বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দেওয়ার প্রস্তাব ভারতের

September 8, 2022 | 9:55 am

সারাবাংলা ডেস্ক

ঢাকা: বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিটের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। একইসঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বিজ্ঞাপন

দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত তার ভূখণ্ডে মাধ্যমে বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশন/বিমানবন্দর/সমুদ্র বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটি।

নেপাল ও ভুটানে পণ্য রফতানির জন্য ভারত বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট প্রদান করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ করেছে এবং ভারত তার অনুরোধের বিষয়টি কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেল সংযোগগুলো কার্যকর করার জন্য, বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ক্রসিংয়ে বন্দর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে ভারত। একইসঙ্গে বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা বাড়াতে সম্মত হন দুই নেতা।

বিজ্ঞাপন

ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করার জন্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে ভারত। এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে দেশটি। এছাড়া ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সাম্প্রতিক চূড়ান্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সমীক্ষায় সুপারিশ করা হয়েছে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। উভয় দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে এবং এলডিসি মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য যথাসময়ে এগুলি দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দুই নেতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার রোধে তাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় পক্ষ এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী উভয়েই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, পরিবেশ সম্মত জ্বালানি এবং সুনীল অর্থনীতির মতো নতুন ক্ষেত্রগুলো সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন তারা।

দ্বিপাক্ষিক এবং উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ বাস্তবায়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি।
উভয় পক্ষই চলমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। যেমন— টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল-গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত পরিষেবার জন্য আইটি সমাধান বিনিময় করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কিছু নতুন উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছে। যেমন— কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নতুন গীতালদহ সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেম এবং রেলস্টেশনের আপগ্রেডেশন, বুড়িমারী ও চেংরাবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনরায় স্থাপন এবং সিরাজগঞ্জে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি।

ওই যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে বিভিন্ন অর্থায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে তারা। দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রশংসা করেন, যেখানে ভারত এশিয়ায় বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম রফতানির গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনুমানযোগ্য সরবরাহের জন্য দেশটিকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- ভারতের বিদ্যমান সরবরাহের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অনুরোধগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে এবং এই বিষয়ে সব ধরনের প্রয়াস চালানো হবে।

বিজ্ঞাপন

উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই নেতা কাটিহার (বিহার) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত প্রস্তাবিত উচ্চ ক্ষমতার ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনসহ দুই দেশের পাওয়ার গ্রিডগুলোকে একযোগে সংযুক্ত করার প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হন। উভয় দেশ বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে যে, এর জন্য নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই ভারতে বিবেচনাধীন রয়েছে।

দুই নেতা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন যা বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছে এবং ভারত উভয় পক্ষের অনুমোদিত সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় নেতা উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে জোরদার সহযোগিতার প্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থল বন্দরগুলোতে অবকাঠামো এবং স্থাপনাসমূহের উন্নয়ন এবং বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোতে বন্দর বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য অশুল্ক বাধা অপসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকদের তাদের স্বদেশে নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় উভয় দেশের একমাত্র প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়কেই সহায়তার জন্য তার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন