বিজ্ঞাপন

নারকীয় তান্ডবের সেই বিকেলে

August 21, 2022 | 3:40 pm

রহমান রা’দ

ক্ষমতাসীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবনে বসে হামলার ছক ও পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিচ্ছে। মিলিট্যান্ট ট্রেইনড ঘাতক দলকে সরাসরি তত্বাবধান করছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতা ও বাহিনীপ্রধানেরা। সরাসরি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ডেপ্লয় লাগিয়ে হামলায় ব্যবহার হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া প্রচন্ড শক্তিশালী ও আধুনিক আর্জেস গ্রেনেড। কোনভাবে গ্রেনেড বৃষ্টি থেকে বেঁচে গেলেও চারপাশ থেকে ব্যবহার হবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র একে-৪৭ এর হাই ভেলোসিটি বুলেটবৃষ্টি।

বিজ্ঞাপন

গ্রেনেড এবং বুলেট বৃষ্টি যেন ঘাতক দল নির্বিঘ্নে ঘটতে পারে সেটা নিশ্চিতের জন্য চারপাশে ঘেরাও দিয়ে আছে আইনের লোকেরা। আপ্রাণ চেষ্টার পরেও বিরোধী দলের প্রধান তাকে জীবন বাজি রেখে এবং উৎসর্গ করে বুকে-পিঠে আগলে রাখা নেতাকর্মী ও বিশ্বস্ত মানুষগুলোর অকুতোভয় দুঃসাহসে বেঁচে গেলেন, তার বুলেটপ্রুফ গাড়ির চাকা আগেই গুলি করে পাংচার করে দেয়া হয়েছিল, তবুও ড্রাইভার সেই বসা টায়ারের গাড়িই রীতিমত উড়িয়ে বের করে নিয়ে গেলেন ঘাতকদের ঘেরাটোপ থেকে।

ঘটনাস্থলে তখন এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। যারা চলে গেছেন, তারা তো সবকিছুর উর্দ্ধে, কিন্তু অজস্র মানুষ অঙ্গ-প্রত্যক্ষ হারিয়েছেন, কাতরাচ্ছেন, একটু সাহায্য চাচ্ছেন। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে সাহায্যের বদলে এলো নির্মম লাঠিচার্জ। ঘাতক দলকে এতোক্ষণ প্রটেকশন দিয়ে রাখা ফোর্সের সদস্যরা আহত মানুষগুলো এবং তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা মানুষগুলোর উপর লাঠিচার্জ শুরু করলো। সেই বীভৎস নারকীয় পরিস্থিতি থেকে তবুও শেষপর্যন্ত যাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলো, তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেবার মত কাউকে পাওয়া গেল না। আগ থেকেই চিকিৎসা না পাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। এমনকি কেউ যেন একটা জরুরি ঔষধও কিনতে না পারে, সেটা নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে শুরু করে আশেপাশের সকল ফার্মেসী বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। ডাক্তারদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

গ্রেনেডের তীব্র আঘাতে শরীরের নীচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আইভী রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কোন চিকিৎসা না পাওয়ার সেখান থেকে পিজিতে নেবার সময় বাধা দেয়া হলো। জানানো হলো আহত কাউকে কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না! বহু কষ্টে সিএমএইচে নেবার ব্যবস্থা করা হলো, কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট গেইটে বসিয়ে রাখা হলো এক ঘন্টা, পরে জানানো হলো আর্মি অফিসারের রেকমেন্ডেশন লাগবে। সবমিলিয়ে প্রায় অর্ধমৃত রক্তাক্ত মানুষটা ৮-৯ ঘন্টা কোন চিকিৎসা পেলেন না। অর্থাৎ কোনভাবে গ্রেনেডে তাকে মারতে না পারলেও বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো। মানুষটার লাশ পরিবারকে একবার দেখতে না দিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করতে না দিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করে দেয়া হবে বলে জানানো হলো সন্তান নাজমুল হাসান পাপনকে, লাশ নাকি বাইরে নিতে বা হ্যান্ডওভার করতে উপরমহলের নিষেধ আছে।

বিজ্ঞাপন

ওদিকে ঘটনাস্থলে মঞ্চস্থ হচ্ছে নাটকের নতুন অধ্যায়। আচমকা পানিভর্তি ওয়াসার গাড়ি এলো এবং এতো জরুরি একটা স্পট পুরোটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হলো। যাবতীয় যত এভিডেন্স নষ্ট হয়ে গেল তাতে, নষ্ট করা হলো মুড়ি-মুড়কির মত ছোঁড়া অবিস্ফোরিত অনেকগুলো তাজা গ্রেনেড। অর্থাৎ কারা হামলা করেছিল, কি দিয়ে হামলা করেছিল, ঘাতক দলের পরিচয় ইত্যাদি কোনকিছুর প্রমাণ রাখা যাবে না। বিরোধীদলের নেতারা সারাদিন পল্টন থানায় বসে থাকার পরেও একটা মামলা তো দূরের কথা, একটা জিডিও নেয়া হলো না। রাজনীতির হিসেব বাদ দিলেও এতোগুলো মানুষের মৃত্যুতে পার্লামেন্টে একটা শোক প্রস্তাবও আনতে দেয়া হলো না, উল্টো দেশের সকল জনগণের প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারপারসন সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, বিরোধী দলের নেত্রী নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের এবং নিজের দলের লোকদের উপর হামলা করার জন্য। এটা পুরোপুরিই বিরোধীদলের সাজানো নাটক।

এখনো, এতো বছর পরে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এগুলো কোনটাই অলীক কল্পনা না, সবই বাস্তবে ঘটে যাওয়া রোমহর্ষক নারকীয় ঘটনাপ্রবাহ। আর এই ইতিহাসের উপর দাঁড়িয়ে, এই ঘৃণ্য পৈশাচিক হামলা আর হত্যাকান্ডের পর, ১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্টের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে এদেশের বিজ্ঞ সুশীল ভদ্র শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীগণ দুটো দলকে এক পাল্লায় মাপে, সেদিনের সেই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহারকারী আপাদমস্তক সাইকোপ্যাথ খুনী সন্ত্রাসী সংগঠনকে মজলুম এবং অবিচারের শিকার দাবী করে একটা রাজনৈতিক দলের প্রাপ্য ট্রিটমেন্ট চায়, সেদিন ২৪ জন বর্ষীয়ান আর প্রাণবন্ত তরুণ নেতাকর্মীদের বধ্যভূমিতে পরিণত হওয়া ক্ষতবিক্ষত দলটাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আর ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী’ অপবাদ দিয়ে দেশের একমাত্র ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণতান্ত্রিক নিয়মে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল ২০০১ সালে। তখন পঁচাত্তরের পর দীর্ঘ ২৬ বছরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখা একমাত্র দলটার নাম ছিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বিনিময়ে তারা উপহার পেয়েছিল সরকারী পরিকল্পনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে সভানেত্রীসহ পুরো দলের হাইকমান্ড এবং দলকে সমূলে নিকেশ করে দেয়ার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা। বাদবাকি হত্যা-নির্যাতনের কথা বাদ দিলাম।

বিজ্ঞাপন

হিস্ট্রিরিয়াগ্রস্তের মত চোখ বুজে শুধু আওয়ামী লীগকেই ফ্যাসিবাদের ধারকবাহক আর গনতন্ত্রের শত্রু সাব্যস্ত করে পশ্চিমা মডেলের গণতন্ত্রের সবকের সময় ২১শে আগস্টের কথা আমাদের স্মরণ থাকে কি?

হিসাবটা মিলিয়ে রাখি স্রেফ। বুদ্ধিবৃত্তিক নোংরা ইভিলদের নির্লজ্জ পুরীষপ্রসবের হিসাব। না শোধ হওয়া বহু অমীমাংসিত দায়ের হিসাব। তাজা রক্তের হিসাব।

লেখক: একটিভিস্ট

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন