বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গুম-খুনের তদন্ত দাবি বিএনপির

August 18, 2022 | 9:03 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নেই গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান।

বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ৬০০ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সিভিল সোসাইটির মানুষ, শ্রমিক নেতাকে গুম করা হয়েছে। বেশির ভাগকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলোর কোনো সদুত্তর আমরা পাইনি, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরাও পায়নি। একটা লোককে রাষ্ট্র গুম করে রাখবে। মানে কিছু জানবে না, তার সমস্ত অধিকার ক্ষুণ্ন করা হবে, তার পরিবারের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে- এটি কখনও মেনে নেওয়া যায় না।’

‘জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অত্যন্ত সঙ্গতভাবে বলেছেন যে, এগুলোর সুষ্ঠু স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। সেই সঙ্গে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিচার হতে হবে। তিনি কিন্তু র‌্যাবের নামও উচ্চারণ করেছেন যে, র‌্যাবের মাধ্যমে এগুলো হয়েছে বলে তাদের ইনভেস্টিগেশনে এসছে। এ বিষয়ে আমরা বলেছি যে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে স্বাধীন ইনভেস্টিগেশন চাই, ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে সেগুলো উদঘাটন করতে চাই। এ সবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি- বলেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

‘গুম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ বেশির ভাগই রাজনৈতিক’— ক্ষমতাসীন দলের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওনারা তো এ কথা বলবেনই। তারা তো স্বীকার করবেন না। তবে কালকে উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন যে, জাতিসংঘের কোনো ক্ষমতা নেই এসব গুম-অপহরণের বিচার করার। তার মানে স্বীকার করছেন যে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা তো নিশ্চয়ই পুলিশ অফিসারদের বক্তব্যগুলো শুনেছেন। এর আগে তারা বলেছেন, অনেকে হারিয়ে যায়, অনেকে পারিবারিক কারণে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেছে, বিশেষ করে নেত্র নিউজের যে প্রতিবেদন বেরিয়েছে সেই প্রতিবেদনে আরও বেশি প্রমাণ হয়েছে যে, রাষ্ট্র এর সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাানগুলোকে এসব গুম অত্যাচার-নির্যাতনের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন সেই বিবৃতিতে আমাদের এতদিনকার দাবি প্রমাণ হয়েছে। আমরা যেটা এতদিন বলে আসছি যে, এখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স এবং এক্সাট্রা জুডিশিয়াল কিলিং চলছে। ওনার (জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার) বিবৃতিতে আছে শর্টটার্ম ও লং টার্ম ডিজএপিয়ারেন্স হয়েছে। উনি পরিস্কার করে বলেছেন যে, আমাদের কর্মীরা মানে জাতিসংঘের কর্মীদের ফাইন্ডিংসগুলো হচ্ছে এভাবে গুম হয়ে গেছে, এভাবে ডিজ এপিয়ার করেছে।’

বিজ্ঞাপন

সরকার নতুন এলিট শ্রেণি তৈরি করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওরা জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছু ভুলে গেছে। রাষ্ট্রকে দখলে রাখতে একটা নতুন এলিট ক্লাস তৈরি করেছে তারা। এই এলিট ক্লাসে কিছু আমলা আছে, কিছু রাজনীতিবিদ আছে, কিছু টেকনোক্রেট আছে তাদেরকে দিয়ে একইভাষায় কথা বলায় এবং কথা বলছে।’

তিনি বলেন, ‘গতকালের সমাবেশে উনারা হুংকার দিয়েছেন। বলা যেতে পারে হুমকি দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। এটিই তাদের চরিত্র। এভাবে তারা সব সময় বিরোধী দলকে দমন করতে চায় এবং যে ধরনের ভাষা তারা ব্যবহার করেছে সেই ভাষা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসের ভাষা। সেই ভাষা হচ্ছে পুরোপুরিভাবে বিরোধী দলকে ভয় দেখানো, সন্ত্রাস সৃষ্টি করার ভাষা। তারা পরিষ্কার করে এমনও কথা বলেছে, বেরুতে দেওয়া হবে না, গলিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

‘বাংলাদেশ কারও পৈত্রিক সম্পত্তি না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী আমাদের যতটুক করার চেষ্টা করব। তারা তো দেড় যুগ ধরে বাধাই দিচ্ছে, রাস্তায় তো দাঁড়াতে দেয়নি কোনোদিন। এখন কি কারণে হঠাৎ করে রাস্তায় দাঁড়াতে দিয়েছে? তাদের আসল চরিত্র কয়েকদিন পরেই দেখা যাবে। এমনি তো দেখেছেন গত কয়েকদিন যাবত খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় কীভাবে তারা আক্রমণ করেছে দলের কার্যালয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির উপরে।’

চা শ্রমিকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চা শ্রমিক ন্যায্য দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে আমাদের।’

বিজ্ঞাপন

সরকারের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংলাপের কোনো পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। এখানে রাজনৈতিক যে সংকট তার সমাধানই সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবে, যতক্ষণ না মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে, যতক্ষণ না এই সরকার পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নেই ওঠে না।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা ভালো। অল হার প্যারামিটারস ভালো। আমি তার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, সেই ডাক্তার বলেছেন উনি অত্যন্ত ভালো আছেন। কোনো সমস্যা নেই এখন। উনি হাসপাতাল থেকে যেমন এসছিলেন, সেরকমই আছেন। এমনিতেই তো উনি অসুস্থ। অসুস্থতার মধ্যে সুস্থ আছে। এমন কোনো ব্যাপার নেই যে, এখনই তাকে হাসপাতালে যেতে হবে।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, ওবায়দুর নাসির, সাঈদ সোহরাব, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন