বিজ্ঞাপন

২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

October 3, 2022 | 5:16 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রকাশিত সংবাদের জেরে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক প্রণব বল এবং সারাবাংলার বিশেষ প্রতিনিধি রমেন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। সম্প্রতি ‘ঢাকাপ্রেসডটকম’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে এই দুই সংবাদকর্মীর নাম ও ছবি উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ভূমিদস্যুদের সঙ্গে তাদের ‘সম্পৃক্ততার’ তথ্য ছড়ানো হয়।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সিইউজে’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইফতেখার ফয়সালের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অপপ্রচার অব্যাহত থাকলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে।

সিইউজে’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদে কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা সংগঠন সংক্ষুব্ধ হলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ আছে। এছাড়া প্রেস কাউন্সিলেও সংক্ষুব্দ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান প্রতিকার চাইতে পারেন। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের জেরে সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেইজ থেকে সিইউজের দুই সদস্য প্রণব বল ও রমেন দাশগুপ্তকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে নানা আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করছে একটি মহল। পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়ে এ ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও মানহানিকর অপপ্রচার কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অপপ্রচারের নেপথ্যে কারা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তা খতিয়ে দেখা উচিত। অপপ্রচার অব্যাহত থাকলে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এর জবাব দেবে। রাষ্ট্রের উচিত সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজ করতে দেওয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান যেভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবা শুরু করেছে, তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনবে না।

বিজ্ঞাপন

গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিটে ‘DhakaPress.com’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্তের ছবি ও নাম উল্লেখ করে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ভেতর আরেক সন্ত্রাসী রাজ্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর। রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ড্রোন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নিজস্ব জ্যামার। রোহিঙ্গাদের থেকে সংগ্রহ করা হয় আধুনিক অস্ত্র। সরকারি খাস জমি বিক্রি করে কামাচ্ছেন কোটি টাকা। নেপথ্যে রয়েছেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী, আইনজীবী সমিতি, স্থানীয় সাংবাদিকবর্গ। চক্রঃ ০৩ রমেন দাশগুপ্ত ,জেলা প্রতিনিধি, সারাবাংলা ডটনেট।’

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিটে একই ফেসবুকে পেইজে সাংবাদিক প্রণব বলের ছবি ও নাম উল্লেখ করে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, ‘চট্রগ্রামের ভূমিদস্যুদের বাঁচাতে মরিয়া প্রথম আলো, নিয়মিত মিথ্যাচার প্রশাসনের বিরুদ্ধে। হোতাঃ ০৬ প্রণব বল, প্রথম আলো।’ একই পোস্টে আরও বলা হয়, জঙ্গল সলিপুর ও আলীনগরের ভূমিদস্যু অপরাধীদের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আঞ্চলিক সংবাদ প্রতিবেদকরা। এর মধ্যে একজন প্রথম আলোর আঞ্চলিক প্রতিনিধি প্রণব বল। তিনি নিয়মিত মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন ভূমিদস্যুদের থেকে। তার দায়িত্ব মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করা ও প্রশাসনকে বিব্রত করা। পূর্বে জেলা প্রশাসক নিয়ে মিথ্যা খবর প্রকাশ করে ভূমিদস্যুদের নিকট থেকে পেয়েছেন বিশাল অংকের টাকা।’

একই ফেসবুক পেইজে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম এবং সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিনের নাম ও ছবি দিয়ে ‘ভূমিদস্যু চক্রের হোতা’ উল্লেখ করে একাধিক পোস্ট দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সমিতির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন দোয়েল বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আরজিতে ফেইসবুক পেইজের লিংক উল্লেখ করে ‘ঢাকাপ্রেসডটকম’কে মূলত অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া ফেসবুকের লিংক উল্লেখ করে কাজী কমলা তানিয়া ও ওবায়দুর রব কয়েস নামীয় আরও দু’জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত মামলা গ্রহণ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা এর চেয়ে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পূর্ব কোনো বিরোধ ছিল না, বর্তমানেও নেই। মূলত চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সমিতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কিছু অবৈধ কর্মকাণ্ডে জেলা আইনজীবী সমিতি কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। এতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমিতির দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত অনলাইন পেইজের মাধ্যমে সমিতির ১২৫ বছরের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ‘ভূমিদস্যু, জবরদখলকারী ও প্রতারক’ উল্লেখ করে মানহানিকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

একই ফেসবুক পেইজে প্রণব বলের বিরুদ্ধে দেওয়া পোস্টেও জেলা প্রশাসক নিয়ে মিথ্যা খবর প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নিয়ে সারাবাংলায় একটি সংবাদ প্রকাশের পর থেকে রমেন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধেও একই ধরনের প্রচারণা শুরু হয়।

উল্লেখ্য, নগরীর কেন্দ্রে লালদিঘীর পাড়ের দক্ষিণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পাহাড়, যেখানে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও আছে, সেই পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে।

এর পর গত জুলাইয়ে সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ে পাঁচটি মৌজায় প্রায় ৩১০০ একর সরকারি খাসজমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ করতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসকের কয়েক দফা সংঘাত হয়েছে। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সলিমপুর থেকে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকারি খাসজমিগুলো উদ্ধার করে সেখানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবীদের সঙ্গে বিরোধ হলেও আদালতের পাহাড়কে ‘জঞ্জালমুক্ত’ করার উদ্যোগে বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়ান জেলা প্রশাসক। সলিমপুর নিয়ে জেলা প্রশাসকের অবস্থানকেও ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।

কিন্তু এর মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা প্রশাসক মোহাম্ম মমিনুর রহমানের একটি কর্মকাণ্ডে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ওইদিন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থীর বিজয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে।

মোনাজাতের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে বাম পাশে এবং সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে ডান পাশে বসিয়ে উপস্থিত দলটির নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সেজন্য বিএনপি-জামায়াতের দোয়া কামনা করেন। মোনাজাত ও জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের ভিডিও এবং ছবির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলায়। পরবর্তী সময়ে প্রথম আলোসহ আরও বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদটি প্রকাশ করে। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে সেই স্থলে বসিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করায় ভূমিদস্যুদের পৃষ্ঠপোষকদের ইন্ধনে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাকে বদলির চক্রান্ত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা, এনজিও, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ কয়েকজন রাজনীতিক, ক্রীড়া সংগঠক, সাংবাদিক নেতাদের একাংশ মাঠে নামেন। তাদেরও একই মত, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই গত ২৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোয় ‘প্রথমে ব্যর্থ, পরে কৌশলে ইজারা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রণব বলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীতাকুণ্ডের তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের কেওড়াবনের পাঁচ একর ভূমি তাদের না জানিয়ে কোহিনূর স্টিল নামে একটি জাহাজভাঙা কারখানাকে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এরপর ‘ঢাকাপ্রেসডটকম’ নামে অনলাইন পেইজ থেকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সংবাদপত্র, সাংবাদিক এবং একজন জনপ্রতিনিধির নাম-ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া মেলেনি। হোয়াটস অ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়ে কল দিলে তিনি বারবার কেটে দেন।

জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলামকে মোবাইলে কল দেওয়া হলে কেটে দিয়ে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে খুদেবার্তায় জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন