বিজ্ঞাপন

সামনে খেলা হবে: বিদিশা

September 6, 2022 | 10:35 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মাঠে নেমেছেন তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ। সঙ্গে আছেন সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকও। আগামী ২৬ নভেম্বর বেগম রওশন এরশাদের ডাকা দলের সম্মেলন সফল করতে মাঠে নেমেছে ১৯ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্যরা তাদের অবস্থান থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তারা প্রকাশ্যে চলে আসবেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ঝটিকা সফরে নামবেন বেগম রওশন এরশাদের সমর্থক নেতাকর্মীরা। বেগম রওশন এরশাদ দেশে ফিরেই তিনিও বিভাগীয় শহরে সফর করবেন। এ ক্ষেত্রে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকও বসে নেই। তিনি জাতীয় পার্টি পুনঃগঠনের জন্য মাঠে আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি বেগম রওশন এরশাদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সারাবাংলাকে।

বিদিশা বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বৈধ পন্থায় সরিয়ে দেওয়া হবে। এটিই জি এম কাদেরের প্রতি আমার আলটিমেটাম। কেননা জি এম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ বড় ম্যাডাম এবং আমি এরশাদ পরিবারের। আমাদের কাছে এরশাদের সন্তান। এরশাদ সাহেবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। সে জন্যই বলছি খেলা হবে সামনে।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্টিতে সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে জি এম কাদেরের সমর্থক, নেতা-কর্মীরা। এ সব নেতাকর্মীর অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জি এম কাদের জাপা চেয়ারম্যান হওয়ার পর রাজশাহী মহানগরে গণ পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী মহানগরের পদত্যাগী নেতারা লিখিত চিঠিতে পার্টির চেয়ারম্যানের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বেগম রওশন এরশাদ সমর্থক ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের মনোনয়ন ব্যবসা, পদ বাণিজ্যসহ সরকারের কাছ থেকে নেওয়া সুযোগ-সুবিধার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে তারা। আগামী নভেম্বরের সম্মেলনে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানান, এরশাদ সরকারের পতনের পর দলের চেয়ারম্যান এরশাদ কারাগারে চলে যান। ওই সময় জি এম কাদের তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য একদিনও মাঠে নামেননি।

দেশজুড়ে তখন জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত। তৎকালীন বিএনপি সরকারও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মাঠে নামলেই মার খায়। পুলিশ-জনতা একযোগে তাদের প্রতিহত করে। দলের হাল ধরেন মিজান চৌধুরী। ওইসময়ও জি এম কাদের মিজান চৌধুরীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন।

বেগম রওশন এরশাদ গুলশানে দলের কার্যালয়ে এরশাদের মুক্তির জন্য অনশন করতে গেলে সেখানে মিজান চৌধুরীর সঙ্গে জিএম কাদের উত্তেজিত ভাষায় কথা বলেছিলেন বলে জানান দলের ত্যাগী নেতারা। ওই সময়কার পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে ৩৫টি আসন লাভ করে।

কারাগারে থেকেও সদ্য ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ পাঁচটি আসনে জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর নানা জোট মিলে আরও ৫টি নির্বাচনে অংশ নিলেও ৯১এর সাফল্য আর ছুঁতে পারেনি জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে আসন পেয়েছিল ৩৪টি, আর এবার পেয়েছে ২০টি। এই সাফল্যও এসেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের সুবাদে।

বিজ্ঞাপন

একজন প্রেসিডিয়াম সদ্স্য তার নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।’

পরিস্থিতিতে অনেক সিনিয়র নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কো-চেয়ারম্যানও রয়েছেন। যারা রওশনকে পার্টির হাল ধরার জন্য অনুরোধ করেছেন। এরপরই বেগম রওশন এরশাদ সাহস নিয়ে তিনজন জাপার কাউন্সিল ডেকেছেন।

জাপার এ সব পরিস্থিতি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদের কর্মকাণ্ডে দলের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। আগামী নির্বাচনে জাপা ৩০০ আসনে প্রাথী দিয়ে নির্বাচনে লড়বে। এ জন্য দলকে সু-সংগঠিত রাখার জন্য দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এরইমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।’

দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং পদ প্রদান বাণিজ্য মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আসলে কি সত্য? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি (জি এম কাদের) চেয়ারম্যান মনোনীত হওয়ার পর এ ধরনের অভিযোগ আমি শুনিনি। দেখিওনি।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন