বিজ্ঞাপন

শিশুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ২ এসআইকে গ্রেফতারের নির্দেশ

September 13, 2022 | 10:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সোনার বারসহ এক শিশুকে আটকের পর চোরাচালানের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো এবং পরবর্তী সময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে সেই অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন এক বিচারক। ওই বিচারকের আদালতে শিশুটি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার পর রায়ের নথি সংযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’

দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- শিশুটির বিরুদ্ধে মামলার বাদী নগরীর পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুবীর পাল।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পতেঙ্গা থানার বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের সামনে থেকে দু’টি সোনার বারসহ ১৭ বছর বয়সী শিশুটিকে আটক করে পুলিশ। পরদিন এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শিশুটির বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (১) ও বি- ধারায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার শিশুটি এক মাস ছয়দিন পর ২৮ মে জামিনে মুক্তি পায়।

ওই মামলা তদন্ত করে এসআই সুবীর পাল ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর উভয় পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে তাদের এজাহার ও তদন্ত প্রতিবেদনের সপক্ষে সাক্ষ্য দেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিচারকার্য শেষে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা শিশুটিকে বেকসুর খালাস দেন। রায়ে উল্লেখ করা পর্যবেক্ষণে বিচারক দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে মিথ্যা অভিযোগে শিশুটিকে গ্রেফতার এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের জন্য অভিযুক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- শিশুটির নিকটাত্মীয় এ এইচ এম সুমন শুল্ক পরিশোধ না করে দুটি সোনার বার বাহরাইন থেকে নিয়ে আসেন। ব্যাগেজ পরিদর্শক সেগুলো আটক করলে সুমন শুল্ক পরিশোধ করে সেগুলো ছাড়িয়ে নেন। এরপর তিনি সেগুলো শিশুটিকে দেন। সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় একটি বার পুলিশকে দিলে তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির মা এতে রাজি না হয়ে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করেন। এসআই আনোয়ার হোসেন সেগুলো আমলে না নিয়ে শিশুটির বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন।

অন্যদিকে, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুবীর পালও একইভাবে বৈধ কাগজপত্র আমলে না নিয়ে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে এসআই আনোয়ারের পক্ষ নিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দু’জনই আবার পরবর্তী সময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।

বিচারক ফেরদৌস আরা ওই পর্যবেক্ষণের আলোকে মিথ্যা এজাহার দায়ের, মিথ্যা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পালের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ও ২১১ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৫ (১) (বি), ২০০ (এএ) এবং ৪৭৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতে প্রমাণ হয়েছে বাদী এসআই আনোয়ার হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুবীর পাল মিথ্যা অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শিশুটিকে এক মাসেরও বেশি সময় কারাবাসে বাধ্য করেছেন। আদালত শিশুটিকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। সেই রায়ের কপি সংযুক্ত করে বিচারক নিজে দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

শিশুটির আইনজীবী আজমল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটকের পর শিশুটির অভিভাবককে পুলিশ প্রস্তাব দিয়েছিল, দুটি সোনার বারের মধ্যে একটি তাদের দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং কোনো মামলা করা হবে না। কিন্তু অভিভাবক রাজি না হওয়ায় শিশুটিকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আদালতের কাছে আমরা এসব বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত শিশুটিকে খালাস দেওয়ার পাশাপাশি দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।’

এসআই সুবীর পালের মোবাইল বন্ধ থাকায় এবং আনোয়ার হোসেন কল না ধরায় তাদের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন