বিজ্ঞাপন

ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬ দলের ১৯ দলই ইভিএমের বিপক্ষে

August 1, 2022 | 8:55 am

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর বেশিরভাগই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন। তবে এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি সমমনা দল। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করার দাবি জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এবারের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৯ দলই নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদের কেউ কেউ ইভিএম বিপক্ষে, কেউ কেউ আবার আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবহার, কেউবা আবার শুধুমাত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম চায় না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮টি দল।

এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা এখনো কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে। ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল ঠেকাতে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট চাই আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

ইসি সূত্র জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ধারাবাহিকতায় এবারও নিবন্ধিত রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে গত সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে দেশের বৃহত্তর দল বিএনপি অংশ নিলেও এবার অংশ না নেওয়ায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এ সংশয় খোদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এসেছে।

সংলাপের শেষদিন রোববার (৩১ জুলাই) বিকেলে ইসির সংলাপে অংশ নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল এই সংলাপে অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ৯টি দল অংশ নেয়নি। আর দুটি দল নতুন করে সময় চেয়েছে। এই দুটি দলের সঙ্গে পরে সংলাপে বসবে ইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, যে দুটি দল সময় চেয়েছে, তাদের সময় দেওয়া হবে কীনা, তা কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা সব দলের সঙ্গে সবসময় আলোচনা করতে আগ্রহী।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দাবি ছিল, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো ইসির অধীনে রাখা, ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন ও প্রবাসীদের ভোটদানের ব্যবস্থা করা।

এছাড়াও নির্বাচনের বাইরে জনসম্পৃক্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর সেটি হল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তি। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করেছে। এমনকি ভোগান্তি কমানোর জন্য মাঠপর্যায়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

ইভিএমের বিপক্ষে দলগুলো
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, জনগণের বড় অংশ ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। জনগণ ইভিএমকে ডিজিটাল কারচুপির বাক্স মনে করে। এছাড়াও নানা আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করতে হবে।

অন্যদিকে সরকারের শরীক দল রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনও বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তারা ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিও।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে অংশ নেয়নি ৯টি দল
বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। এছাড়া আগস্টের পরে সংলাপের জন্য সময় দিতে পারবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি-জেপি। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কারণে পরবর্তীতে সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।

সারাবাংলা/জিএস/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন