বিজ্ঞাপন

দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য

September 27, 2022 | 9:37 pm

তাপস হালদার

২৮ সেপ্টেম্বর, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন কলকাতার প্রখ্যাত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ’৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আজিমপুর স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে যোগ দেন। ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে ছাত্র বিক্ষোভে প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দেন। ’৬৬-৬৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে বদরুনেচ্ছা) ছাত্রী সংসদে সহ-সভাপতি (ভি.পি) নির্বাচিত হন। ’৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে গৃহবন্দি ছিলেন পুরো নয় মাস।

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটিয়ে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জার্মানিতে অবস্থানের কারণে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।তখন দীর্ঘ ছয় বছর ভারতে নির্বাসনে থাকতে হয়। জিয়াউর রহমান দেশে গনতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে। ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধংশ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। দেশে ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার কিংবা ভয় দেখিয়ে জিয়াউর রহমান দল ভাঙ্গনের খেলা শুরু করে। আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা দেয় অন্তর্দ্বন্দ্ব, দলকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে ভারতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনাকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ১৯৮১ সালের দলীয় কাউন্সলে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। জিয়াউর রহমান সরকারের ভয়-ভীতি রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। শুরু হয় রাজনীতির নতুন জীবন।

সেনাবিদ্রোহে জিয়ার মৃত্যু। আরেক সেনাশাসক এরশাদের ক্ষমতা দখল। এরশাদের বিরুদ্ধে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারও শেখ হাসিনাকে তিনবার গ্রেফতার করে গৃহবন্দি করে রাখলেও আন্দোলন থেকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলনের পর স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। কিন্তু ’৯১ সালের নির্বাচনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে খালেদা জিয়া জয়ী হয়, গনতন্ত্র আবার হোঁচট খায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পাঁচ বছর পর খালেদা জিয়ার পতন হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসাধারণ কিছু কাজ করেছেন। প্রথমবারের মতো দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভারতের সাথে গঙ্গার ঐতিহাসিক ত্রিশ বছর মেয়াদী পানিচুক্তি, পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি চুক্তি, দেশে প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশে উন্নীত করা, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা অর্জন করা তার মধ্যে অন্যতম।

২০০৯ সাল পুনরায় জয়লাভ করে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ।আর সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। টানা একযুগের শাসনামলে বাংলাদেশে এসেছে আমূল পরিবর্তন। দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত বিষয় গুলো নিষ্পত্তি করতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারতের সাথে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেন। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ‘মানবতার মা’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর মনোভাবের কারণে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয় জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ‘বঙ্গবন্ধু-২’ স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে তথ্য প্রযুক্তি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সুচিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

একযুগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গ্রামীন কর্মসংস্থানে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সামগ্রিক দারিদ্র বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প সহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে লক্ষ লক্ষ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মান হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মান, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন সহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। সারা দেশে একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মানের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের দশ বছরের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যদা লাভ করে বাংলাদেশ। ২০০৮-০৯ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৭০৩ মার্কিন ডলার। আর বর্তমানে মাথাপিছু আয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে। বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হওয়া।

এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে শেখ হাসিনাকে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে, তবে তিনি তো দমবার পাত্র নন। তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কম করে হলেও ১৯ বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি আরো কঠিন মনোবল নিয়ে ফিরে এসেছেন এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেখানে অন্যায় সেখানে রুখে দাঁড়ানোই তার স্বভাবজাত ধর্ম। কবি নজরুলের ভাষায় যেন বলে উঠেন, ‘বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত, আমি সেই দিন হবো শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না। অত্যাচারী খড়ক কৃপাণ ভীমরণ ভূমে রনিবেনা।’

বিজ্ঞাপন

নিন্দুকেরা পরিবারতন্ত্রের কথা বলে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে রাজনীতি থেকে মাইনাসের ষড়যন্ত্র করেছিল। রাজনীতির পাঠশালা হলো ছাত্র রাজনীতি। তিনি উত্তাল দিনগুলোতে ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে পরিবারকে দূরে রেখে দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন। দীর্ঘ ২১ বছর স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বন্দুকের নল কিংবা গুহার ভিতর থেকে বেড়িয়ে এসে ক্ষমতায় বসেন নি। এদেশের রাজনীতির কঠিন পরিস্থিতি গুলো মোকাবেলা করেই আজকের সফল রাষ্ট্র নায়ক হয়েছেন।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক সময়ের তলা বিহীন ঝুঁড়ি, শেখ হাসিনার ছোঁয়ায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সমৃদ্ধ উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। তিনি এখন শুধু মাত্র বাংলাদেশেরই নেত্রী নন, তিনি এখন বিশ্ব নেত্রী। শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ধন্য। শেখ হাসিনা যেমন নিষ্ঠাবান ধার্মিক, তেমনই অসাম্প্রদায়িক। তার বিজ্ঞান মনস্ক জীবনশৈলী তাকে করেছে অগ্রসর রাষ্ট্র নায়ক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায়।

শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আপনার জন্মদিনে অবনতমস্তকে জানাই প্রণতি।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন