বিজ্ঞাপন

রাবার বোর্ডকে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর

September 14, 2022 | 8:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিদেশ থেকে আমদানি কমাতে দেশে মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদনের জন্য ‘বাংলাদেশ রাবার বোর্ডকে’ আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। তিনি বলেছেন, রাবার শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না। সবাইকে একসাথে বসে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। আর এই দায়িত্ব নিতে হবে রাবার বোর্ডকে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত ‘প্রাকৃতিক রাবার ও রাবারভিত্তিক শিল্পপণ্য মেলা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রাবার বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা রাবার বানালেন আর আমরা যারা রাবারের ইউজার, তাদের রাবার আমদানি করে টায়ার বানাতে হলো, এতে লাভ কী হবে! বাংলাদেশটাকে তো বাঁচাতে হবে, না কি বিদেশি টায়ারে দেশ ভরপুর হয়ে যাবে? রাবার বোর্ড গঠন হয়েছে আজ নয় বছর। অনেক শক্তিশালী বোর্ড। কিন্তু স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধি রাখে না। আমি রাবার বাগান মালিকদের প্রতিনিধি রাখতে বললাম, না হলে ওটাও বাদ দিত। যারা রাবারের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী, তাদের মালিক সমিতির প্রতিনিধিকে বোর্ডে রাখেন। তাহলে আমরা আপনাদের মিটিংয়ে থাকতে পারব, নইলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেই এই প্রথম রাবার বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলাম।’

‘রাবার শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অনেক সমস্যার কথা বললেন। কিন্তু এসব সমস্যা তো মেলায় বলে বেনিফিট পাওয়া যাবে না। বেনিফিট পাবার জন্য রাবার বোর্ডকে উদ্যোগ নিতে হবে। আপনারা রাবার শিল্প মালিক সমিতি, বাগান মালিক সমিতি, বিএফআইডিসি, এনবিআর, ট্যারিফ প্রতিনিধিকে ডাকেন, সেমিনার করেন। স্টেকহোল্ডাররা পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে লাভ হবে না। সেমিনারে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। রাবার বোর্ডকে দায়িত্ব নিতে হবে এই সমস্যা সমাধানের। প্রধানমন্ত্রী যদি এত এত সমস্যার সমাধান করতে পারেন, আপনারা একটা ক্ষুদ্র সমস্যার সমাধান করতে পারেন না কেন? আপনি যদি ভাবেন, সমাধান হয়ে গেলে তো আমাদের কোনো লাভ হবে না, তাহলে অন্য কথা। এজন্যই সম্ভবত অনেকে সমাধান চায় না।’

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, ‘একসময় বিএফআইডিসি’র সঙ্গে আমাদের মতভেদ হতো, তখন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের সাথে আমরা বসতাম। আমাদের যুক্তির বিপরীতে তাদের যুক্তি টিকত না। ট্যারিফ কমিশন আমাদের পক্ষে রায় দিত। রাবার বাগান মালিক সমিতি যারা আছেন, তাদেরও দুঃখের কথা শুনলাম। আমার নিজের ছেলেরও রাবার বাগান আছে। আমিও একসময় ২৫ একর জায়গা নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখি এত ভেতরে, রাস্তাঘাট কিছু নাই, শান্তিবাহিনীর উপদ্রব, তখন বললাম, আমার জীবন আগে। অনেকে বিক্রি করে দিয়েছে, আমিও জীবনের ভয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। এরপরও হাল ছাড়িনি। আবার রাবার চাষের দিকে মনযোগ দিয়েছি। রাবার চাষে কি আছে না আছে দেখি, একটু দেখি। যে ব্যবসা করে সে বোঝে কতটুকু জ্বালা।’

স্বাধীনতার পর রাবার দিয়ে পণ্য তৈরির কারখানা দিয়ে ব্যবসা শুরুর কথা উল্লেখ করে বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি ব্যবসায় মন দিয়েছিলাম। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালের দিকে আমি রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পলের কারখানা করেছিলাম। তখন রাবার বিদেশ থেকে আমদানি হতো। আমরা খুচরা বাজার থেকে হাফ টন করে রাবার কিনে কারখানা চালাতাম। এরপর বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা রাবার বিক্রি আরম্ভ করল। আমরা টেন্ডার দিলাম। সাড়ে আট টাকা কেজি, আমরা টেন্ডার করে কিনলাম। সেই থেকে শুরু। মানুষ জানল, বাংলাদেশে রাবার উৎপাদন ও বিক্রি হয়। আমরা দেশি রাবার কিনেছি এবং কাজে লাগিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু কিছুদিন কেনার পর দেখলাম, রাবারের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। দেশি রাবার দিয়ে হাওয়াই চপ্পল বানালে তিন মাস টেকে, আর বিদেশি রাবার দিয়ে বানালে টেকে ছয় মাস। সরকারিভাবে রাবার প্রোডাক্ট করছে, বিক্রি ভালো হচ্ছে, কিন্তু কোয়ালিটির দিকে তারা নজর দিচ্ছে না। আমরা আবার আমদানির দিকে ঝুঁকলাম। তখন আবার মার্কেট প্লাস্টিকের দিকে চলে প্লাস্টিকের হাওয়াই চপ্পলের বাজার তৈরি হলো। রাবার ব্যবসায়ী ৯০ শতাংশ প্লাস্টিকের দিকে ঝুঁকে গেল। আমরা তখন সেটা বাদ দিয়ে টায়ার-টিউবের দিকে চলে আসলাম। তখন টায়ার আসে ভারত অথবা চীন থেকে। বিএফআইডিসিকে বললাম- আপনাদের রাবার যদি ভালো না হয়, তাহলে আমরা আমদানি করতে বাধ্য।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে বিএফআইডিসি, তারপর রাবার বাগান মালিক সমিতি, তাদের থেকে অনেক রাবার কিনেছি, কিন্তু কোয়ালিটি ভালো না। রিকশার টায়ার বেশিদিন যায় না। প্রথমে কোয়ালিটি, তারপর কিন্তু বাজার। বেশিরভাগ বিদেশি রাবার এসে বাংলাদেশ দখল করে ফেলল। আমরা দেশি রাবার দিয়ে সিএনজি টেক্সির টায়ার বানানো শুরু করলাম, হাইস্পিডে চলে, একমাসে টায়ার নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি নিজে দেশে-বিদেশে রাবারের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশিক্ষণ নিলাম। ইন্ডিয়া-চীন থেকে টেকনোলজিস্ট এনে রাবারের কোয়ালিটি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা পরীক্ষা করলাম।’

 

বিজ্ঞাপন

বিএফআইডিসি’র তখনকার কর্মকাণ্ড নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বিএফআইডিসি’র রোলটা ফেয়ার ছিল না। তারা একসময় নিয়ম করেছিল, শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রি মালিক যারা তারা টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। পরে আবার ইন্ডাস্ট্রি মালিকদের বাদ দিয়ে ট্রেডারদের দেওয়ার নিয়ম চালু করল। দেখা গেল, ট্রেডাররা বড় বড় গুদাম বানিয়ে ৫০০-৬০০ টন রাবার নিয়ে রেখে দিত। গুদামে মাল ভর্তি, কিন্তু আমরা মাল পাই না। সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেল। আমরা ইন্ডাস্ট্রি মালিকরা বসলাম। বললাম যে, উনাদের মাল আমরা নেব না। আমরা আবার আমদানিতে চলে গেলাম। গুদামে হাজার টন রাবার পচতে লাগল। পানির দামে তারা বিক্রি করতে শুরু করল। তৃণমূলের যারা কনজ্যুমার তাদের না দিয়ে একটি সিন্ডিকেটকে দিয়ে দুর্নীতির একটা আখড়া বানানো হয়েছিল।’

মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মন্ত্রী আছি, ঠিক আছে, জনগণের কাজ করছি। কিন্তু আয় না করলে তো পেটে ভাত জুটবে না। সেজন্য ছেলেরা এখন ব্যবসা করে। এখন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি, বস্ত্র ও পাটশিল্পে আছি। সবচেয়ে হাইয়েস্ট রেমিট্যান্স কিন্তু আসে বস্ত্রশিল্প থেকে। ২৫টা পাটকল বন্ধ করে দিয়েছি। ক্রমাগত লোকসান করতে করতে পাটকলগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মিলগুলো বন্ধ করে লিজের মাধ্যমে ভাড়ার সিস্টেমে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে আমাদের লস করার কোনো সুযোগ না থাকে।’

বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিটির সভাপতি মুহাম্মদ হারুন, ওয়েলকাস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আরিফ হাসনাইন বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর এই মেলা শুরু হয়, যাতে অংশ নিয়েছে গাজী রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্টসহ এ খাতের ১৫টি প্রতিষ্ঠান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন