বিজ্ঞাপন

প্লট বুকিংয়ে ‘উত্তরায়ন আমানা সিটি’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

September 7, 2022 | 8:28 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্লট বুকিংয়ের নামে ‘উত্তরায়ন আমানা সিটি’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুকিং করে এখনো অনেকে প্লট পাইনি বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার চাষযোগ্য জমিকে প্লট দেখিয়ে তারা বিক্রি করছে ডেভেলপার কোম্পানি। তবে জমির মালিকরা বলছেন, জমি কেনার বিষয়ে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ আমচত্বর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘উত্তরায়ন আমানা সিটি’। সেখানে আছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাট। হাটের পাশে আছে বিল ও চাষযোগ্য জমি। ‘আমানা হোমস’ ও ‘আমানা সিটি’ নামে বিভিন্ন সময় তারা প্লট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। সাামজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্লট বিক্রির বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাদের এক বিজ্ঞাপন দেখে প্লট বুকিং দিতে যান নগরীর এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী। তার আশা জীবনের শেষ বয়সে শান্তিতে বসবাস করবেন। প্রলোভনে পড়ে নিজের নামে একটি প্লট বুকিং দিয়েছেন তিনি। একটি প্লট দেওয়া হবে বলে এক লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে তার কাছে থেকে। কিন্তু জমির পরিমাণ কত সেটি উল্লেখ করা হয়নি।

ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিটিহাটের নিচে আছে বিল। সেখানে আছে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি। এর মধ্যে সিটি হাটের অংশটি জমি মালিকদের কাছ থেকে বন্ধক নিয়ে গরুর হাট করা হয়েছে। সেখানে গেছে প্রায় ১০০ বিঘা জমি। বাকি অংশের জমিতে এখনো ধান চাষ করেন জমি মালিকরা। সেখানে রয়েছে মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি বিঘা দেড়ে জমি।

জমির মালিক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার এই জমিতেই নাকি আবাসিক এলাকা হবে? অথচ আমিই জানি না। আমার মতো শতশত জমি মালিকই জানেন না এখানে কারা আবাসিক এলাকা গড়ে তুলবেন। আমাদের জমিতে আবাসিক এলাকা হবে জমি না কিনেই, যোগাযোগ না করেই— এটা কেমন কথা?’

বিজ্ঞাপন

ওই বিলের আরেক জমির মালিক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার জমি আছে দুই বিঘা। কিন্তু এই জমি তো আমি বিক্রি করব না। তাহলে এখানে আবাসিক এলাকা কিভাবে হবে? অথচ শুনছি আমাদের জমি বিক্রি করছে আমানা গ্রুপের লোকজন। এটা কেমন জালিয়াতি বুঝতে পারছি না।’

নওদাপাড়া এলাকার নান্নু নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, এই বিলে আমার বাবার সম্পত্তি আছে এক বিঘার একটু বেশি। আমি এই জমিতে ধান চাষ করি। এখনো জমিতে আমন ধান আছে। আমার বাবা বেঁচে আছেন। কিন্তু আমার বাবা জমি বিক্রি করেননি। তাহলে আমাদের জমি কিভাবে ওরা বিক্রি করছে? আমাদের জমিতে আমরা প্লট করব কি না, সেটি আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অন্য মানুষ এখানে চাইল আর প্লট করল, তাতো হতে পারে না।’

‘উত্তরায়ন আমানা সিটি’ কাছ থেকে ওই এলাকায় জমি কিনেছেন এটিএম সারোয়ার হোসেন নামের ব্যক্তি। তাকেও একটি প্লট দেওয়ার নামে এক লাখ টাকা নিয়ে রশিদ দিয়েছে কোম্পানিটি। ওই প্রতিষ্ঠানটির অথোরাইজড কর্মকর্তা সাফিন সরকার টাকাটা বুঝিয়ে নিয়ে সই দিয়েছেন। সেক্টর নম্বর-১, প্লট নম্বর-১, রোড-বি/৭ এর নামে একটি প্লট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও জমির পরিমাণ কত, সেটি উল্লেখ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এভাবে কথিত ওই আবাসিক এলাকায় অন্তত দেড়শ মানুষের কাছে প্লট বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্লট বুকিং নেওয়া সালেহা খাতুন জানান, জমির পরিমাণ কতটুকু দেবে জানি না। তবে ওরা বলেছে ৩ কাঠা দেবে। আমি কয়েকটি প্লট বুকিং দিয়েছি। কবে জমি পাব জানি না। জমি দেখতেও পাইনি। বুকিং দিয়ে রেখেছি, বাকিটুকু আল্লাহ ভরসা।’

মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা তো বলছে দ্রুতই প্লট বুঝিয়ে দেবে। কবে দেবে জানি না। প্লটের জন্য এক লাখ টাকা বুকিং মানি দিয়েছি মাত্র। বাকি টাকা জমির কাজ শুরু হওয়ার পরে ধাপে ধাপে দিতে হবে।’

এ অভিযোগের বিষয়ে উত্তরায়ন আমানা সিটির চেয়ারম্যান ফজলুল হকের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি তাদের ব্যাবস্থপনা পরিচালক মাসুদুল হককে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় আমানা গ্রুপের করপোরেট অফিসে যাওয়া হয়। সেখানে সাফিন সরকার নামের একজনকে পাওয়া যায়। তিনি ওই করপোরেট অফিসের ইনচার্জ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার ও এমডি স্যার ঢাকায় থাকেন। হয়তো ব্যস্ত আছেন তাই ফোন ধরেননি।’

বিজ্ঞাপন

প্লট বুকিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটিহাটের ওখানে বিশালাকার আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। যার আয়তন হবে অন্তত তিন দুই বর্গকিলোমিটার। তাই প্লট বরাদ্দ দিচ্ছি। কিন্তু অনুমতি না ছাড়া কোনো তথ্য দেওয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আবাসিক এলাকার জন্য জমি মালিকদের নিকট থেকে কতটুকু জমি কিনেছি সেটি তো আপনাকে বলা যাবে না। কিভাবে সেখানে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলব, জমি কিনেছি কি না— সেটি আমরা জানি।’

এদিকে সিটি হাটের এই বিলের জমিতে কোনো আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে কি না— জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো তথ্য নাই। এই ধরনের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার আগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু এইরকম অনুমোদনের আবেদন কেউ করেনি।’

সারাবাংলা/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন