বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা শিশুদের রং তুলিতে দুঃসহ স্মৃতি, ফুল-পতাকা

July 13, 2022 | 8:43 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত মো. আনসারের মেয়ে আজিদা (১১) চিত্রাঙ্কান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ফুল ও বাংলাদেশের পতাকা আঁকে। এসব ছবির অর্থ জানাতে গিয়ে আজিদা জানায়, মিয়ানমারে নির্যাতন আর অত্যাচারের শিকার হয়েছিল তারা। সেই ভয়ংকর স্মৃতি এখনো তাড়া করে তাকে। এসব ভুলে যেতে চায়। তাই যুদ্ধের পরিবর্তে ফুলের ছবি আঁকছে। আর বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে এই দেশের পতাকার ছবি এঁকেছে।

বিজ্ঞাপন

বালুখালী ক্যাম্পের মো. সলিমের ছেলে মো. রিয়াদ (১৭) আঁকে যুদ্ধের ছবি। ছবিতে দেখা যায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে একটি গ্রামে। মিয়ানমারের সেনারা কুপিয়ে হত্যা করছে রোহিঙ্গাদের। ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে নাফ নদী পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ছবিটির একাংশে ইংরেজীতে লিখা আছে ‘বাংলাদেশ গভমেন্ট সেভ দ্য রোহিঙ্গা’, অন্য অংশে ‘মিয়ানমার গভমেন্ট কিল দ্য রোহিঙ্গা’ লেখা।

ছবির অর্থ প্রকাশ করতে গিয়ে রিয়াদ বলে, ‘মিয়ানমারে তাদের সঙ্গে হওয়া অত্যাচারগুলো নিজ চোখে দেখা। অনেক আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব মনে পড়লে এখনো ভয় লাগে।’

আরেক প্রতিযোগী মো. সলিমের মেয়ে কিশোরী রাজিকা (১২) বাগান, খেলার মাঠ ও ফুলের ছবি আঁকে। সে জানায়, মিয়ানমারে তারা খুব কষ্টে ছিল। তারা স্বাধীনতা পায়নি। তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আর এই দেশে এসে তারা মাঠে খেলতে পারছে। বাগান করতে পারছে। তাই ফুল আঁকছে।

বিজ্ঞাপন
ছবি আঁকছে রোহিঙ্গা শিশুরা, ছবি: সারাবাংলা

ছবি আঁকছে রোহিঙ্গা শিশুরা, ছবি: সারাবাংলা

ইদ উদযাপন উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিশুদের চিত্রাঙ্কান প্রতিযোগিতা নিয়ে ব্যতিক্রম এক আয়োজন করেছে ক্যাম্পে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। যেখানে এই শিশুরা যুদ্ধের ছবির পাশাপাশি আঁকছে ফুলের ছবি। ছবিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে বাংলাদেশের প্রতি।

তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়নে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুরা বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বাস করছে। দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে কাঁটাতারের সীমানায় অবরুদ্ধ জীবন তাদের। এই দেশ তাদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযেগিতা করছে। কিন্তু স্বদেশে যাপিত জীবন ও ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতি মুছে যায়নি। চিত্রাঙ্কান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এসব রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর সাদা কাগজে রঙ পেন্সিলের শৈলীতে সেই সব স্মৃতি তুলে ধরেছে। এসব শিশুমন থেকে বাদ যায়নি স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা। অনেকে যুদ্ধের স্মৃতি ভুলে গিয়ে আঁকছে ফুলের ছবি।

প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে থাকা তরুণ রোহিঙ্গা চিত্রশিল্পী এনায়েত খান বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের মনে সুদূর প্রসারি প্রভাব ফেলবে। তারা মন্দ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

আয়োজক উখিয়া ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানান, মানবিক পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই প্রতিযোগিতা। এতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা নিজেদের অনুভূতি চিত্রে প্রকাশ করার পাশাপাশি ইচ্ছা ও আকাঙ্খা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী রোহিঙ্গা শিশুদের পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। আইনশৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশের এই মহৎ কাজকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন