বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়া পরিবর্ধন প্রকল্পে ধীরগতি

October 13, 2022 | 10:44 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি। চতুর্থবারের মতো আরও একবছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। শুরু থেকে গত ৪ বছরে গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে খরচ হয়েছে ১১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩২.৩১ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪২ শতাংশ। এটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ও বিভিন্ন হলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কাজ’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র। এ অবস্থায় এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ৩টি শর্তে অনুমোদনের সুপারিশ দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ একবছর। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। তৃতীয়বার সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর চতুর্থবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী পলাশ হল, মাশরুম হল, ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়া, সচিব সভাকক্ষ, কেবিনেট হল লাউঞ্জের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। এই কক্ষগুলোতে নিয়মিত বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয় না।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়া এগুলো সংস্কারের জন্য কি ধরনের ফিটিংস ব্যবহার হবে তার নমুনা এবং বিভিন্ন আসবাবপত্রের নমুনা ও ডিজাইন প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে সরবরাহ করতে হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হাইলি সিকিউর এরিয়া হওয়ায় কাজ করার জন্য শ্রমিকদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেওয়া ছাড়া কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যেই কাজ করা যায়নি, বলে জানান এই কর্মকর্তা।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (আইসিসি) শাপলা হল (পুরাতন সংসদ হল), রেড ব্লক, সচিব ব্লক ও মন্ত্রী ব্লক ১৯৬২ থেকে ৬৪ সালে নির্মিত। আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রশাসনিক ব্লক ১৯৭৩ থেকে ৭৪ সালে নির্মিত। প্রশাসনিক ব্লকের নিচতলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন সুবিধাভোগী দর্শনার্থীদের খাবারের জন্য একটি জেনারেল ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে।

পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত ক্যাফেটেরিয়াটি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় এটির ভেতরের ফ্লোর, ওয়াল, সিলিং বিবর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরের খাবার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক মানসম্পন্ন নয়। আইসিসির শাপলা হলটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। শাপলা হলটি বর্তমানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া শিমুল হল, মাশরুম হল, পলাশ হল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র, আইসিসি প্রশাসনিক ব্লকের অফিস কক্ষগুলো, আইসিটি ব্লক, সচিব সভাক্ষ, কেবিনেট হল লাউঞ্জ এবং বিভিন্ন ব্লকের ছাদেও প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন হল, সম্মেলন কক্ষ ও ভিআইপি কক্ষগুলোর আসবাবপত্র ১৯৮৭ থেকে ৮৮ সালে সংস্কার কাজ চলাকালে সরবরাহ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আসবাবপত্রগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কার্যালয়ের বিভিন্ন করিডোর ও স্থানে পেইন্টিংস ও টেরাকোটা স্থাপনের চাহিদা রয়েছে।

সেজন্য এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেওয়ায় হয়। সে সময় পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেন প্রকল্পটি। পরবর্তীতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে দেরি এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ ৩ দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ১ হাজার ২৭৫ বর্গমিটার শাপলা হলের সংস্কার কাজ, ৩৭০ বর্গমিটার পলাশ হলের, ৫১৪ বর্গমিটার মাশরুম হলের, ৫৭ বর্গমিটার শিমুল কল-অন রুমের, ২৩২ বর্গমিটার জেনারেল ক্যাফেটেরিয়ার, ২৪২ বর্গমিটার ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ার, ১০০ বর্গমিটার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রের, ১৭০ বর্গমিটার আইসিসি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লকের অফিস কক্ষ গুলোর, ১২১ বর্গমিটার আইসিটি ব্লকের, ১২২ বর্গমিটার সচিব সভা কক্ষের, ১২৫ বর্গমিটার কেবিনেট হল লাউঞ্জের, এক হাজার ৯৫১ বর্গমিটার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন ব্লকের ছাদের সংস্কার, ২ হাজার ৫৯৬টি আসবাবপত্র, ২ হাজার ৯০৩ বর্গমিটার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রতিস্থাপন কাজ, ২০০ বর্গমিটার টেরাকোটা সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজ, ১০০ বর্গমিটার পেইন্টিংস সরবরাহকরণ, ১২০ বর্গমিটার ২টি স্টোর এবং ২৬০ বর্গমিটার ব্যাংককুয়েট হল নির্মাণ কাজ করা হবে।

প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধিও কারণ প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এ অনুমতি পেতে দেরি হয়। তাই যথাসময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্থা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কাজ শুরু করা সম্ভব হয় না এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।’

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আইএমইডির ৩ শর্তের মধ্যে রয়েছে- প্রস্তাবিত বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজগুলো যেমন- পলাশ হলের পরিবর্তন কাজ, মাশরুম হলের ,ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ার পরিবর্তন, সচিব সভাকক্ষের পরিবর্তন, কেবিনেট হল লাউঞ্জের পরিবর্তন, ফার্নিচার সরবরাহকরণ কাজ, টেরাকোটা সরবরাহ, পেইন্টিংস এবং ব্যাংকুয়েট হল নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। প্রস্তাবিত কাজগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পিএসসি, পিআইসি এবং এডিপি রিভিউ সভায় পর্যালোচনা করা সমীচীন হবে।

এমটিবিএফ মন্ত্রণালয় হিসাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটি সমাপ্তির জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার জন্য উদ্যোগ নেবে। বরাদ্দ অনুসারে সব প্রকল্পের আওতায় অর্থ ছাড় ও ব্যয় নিশ্চিত করবে। কোন অঙ্গের ব্যয় যেন প্রকল্প দলিলে নির্ধারিত প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি না হয়।

আইএমইডির সচিব আবু হেনা মো. মোর্শেদ জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুধু শর্ত দিয়েই দায়িত্ব শেষ করি না। এগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা সেটি নিয়মিত তদারকি করা হয় থাকে। প্রয়োজনে বারবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দেওয়া হয়ে থাকে।’

সারাবাংলা/জেজে/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন