বিজ্ঞাপন

এনআইডি সরকারের কাছে গেলে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমবে: সাবেক ৩ সিইসি

October 19, 2022 | 10:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের থেকে সরকারের হাতে স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছেন সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তাদের এই ব্ক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছন বর্তমান সিইসিসহ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবরা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশনের হাত ধরে তৈরি এই এনআইডির নিয়ন্ত্রণ ইসির অধীনে রাখতে হবে উল্লেখ করে তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের হাত ধরেই জাতীয় পরিচয়পত্র এসেছে। এটি তাদের হাতেই থাকা উচিত। এটি সরকারের কাছে গেলে ভোটার তালিকা নিয়ে সমস্যা হবে। একটি গণ্ডগোল লাগবে। মানুষের ভোটার হওয়ার আগ্রহ থাকবে না।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিয়ে অংশ নিয়ে সাবেক একাধিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিভিন্ন কমিশনার এ সব কথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ, কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা। এ ছাড়াও এতে সাবেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, শাহ নেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, সাবেক ইসি ড. মুহম্মদ সাদিক, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, হেলালুদ্দীন আহমেদ, এম এ রেজা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও জেসমিন টুলী অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

এনআইডি সেবা সরকারের কাছে স্থানান্তর প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিভিন্ন অফিসে থাকতে পারে। এতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু এর প্যারেন্ট, সুতরাং মূলটা তারাই ইনিশিয়েট করবে। এটি তাদের কাছে না থাকলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যদি দেখেন এনআইডিতে একটি ভোটার লিস্টে অন্যটা তখন আরেকটা গণ্ডগোল লাগবে। আমার কথা হলো বেইজটা ইসির হাতে থাকবে। অন্যদের লাগলে সেটি নেবে।’

একই প্রসঙ্গে সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ভোটার তালিকা থেকেই এনআইডি এসেছে। এটি ইসির কাছে থাকা উচিত। এনআইডি ইসির কাছে না থাকলে লোকজন ভোটার হতে চাইবে না। মানুষের ভোটার হওয়ার অতটা আগ্রহ নেই। এখন এনআইডির জন্যই ভোটার হতে আগ্রহ বেশি। এই অ্যাডভানটেন্সটা এখান থেকে সরানো উচিত হবে না। এতে গণ্ডগোল হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এনআইডিতে কোনো দুর্বলতা থাকলে তা সঠিক করা যেতে পারে। এটিকে আরও মজবুত করা উচিত। ইসির অনেক বড় ডাটাবেজ আছে এবং সেটি সুরক্ষিত আছে। এটি ভালো সিস্টেম হয়ে আছে।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘এনআইডি নির্বাচন কমিশনের তৈরি একটি জিনিস। এটি নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলে সরকারের কোনো অসুবিধা হয় না। এনআইডির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন, ভোটার তালিকার পুরোপুরি সম্পর্ক রয়েছে। এটাকে মাঝখান থেকে নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে অসুবিধা হবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এনআইডি টা এখানেই থাকা প্রয়োজন-এক বাক্যে সবাই একথাটা বলেছেন। ওনাদের যে নলেজ রয়েছে আমার সেটি নেই।’

অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নির্বাচন কমিশন থেকে সরকারের হাতে গেলে গণ্ডগোলের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরকার কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়। এতগুলো বছরে একটি সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করেছে। এটা যদি আলাদা হয় ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা উঠবে। প্রশ্ন আসবে কোনটি ঠিক? ভোটার তালিকা ঠিক না এনআইডি ঠিক?’

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এনআইডি ইসি থেকে আলাদা করা হলে ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা উঠবে। প্রশ্ন আসবে কোনটি ঠিক? ভোটার তালিকা ঠিক না এনআইডি ঠিক? আপনি এনআইডির নাম পরিবর্তন করলেন, বয়স পরিবর্তন করলেন, তখন ভোটার লিস্টের কী হবে? আল্টিমেটলি এটি নিয়ে একটি গণ্ডগোল হবে। কারও যদি এনআইডিতে বয়স ৩০ উল্লেখ থাকে সে যদি ভোটার তালিকায় এসে ভোটার ১৯ করে, তখন কী হবে? কোনটা সঠিক হবে?’

বিজ্ঞাপন

এনআইডি ও ভোটার তালিকা আলাদা রয়েছে বিশ্বের এমন একাধিক দেশের সঙ্গে তার কথা হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই কমিশনার বলেন, ‘যে সব দেশে এটি আলাদা আছে, সেখানে ভোটার লিস্ট নিয়ে গণ্ডগোল হচ্ছে।’

‘ইসিকে বলেছি এই জায়গাটাতে সরকারকে বোঝাতে হবে। আল্টিমেটলি সরকার চাইলে- লেট দেম… তারা চাইলে আলাদা করে করতে পারে। ‘আমাদের করণীয় কী আছে’ এমনটি না বলে সরকারকে বোঝাতে হবে। সরকারকে বোঝালেও তো বোঝে। এই সরকারের সময়ও তো আমার ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিলাম। এর মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে। এখন তারা হঠাৎ এনআইডিটা কেন নিতে চায়? এর কোনো বোধগম্য উত্তর নেই।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পর ওই বছরের ২০ জুন সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইসিকে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেয়। তবে শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বিরোধিতা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে গত ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২২’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। আইনটি সংসদে পাসের পর শেষ হবে সব প্রক্রিয়া।

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন