বিজ্ঞাপন

‘ডিজিটাল অ্যাক্টসহ নানা কারণে সাংবাদিকরা চ্যালেঞ্জের মুখে’

September 14, 2022 | 7:26 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাংবাদিকদের যখন গণমানুষের অধিকার আদায়, নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন বা সামাজিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কলম ধরার কথা তখন ৫৭ ধারা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যম ও আমাদের সমাজ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এই সংকটের কথা উঠে আসে। সাপ্তাহিক শীর্ষ খবরের আয়োজনে এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বক্তারা সাংবাদিকতার নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। পাশাপাশি এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে অভিমত প্রকাশ করেন।

শীর্ষ খবরের সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) এর সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিষদ সদস্য শাহনাজ বেগম পলি, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের কোষাধ্যক্ষ কবীর আলমগীর, সারাবাংলা ডটনেটের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক প্রতীক মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাদাকাত হোসেন খান বাবুল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক যুগ্ম পরিচালক হামিদুল আলম সখা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বর্তমানে সাংবাদিকতা করপোরেট ওনারশিপের আওতায় চলে গেছে। তাই আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। কোথায় আমরা গণমানুষের অধিকার আদায়, নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন বা সামাজিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কলম ধরব, তা—না ৫৭ ধারা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কারণে আমরা সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না, কারণ এটি সরকার বিরোধী কোনো পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নয়। বরং সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা কিছু আমলাই আমাদের আওয়াজ বন্ধ করার জন্য সদা তৎপর। আমরা আবারও সাংবাদিকতাকে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় ফিরিয়ে নিতে চাই।’

ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘আমাদের যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন তারা এই সময়ে বেশ সংকটে নিপতিত। স্বার্থান্বেষী মহলের মদদে সাংবাদিকরা আজ বিভক্ত। এটি স্পষ্ট যে, গণমাধ্যম এখন একটি শিল্প। এখানে যার পুঁজি রয়েছে তিনি তার মতো করে একটি স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করছেন। তাই গণমানুষের কথা, নির্যাতনের কথা, সামাজিক নৈরাজ্যের কথা বলা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শত প্রতিকূলতার পরও আমরা আশা রাখি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা তার অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে।’

হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘটনা যা ঘটে, ঘটনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাই নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। যা ইচ্ছা তাই লিখবার দায়িত্ব কিন্তু সাংবাদিকের নয়। চাইলেই যা ইচ্ছা তাই বা অপসাংবাদিকতা করা যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

গোলটেবিল আলোচনায় ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের কোষাধ্যক্ষ কবীর আলমগীর বলেন, ‘বুর্জোয়া বিনিয়োগের কারণে গণমাধ্যম গণমানুষের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর না যতখানি তার থেকে বেশি হয়েছে হাতিয়ারস্বরূপ। এই কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে গণমাধ্যম একটি শিল্প। এটি নিজেদের অসঙ্গতি ঢেকে রাখার শিল্প। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো গণমাধ্যমকে হতে হবে গণমানুষের শিল্প। তাই কালো অর্থনীতির থাবা থেকে গণমাধ্যমকে বেরিয়ে আসতে হলে ব্যক্তি উদ্যোগকে সক্রিয় করার চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টান্ত হতে পারে তৃণমূল সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ। তাকে প্রেরণা হিসেবে নিলেই আমরা অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারব।

সারাবাংলার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক প্রতীক মাহমুদ বলেন, ‘আজকের সাংবাদিকতা অনেকক্ষেত্রে নানারকম লেজুড়বৃত্তিতে দুষ্ট। হয় দলীয় লেজুড়বৃত্তি, করপোরেট লেজুড়বৃত্তি কিংবা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে গণমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই সাংবাদিকতাকে মূল লক্ষ্যের জায়গায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নতুন করে ভাববার সময় এসেছে।’

সভাপতির বক্তব্যে শাশ্বত মনির বলেন, ‘গণমাধ্যম ও আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই আয়োজন। কোনো দেশের জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের যত একক শক্তি আছে তার সবক’টি শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের শক্ত কাঠামো তৈরি হয়। তার মধ্যে স্বাধীন গণমাধ্যম একটি। কাঙ্ক্ষিত সমাজ গঠনে গণমাধ্যম অপরিহার্য, তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অপরিহার্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশের গণমাধ্যম যত শক্তিশালী হবে সে দেশের উন্নয়ন ততটা টেকসই হবে। গণমাধ্যম ও সমাজকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।’

বিজ্ঞাপন

গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ, টেলিভিশন দর্শক ফোরামের প্রেসিডেন্ট এ কে এম জাহিদুর রহমান, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবরের সিনিয়র রিপোর্টার ড. নাজমুল করিম, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবরের সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার আলী রেজা, বাংলাদেশ ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলম ইবনে হাই, পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেডের পরিচালক এ আর মিন্টু, বিসিএস প্রাইম একাডেমির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আউয়াল, অ্যাডভোকেট সানোয়ারা সুলতানা, মো. আবুল হোসেন, মো. কবির হোসেনসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন