বিজ্ঞাপন

‘পতাকার দিকে তাকিয়ে কষ্ট ভুলি’

December 16, 2017 | 1:52 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

সারাবছর রিকসার গ্যারেজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মইজউদ্দিন। রায়েরবাজার কাঁচা বাজারের পাশে একটি রিকসার গ্যারেজে কাজ করেন তিনি। পাশের একটি বাসায় মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। তবে বছরের কয়েকটি দিন মইজউদ্দিন তার রিকসা গ্যারেজ থেকে ছুটি নেন আর সেসময়ে তিনি কাঁধে তুলে নেন নানা সাইজের পতাকায় সাজানো লাঠি। পুরো ধানমন্ডি ঘুরে তিনি বিক্রি করেন বিভিন্ন সাইজের পতাকা। মইজউদিন বলেন, পতাকা বেইচা এই সময় পেট চালাই এইটা ঠিক, তবে পতাকা যে কাঁধে নিয়া ঘুরি তাতে আনন্দ অনেক বেশি, অনেক কষ্ট ভুলে যাই যখন তাকাই এই পতাকার দিকে।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এই দিনে সব জায়গায় লাল-সবুজের পতাকা। বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, গাড়িতে, রিকসার সামনে এমনকী সাইকেলের সামনেও শোভা পাচ্ছে এই পতাকা। আর রয়েছে শিশু-কিশোরদের হাতে ধরা, মাথায় বাঁধা।

ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রির হার বেড়ে যায় বলে সারাবাংলাকে জানান শাহবাগে জাতীয় যাদুঘরের সামনে পতাকা নিয়ে বসা ১৬ বছরের কিশোর সুমন হোসেন। বঙ্গবাজারে দোভাষীর কাজ করা এই কিশোর বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বঙ্গবাজারে পতাকা বানানো হয় কয়েকটি কারখানায়। মালিকের সঙ্গে চুক্তি থাকে, যে যতো বেশি বানাতে পারবে তার মজুরি ততো বেশি। প্রতিটি পতাকা তৈরি করতে আকৃতি ভেদে ১০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

দুই বছর আগে পর্যন্ত সুমন কেবল পতাকা তৈরির কারখানায় কাজ করলেও গতবছর থেকে নিজেই পতাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন বঙ্গবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শাহবাগে।  মূলত ১৪ ডিসেম্বর থেকে বেশি পতাকা বিক্রি হয়। চলে ১৬ ডিসেম্বর-বিজয় দিবস পর্যন্ত।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুকৃতি ইসলাম জয়িতা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে এসে সোজা চলে যান মইজউদ্দিনের কাছে। তার হাতে থাকা পতাকা থেকে বেছে নেয় সবচেয়ে ছোট আকৃতির পতাকাটি। সেটি হাতে নিয়ে জয়িতা আরেকটি পতাকা কিনে নেয় বাড়ির বারান্দার জন্য। জয়িতা সারাবাংলাকে বলেন, মায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি। অনেক কষ্টের বিনিময়ে যারা আমাদেরকে দেশ দিয়েছে আর এই পতাকা দিয়েছে তাঁদেরকে স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই পতাকা হাতে নিয়ে।

সারাবছর গ্যারেজে কাজ করলেও কয়েকটি দিনে পতাকা বিক্রি করা সেই মইজউদ্দিন বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন পতাকা কিনতে আসে তখন খুব ভালো লাগে। অনেক পতাকা বিক্রি করি মূল দামের চেয়ে কমে।  কারণ পতাকা নিয়ে যে দামাদামি চলে না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন