বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার জন্মদিন: বাঙালি জাতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ

September 27, 2022 | 8:19 pm

সৈয়দ ফারুক হোসেন

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী। তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেতা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দশটি দেশের একটি। ৮৮ শতাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র। বৈদেশিক সাহায্যের নির্ভরতাও ছিল ৮৮ ভাগ। বাংলাদেশ টিকে থাকবে কি না, এ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ হলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ। বঙ্গবন্ধু ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে শূন্য হাতে সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সাল থেকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। এ নির্মাণযজ্ঞ চলার মধ্যেই কানাডার ফেডারেল কোর্টের রায়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সরকার সাত বছরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দূরদর্শী নেতা। প্রমত্ত পদ্মা নদীর ওপর সেতু একটি নির্মাণ করে বিশ্ববাসীকে প্রমাণ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়লেই বোঝা যাবে যে এই উন্নয়নের অগ্রপথিক বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যতবারই ক্ষমতায় এসেছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আধুনিক ডিজিটাল বাংলার রূপকার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতির চরম শিখরে দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে বহুগুণ এগিয়ে রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। নিভৃত এই পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। এই বিশেষ মর্যাদায় মহীয়সী নারীর মাতার নাম বঙ্গবমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সস্তান। কারাবন্দী পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেন তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রাজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নব পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন জননেত্রী শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন তা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। মেধা-মনন, সততা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরান তেলওয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন কয়েকবার। ছোট বোন শেখ রেহানার হাসু আপা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কেবলই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা জাতির জন্মদাতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে- বাংলার প্রতিটি মানুষের জন্য আধুনিকতম জীবনযাপন নিশ্চিত করা। জাতি হিসেবে বাঙালি সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানে বিশ্বে এক আদর্শ জাতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হবে। তিনি নতুন আগামীর পথ রচনা করেছেন, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে, শুধু মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াই নয় আমাদের সুদূর আগামীর ভিত্তি রচনা করেছেন, তাই ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশের ছবি এঁকে দিয়েছেন জাতির হৃদয়ে। পিতার মতো হিমালয়সম আত্মবিশ্বাস তাঁকে শত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে শিখিয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেনও, আমরা ক্ষমতায় থাকলে আনি পুরস্কার। দেশবাসী এর সত্যতা সবসময় পেয়েছে, মানুষ সুফল উপভোগ করছে। তিনি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, যে কোনও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় জনগণই আমার শক্তি। কাজেই, যে চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, তা মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। শুধু দেশের উন্নয়নই নয় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার ভূমিকা আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। তিনি মানবতার অনন্য প্রতীক। জাতিসংঘের ৭১ তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বিশ্বকে সংঘাত দূর করে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়, য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, বর্তমানে বিচারের রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে চলছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন বন্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তো রয়েছেই পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে। এমনকি আর্ন্তজাতিক মহল থেকে চাপ দেওয়া হয় যাতে রায় কার্যকর না করা হয়- এ সবই তিনি সততার শক্তিতে সামাল দিয়েছেন। শেখ হাসিনাই পেরেছেন কঠিন চাপ উপেক্ষা করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা, প্রযুক্তি ছোঁয়ায় প্রত্যন্ত ঘরে বসে পৃথিবীর সব খবর পাচ্ছে এদেশের মানুষ, প্রয়োজনীয় কাজও সারছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এই নতুন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রী হিসাবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে তদানীন্ত পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর শঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলিতেই, কারাবন্দি পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় বাঙালি জাতির ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকহানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যায় তখন বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দি থাকাবস্থায় শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তার কন্যা সস্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জন্ম লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসনে। পুরানো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। এ সময় শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেছে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে, দেশের উন্নয়ন করেছে, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বও এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বিষাদ ছেঁয়ে ফেলে তাদের জীবন, নিমিষেই হয়ে যান এতিম, আত্মীয় পরিজনহীন, দেশ ফিরতে তাদের বাধা দেওয়া হয়। প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে দুর্দশায় বিদেশে থাকতে বাধ্য হন ৬ বছরের জন্য। বেদনার ক্ষত চিহ্ন তাদের গ্রাস করে কিন্তু দমে যাননি তারা। মানুষের ভালোবাসার শক্তিকে সম্বল করে ফিরে আসেন দেশের মানুষের কাছে ১৯৮১ সালে। তারপর থেকে বন্ধুর পথ চলা। পিছপা হননি কোনদিন। শেখ হাসিনা যেন অদম্য, কেউ তাঁকে নিরন্ত করতে পারেনি অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রাম থেকে। দলকে শক্তিশালী করেন। মানুষের আস্থা অর্জন করেন। তারপর ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা, ইতিহাস বিকৃতি হত্যার রাজনীতি অতিক্রম করে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে জনগণের রায়ে সরকারে আনেন। আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ- এ যেন অন্য বাংলাদেশ, এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের পথে, মানুষ আবার বাঁচতে শেখে, স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।মানুষের পাশে থেকে, অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিচল থেকে শেখ হাসিনা গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন, শত বাধা আসলেও অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথ ও সংগ্রামের পথ ছাড়েননি।

আওয়ামী লীগের হাল ধরে পিতার সুযোগ্য কন্যা হিসেবে তিনিও মানুষের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা, যতো কাটবে তত আলোকরশ্মি বের হয়ে জাতিকে আলোকিত করবে। তাঁর কল্যাণে প্রতিটি সেক্টরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতি স্থিতিশীল, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয়, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সব ধরনের আর্থ-সামজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শুধু পদ্মা সেতু নয়, হচ্ছে দুটো বৃহৎ গভীর সমুদ্রবন্দর। দেশের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত গড়ে তোলা হচ্ছে শক্তিশালী রেল নেটওয়ার্ক। বন্দরকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক আমদানি-রফতানির কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হচ্ছে ৫৫টি সরকারি ও ১১টি বেসরকারি ইকোনমিক জোন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট ফুঁড়ে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, যা একাই জোগান দেবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রফতানি। ১৩ হাজার একরেরও অধিক ভূমি নিয়ে গড়ে উঠছে এক বিস্ময়। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে। শেষ হলে এটাই হবে এশিয়ার সেরা বিমানবন্দরগুলোর একটি। সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি বিমানবন্দরকে দেখা যাবে ঢাকার কুর্মিটোলায়। স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। একাধিবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৮৮-এর ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে বাঁচিয়েছিলেন। সেদিন একটা কিছু হয়ে গেলে আজকের এই জেগে ওঠা বাংলাদেশ আমাদের কাছে অধরাই থেকে যেত। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত, প্রবৃদ্ধি ৮.১ শতাংশ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেটাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, স্বাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালউত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।এটা কোন গল্প নয় এটা একটি সত্যি কাহিনী যা সমগ্র পৃথিবীর বুকে ইতিহাস হয়ে রবে সে হলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি একজন সাহসী বাবার মহীয়সী কন্যা। যার বাবা অনেক কষ্ট করে একটা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আরও দীর্ঘ হউক আপনার যাত্রা। আরও এগিয়ে যাক প্রাণের বাংলাদেশ। সমগ্র বাঙালি জাতি শান্তির অগ্রপথিক প্রিয় নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছে। ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের প্রাণ কান্ডারি, গণমানুষের ভরসাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে সমগ্র বাঙালি তাদের অন্তর থেকে অফুরান শুভেচ্ছা, অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন