বিজ্ঞাপন

রেললাইনের পাশের পতিত জমিতে আনারস চাষে বাড়তি আয়

July 23, 2022 | 8:26 am

আলতাফুর রহমান আলতাফ, ডি‌স্ট্রিক ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট

লালমনিরহাট: আদিতমারীতে রেল লাইনের দুই ধারে পতিত জমিতে আনারকলি জাতের আনারস চাষ করে বাড়তি আয় করছেন বৃদ্ধ কৃষক আব্দুল কাদের (৭০)। আব্দুল কাদের উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের লালব্রিজ এলাকার মুসরীত দোলজোড় গ্রামের মৃত আবেদ আলী ছেলে।

বিজ্ঞাপন

বৃদ্ধ এই কৃষকের দুই সংসারে ৭ ছেলে ৬ মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজে আগ্রহ ছিল আব্দুল কাদেরের (৭০)। ১৯৯৯ সালে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে আনারকলি জাতের দু’টি আনারস এনে তা থেকে হাজারও চারা তৈরি করেন তিনি।

জানা গেছে, আব্দুল কাদের ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে শিলিগুড়ি এলাকায় ট্রেনিংয়ে যান। সেখানে আনারস বাগানের ভিতর প্রায় তিন মাস প্রশিক্ষণ নেন। সেসময়ই আনারস চাষের ওপরে তার আগ্রহ জন্মায়। এরপর দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসেন। এরপর শুরু করেন কৃষিকাজ। তার ১৪ একর এবং ২ একর জমিতে বিশাল দু’টি মাছের খামার রয়েছে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।

১৯৮৭ সালে লালমনিরহাট জেলায় তিনি মাছ চাষ করে সফল উদ্যোক্তার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। তার একটি বিশাল বাগানে ৪০ প্রকারের ফলের গাছ রয়েছে। এবছর রেলের দুই ধারে পতিত জমিতে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেন। প্রতিবছর আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেন আনারকলি আনারস।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল কাদের জানান, ১৯৯৯ সালে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে আনারকলি জাতের আনারস নিয়ে বন্ধু হরি বেড়াতে আসেন কৃষক আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। সেই আনারস খেয়ে বাড়িতে রোপণ করেন আনারসের কাণ্ড। সেই গাছ বড় হয়ে ফল দিলে অবাক হন তিনি। বাড়াতেই থাকেন আনারসের চারা। সেই থেকে বাড়িতেই আনারস চাষ শুরু হয় কৃষক আব্দুল কাদেরের।

স্বপ্ন দেখেন বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষাবাদের। কিন্তু উপযোগী জমি ছিল না। এরপর লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেললাইনের পতিত ঢালু জমিতে ২০০৮ সালে আনারস চাষের উদ্যোগ নেন। বাড়িতে লাগানো আনারকলি জাতের আনারসের চারা পরীক্ষামূলক রেল লাইনের দুইধারে রোপণ করেন। বেশ সুফল পেয়ে প্রতিবছর রেললাইনের ধারেই বাড়াতে থাকের আনারসের বাগান। তার বাগানে ফলেছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের আনারস। তবে ওজন যাই হোক স্বাদে কমতি নেই।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘রেললাইনের দুই ধারে প্রায় সাত থেকে আট হাজার চারা রোপণ করেছিলাম। ক্ষেত থেকে আনারস নগদে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি পিস। এবছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা আনারস বিক্রি করেছি। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ফ্রিতে দেওয়া হয়েছে।’ রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত পুরো রেললাইনে আনারসের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

প্রতিবেশি বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘কৃষক আব্দুল কাদের একজন সফল কৃষক। তার অনেক বাগান রয়েছে। পাশাপাশি ১৬ একর জমিতে তার মৎস্য খামারও রয়েছে। প্রতিবছর মাছ ও বাগানের ফলমূল বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করেন।’

আদিতমারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘কৃষক আব্দুল কাদের রেলের দুই ধারের পতিত জমিতে আনারস লাগিয়ে লাভবান হয়েছেন। তার ব্যতিক্রম উদ্যোগে কৃষি অফিস থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের কৃষি উপ-সহকারী অফিসারা তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি জেলার অন্য কৃষকদের আমরা পতিত জমিতে আদা,
রসুন, হলুদ, লাগাতে উৎসাহ দিচ্ছি।’

লালমনিহাট কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘একজন কৃষক রেললাইনের দুই ধারে পতিত জমিতে আনারস চাষ করেছেন বলে জেনেছি। তার এমন কাজে জেলার অন্য কৃষকদের উৎসাহের প্রেরণা যোগাবে। ’

বিজ্ঞাপন

তবে লালমনিরহট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘রেললাইনের দুই ধারে ৫ থেকে ১০ ফুটের মধ্যে বনবিভাগ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেকোনো জিনিস লাগালে সেটি অবৈধ। সাধারণত আমরা এই পতিত জমি কাউকে লিজ দিই না। এটি রেলের সংরক্ষিত জায়গা। যে কৃষক আনারস লাগিয়েছেন সেটি অবৈধ। রেলের পতিত জায়গায় বন বিভাগের সঙ্গে আমাদের গাছ লাগানোর চুক্তি হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন