বিজ্ঞাপন

‘নদী দখলকারীরা সবসময় সরকারি দলের ছায়া খুঁজে নেয়’

September 10, 2022 | 9:21 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দখলে, দূষণে জর্জরিত বুড়িগঙ্গা। আর এই দখলকারীরা সবসময় সরকারি দলের ছায়া খুঁজে নেয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদী কারা দখল করে? বলতে গেলে কথাটা আমার বিরুদ্ধেই যায়। যেসব ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধিরা নদী দখল করে তারা কিন্তু সরকারি দলের লোক। আমার দলের লোক। আমার দলের লোক মানে, দখলদাররা যে সরকার থাকে সেই সরকারি দলের ঘাড়ে সওয়ার করে। আওয়ামী লীগ থাকুক, অথবা বিএনপি বা জাতীয় পার্টি থাকুক- তারা সেই দলের সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে নদী দখল করে দূষণ করে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) কেরানীগঞ্জের ঠোডা এলাকার মুসলিমবাগ টাওয়ার মাঠে বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণ দূর করার উদ্দেশে আয়োজিত রিভার কার্নিভালে গেস্ট অব অনার হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এবং বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার যৌথ আয়োজনে এই নদী কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

বুড়িগঙ্গার তীরে বেড়ে ওঠা নদীর অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরতে গিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কেরানীগঞ্জে আমাদের অস্ত্র গোলাবারুদ জমা থাকত। জিঞ্জিরা ছিল পাইকারি বাজার। সোয়ারিঘাট ছিল মাছের বাজার। এখন আছে কারওয়ান বাজার। সেই বুড়িগঙ্গা আর নাই। কিন্তু আমি সেই বুড়িগঙ্গা চাই।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকার নদী ও খালের বর্তমান অবস্থার জন্য জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান ঢাকাকে এই অবস্থায় আনার জন্য দায়ী জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকার। ধোলাইখাল ঢাকার চারদিকে বিস্তৃত ছিল। সেই খাল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছিল। এরশাদ এসে সপ্তকলা পূর্ণ করে। এই খালের জায়গায় এখন রাস্তা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে ঢাকার রাস্তায় পানি জমে থাকে। পানি সরার জায়গা থাকে না। এভাবে বুড়িগঙ্গাসহ, ঢাকার পাশের অন্যান্য নদী যেমন বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ইত্যাদি নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ কোনো সরকার এখনও পর্যন্ত নেয়নি।’

এ সময় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদী উদ্ধারে বর্তমান সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কামরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় যে বুড়িগঙ্গা দেখেছি সেই নদী ফেরত চাই। ব্রিটেনের টেমস নদী দূষণমুক্ত করতে চল্লিশ বছর সময় লেগেছে। চীনের হুয়াংহু নদী দূষণমুক্ত করতেও অনেক বছর সময় লেগেছে। আমরাও ইনশাল্লাহ বুড়িগঙ্গাকে দখলমুক্ত করব। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সেই সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এই আয়োজন। আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমরা নদী দখল ও দূষণ করব না। সবাই মিলে সচেতন হব।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘নদী বাঁচানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, নাগরিক দায়িত্ব ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নদী বাঁচাতে কেন আন্দোলন করতে হবে? এটা কোনো সরকারের দেশ না, এটা দলের দেশ না, এটা জনগণের দেশ। জনগণের নদী জনগণকে ফেরত দিতে হবে।’

বিআইডাব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও ড্রেজিং প্রকল্পের প্রধান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীকে প্রাণ দিতে ইতোমধ্যে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গাকে সচল করতে কাজ করছে সরকার। শিগগিরই এ কর্মযজ্ঞ ঢাকাবাসীর চোখে পড়বে ‘

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক জামিলের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির, ইউএস এইড বাংলাদেশের ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ম্যাক্রেস, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সুসজ্জিত নৌযান নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি ঠোডা গুদারা ঘাট থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে ঘুরে খোলামোড়া ঘাট পর্যন্ত নদীর দুই পাশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ঠোডা ঘাটে এসে সমাপ্ত হয়। নৌ-শোভাযাত্রায় বাউল আবদুর রহমান বয়াতি গান পরিবেশন করেন। ‘দূষণমুক্ত বুড়িগঙ্গা নদী, ঢাকাবাসীর প্রাণের দাবি’ স্লোগানে, দূষণমুক্ত নদীর প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত বুড়িগঙ্গা নদী কার্নিভালে অংশগ্রহণকারীরা ঢাকার প্রাণ এই নদীটিকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

রিভার কার্নিভালের ছবিগুলো তুলেছেন সারাবাংলার স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট সুমিত আহমেদ

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন