটভিত্তিক নাকি একক হবে তা পথচলতে বেছে নিতে হবে।

দলের অপর একটি সূত্র জানায়- বেগম রওশন এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও অপর নেতা মুজিবুল হক চুন্নুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি তার নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব আগে ফয়সালা করতে হবে। স্পষ্টভাবে নেতাকর্মীদেরকে বলে দিয়েছেন জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পরিচালিত হলে এ দল মুসলিম লীগে পরিণত হবে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে তৃণমুল নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে দলটি আবারও সাংগঠনিক সংকটে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিলেও সেই উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। জাপার ৭৭টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ৩৯টিতে চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। আর সিলেট বিভাগীয় কমিটি ও জেলা কমিটি সম্প্রতি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাকি ৩৬টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও নেই সক্রিয়ভাবে দলটির কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি। এমন অভিযোগ করেন ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোনা, রাজবাড়ীসহ অনেক জেলার জাপা নেতারা।

দলকে শক্তিশালী করতে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত দুই বছর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিলেও বাস্তবায়ন হয়নি সিংহভাগই।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অতীতের সৃষ্ট মতবিরোধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসলেও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না অনেক হেভিওয়েট নেতা। এ ছাড়া দলের কিছু এমপি আছেন যারা পার্টি অফিসে যান না। অথচ তারা তাদের স্ত্রী ও মেয়েদের এমপি করার জন্য অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে করে দলটির ত্যাগী নেতারা উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছে। সূত্র মতে দলের ৯৫ ভাগ যোগ্য নেতা-কর্মী দল ছেড়ে গেছেন। বাকি ৬ ভাগ যারা আছেন তারাও নিষ্ক্রিয়।

এ সব বিষয় নিয়ে দলটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্ট করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে আমরা ইসিতে আপত্তি জানিয়ে এসেছি। আমরা ইভিএমে ভোটগ্রহণ চাই না।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পর্কে তিনি কৌশলে বলেন, ‘কেয়ারটেকার কনসেপ্ট আমরা বিশ্বাস করি না। দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। এর প্রমাণও আছে। তারপরও আগামী নির্বাচনে সামনে রেখে পথ চলতে চলতে জাতীয় পার্টি সঠিক সিদ্ধান্ত বেছে নেবে।’

বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জাপা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ আমাদের মুরব্বি। তিনি দল ভাঙার পদক্ষেপ নেননি। কিছু দলছুট ও বহিষ্কৃত নেতাদের উসকানি রয়েছে কিছু একটা করার। তাদের কথায় দল ভাঙার সুযোগ নেই।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন