বিজ্ঞাপন

ফারমার্স ব্যাংকে টাকা, সংকটে পিডিবি

April 27, 2018 | 6:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বহুল আলোচিত ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রেখে চরম সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অর্থের যোগান না থাকায় চলতি সেচ এবং গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি তেল কিনতে বিপাকে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফারমার্স ব্যাংকের দু’টি শাখায় থাকা প্রায় ৬০ কোটি টাকা তুলতে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। ব্যাংক থেকে পিডিবিকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকের তারল্য সংকট থাকার কারণে এই মুহূর্তে কোনো আমানতই নগদায়ন করা যাচ্ছে না। পিডিবি সার্বিক অবস্থায় জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে টাকা তুলতে সহায়তা চেয়েছে।

পিডিবি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যুতের জন্য তরল জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবিকে প্রতি মাসে প্রচুর টাকার যোগান দিতে হয়। আমরা ফারমার্স ব্যাংকের দু’টি শাখায় স্বল্প মেয়াদে ৫টি স্থায়ী আমানত হিসাব খুলে টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনের সময় একাধিকবার চিঠি দেওয়ার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা নগদায়ন করতে পারবে না বলে জানায়। এই অবস্থায় আমরা টাকা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ফারমার্স ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ ও ২৫ জুন তিনটি হিসাব এবং গুলশান করপোরেট শাখায় একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ৩১ মে দু’টি স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা হয়। গুলশান করপোরেট শাখায় রাখা টাকা থেকে গ্রীষ্ম মৌসুমে তেল কেনা, ইসিএ ঋণ পরিশোধ, আইপিপি ও রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের ঋণ পরিশোধ করার পরিকল্পনা ছিল। আর ইমামগঞ্জ শাখার তিনটি স্থায়ী আমানত থেকে পিডিবি’র নিজস্ব অন্যান্য তারল্য সংকট মেটানোর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ব্যাংকটিতে থাকা কোনো হিসাব থেকে টাকা না পাওয়ার কারণে জ্বালানি তেল কেনা এবং অন্যান্যখাতে ভয়াবহ আর্থিক তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ পাওয়া না গেলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

ওই কর্মকর্তা জানান, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে এই সময়ে চাহিদা মেটাতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা না গেলে লোডশেডিং বেড়ে যাবে। এই সময় জ্বালানি তেল ও পাইকারি বিদ্যুৎ কিনতে সবচেয়ে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। এখন আর্থিক সংকটের পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সরকরাহ ঠিক রাখা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকারের লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিডিবি এক নম্বর অবস্থানে আছে। মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হলে আয় হয় দুই হাজার ২শ’ কোটি টাকার বেশি না। এই হিসেবে প্রতি মাসে পিডিবি’র সাড়ে তিন শ’ থেকে চার শ’ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। আর গ্রীষ্ম মৌসুমে এই লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে ফারমার্স ব্যংকের টাকা এই মুহূর্তে ‘অতি প্রয়োজন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘অতি প্রয়োজন’ কেন উল্লেখ করতে গিয়ে পিডিবি এক বোর্ড সদস্য জানান, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। প্রাথমিক জ্বালানির অভাব এবং বেশ কিছু কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। জ্বালানি তেল ছাড়া গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও গ্যাসের সংকটের কারণে পুরো দমে চালানো যাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জ্বালানি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জ্বালানি তেল কিনতে নগদ টাকা।

এ বিষয়ে কথা বলতে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুর অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সারাবাংলা/এইচএ/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন