বিজ্ঞাপন

হত্যার আসামি চবি শিক্ষক এবার রাষ্ট্রদ্রোহে ‘অভিযুক্ত’

September 12, 2022 | 8:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। চবি’র সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যা মামলার আসামি হয়ে জেল খেটে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

একদিন আগে অভিযোগপত্রটি অনুমোদনের পর সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সেটি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আলী হোসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) পরিদর্শক মোক্তার হোসেন অভিযোগপত্রটি জমা দেন।

উপপুলিশ কমিশনার আলী হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আদালত অভিযোগপত্রটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২৫ অক্টোবর সময় নির্ধারণ করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে সেটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে অভিযোগপত্রের গ্রহণের শুনানি হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সাইয়েন্স: সোসিওলজি অ্যান্ড কালচার নামে এক জার্নালে ‘রিলিজিয়াস পলিটিক্স অ্যান্ড কমিউনাল হারমনি ইন বাংলাদেশ: এ রিসেন্ট ইমপাস’ শিরোনামে আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আনোয়ার হোসেন বিভাগীয় সভাপতি বরাবরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন। এতে তিনি ওই প্রবন্ধ সংযুক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। ওই প্রবন্ধে প্রকাশিত বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ বিষয় নিয়ে দৈনিক ভোরের কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

এর ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১৭ মে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান তানভীর বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে দণ্ডবিধির ১২৩ (ক), ১২৪ (ক), ১৭৭, ৫০০, ৫০১ ও ৫০২ ধারায় মামলার আরজি জমা দেন। বাদী অভিযোগ করেন, প্রকাশিত প্রবন্ধে একাধিকবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হলেও একবারও তিনি জাতির জনক কিংবা বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেননি। এতে জাতির জনকের প্রতি আনোয়ার হোসেনের তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রবন্ধে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিজাব পরিধান, হাটহাজারীর নন্দীরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে ও উপাসনালয়ে হামলা, রামু বৌদ্ধবিহারে সহিংসতা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার চেষ্টার করার অভিযোগও আনা হয় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

মামলার আরজিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত থাকায় আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি নিয়ে এই মামলার এজাহার গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর দুইবছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পাঠানো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ সম্পর্কিত নথি নিয়মিত মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। মামলার তদন্তভার পড়ে ডিবি’র ওপর।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে তার প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তখন ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।

বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন এবং কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন এবং লাশের পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন জানান। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর কবর থেকে লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। পুনঃময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার মৃত্যুকে শ্বাসরোধজনিত হত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।

দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেনকে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জামিনে বের হয়ে তিনি আবারও শিক্ষকতায় ফেরেন। দিয়াজ হত্যা মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।

এদিকে সাংবাদিকদের কাছে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী দাবি করেছেন, প্রকাশিত প্রবন্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হয়, এমন কিছু ছিল না। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে তিনি জানান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন