বিজ্ঞাপন

ক্যাঙারুর সঙ্গে এলো ‘উটের নিকটাত্মীয়’, পথে আছে সিংহ

October 21, 2022 | 5:03 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাহাড় আর গাছগাছালির ছায়ায় গড়া নতুন আবাস। নতুন পরিবেশে নতুন প্রাণী ‘উটের নিকটাত্মীয়’ লামা। ছয়টি লামার মধ্যে দু’টি ঘুরছে-ফিরছে খাঁচার ভেতর, চারটি বিশ্রাম নিচ্ছে। অন্যদিকে ছয় ধূসর ক্যাঙারুও অতিথি হয়ে এসেছে পাশের আবাসে। ভ্রমণে ক্লান্ত ক্যাঙারুগুলো ঘুমাচ্ছিল, মাঝে মাঝে অবশ্য দু’য়েকটি উঠে এসে উঁকি দিচ্ছিল খাঁচার বাইরের দিকে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এই চিত্র দেখা গেছে। লামা’র বাড়ি দক্ষিণ আমেরিকায়। ধূসর ক্যাঙারুর পিতৃভূমি অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের (বন্দী প্রজনন) মাধ্যমে জন্ম নেয়া এসব প্রাণী আনায় হয়েছে নেদারল্যান্ডস থেকে। চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রথমবারের মতো এসেছে এই দুই প্রজাতির প্রাণী। আর তাদের দেখতে সকাল থেকেই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসবে এক জোড়া সিংহসহ আরও বিভিন্ন প্রাণী।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৫টায় তিন জোড়া করে ক্যাঙারু ও লামা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এসে পৌঁছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে এসব প্রাণী ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। রাত ৮টায় গাড়িতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ভোরে চট্টগ্রামে পৌঁছে। এক কোটি ৬৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় ফ্যালকন ট্রেডার্স নামে একটি বেসরকারি প্রাণী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য এসব প্রাণী এনেছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, লামা ও ক্যাঙারু উভয় প্রাণীর মধ্যে দুইটি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী প্রজাতির। চিড়িয়াখানার নিজস্ব অর্থায়নে গত আগস্টে সিংহ, রেড অ্যান্ড গ্রিন ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙারু এবং লামা প্রাণী সরবরাহের জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ফ্যালকন ট্রেডার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় আগস্টের শেষে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, প্রথম চালানে নেদারল্যান্ডস থেকে ক্যাঙারু ও লামা প্রাণী আনা হয়েছে। দেশটির ‘ম্যান ইন টি ভেল্ড ক্লারিনবিক’ নামে একটি প্রাণী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

‘লামার মূল প্রজাতিটা দক্ষিণ আমেরিকার আর ক্যাঙারুর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন সেগুলোর ক্যাপটিভ ব্রিডিং হচ্ছে। নেদারল্যান্ডে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফার্মে ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ক্যাঙারু ও লামা জন্ম দিয়ে বিক্রি করা হয়। আমরা নেদারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান থেকে কিনে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সরবরাহ করেছি’- বলেন সোহেল আহমেদ

কিউরেটর ডা. শুভ বলেন, ‘লামার জন্য আমরা নতুন করে খাঁচা বানিয়েছি। ক্যাঙারুর জন্য খাঁচা আগে থেকে রেডি ছিল। সেটাকে সংস্কার করা হয়েছে। ১৫ দিন কোয়ারেনটাইন পিরিয়ড হিসেবে প্রাণীগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকবে। নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো কিংবা কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালিটি হলে ১৫ দিন পর্যন্ত দায় থাকবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর। এরপর তারা প্রাণীগুলো চিড়িয়াখানার হেফাজতে হস্তান্তর করবে।’

প্রাণীবিদদের মতে, ক্যাংঙারু মারসুপিয়াল গোত্রের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা পেছনের দুই পায়ের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। ক্যাঙারুর প্রায় ৫০টি ভিন্ন প্রজাতি আছে। লাল ও ধূসর ক্যাঙারু আকারে সবচেয়ে বড় হয়। এরা লম্বায় ২ মিটার দীর্ঘ এবং ৮৫ কেজি ওজনের হতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেয়া ক্যাঙারু কেবল অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে, নিউ গিনিতে এবং আশেপাশের দ্বীপ তাসমানিয়াতে পাওয়া যায়। ক্যাপটিভ বা বন্দী পরিবেশে এরা ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে লামা উটের নিকটাত্মীয় প্রাণী হিসেবে পরিচিত। এদের বসবাস দক্ষিণ আমেরিকার উঁচু পাহাড়ি এলাকায়। একটি পূর্ণবয়স্ক লামা সাড়ে ৫ ফুট থেকে ৬ ফুটের মতো লম্বা এবং ১৩০ থেকে ২০০ কেজি ওজনের হতে পারে। লামা সাধারণত ১৫ থেকে২৫ বছর বাঁচে।

এদিকে নভেম্বরের প্রথমদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হচ্ছে এক জোড়া সিংহ, ৬টি রেড-গ্রীণ ম্যাকাও এবং ৮টি ওয়াইল্ড বিস্ট।

সোহেল আহমেদ বলেন, ‘একই কার্যাদেশে আমাদের মোট পাঁচ ধরনের প্রাণী সরবরাহের কথা বলা হয়েছিল। আমরা লামা ও ক্যাঙারু অলরেডি সরবরাহ করেছি। বাকিগুলো ১০-১৫ দিনের মধ্যে আসবে।’

২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজ-লক্ষ্মীর ঘরে জন্ম নেয় দুটি সিংহী জন্ম নেয়- ‘বর্ষা’ আর ‘নোভা’। তাদের জন্মের কিছুদিন পর মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। পুরুষবিহীন নিঃসঙ্গ অবস্থায় দুই বোন প্রায় ১১ বছর কাটানোর পর ২০১৬ সালে নোভার জন্য রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে সঙ্গী আনা হয় বাদশাহকে। আর বর্ষাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রংপুরে। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চিড়িয়াখানায় ঘটা করে সিংহ বাদশাহ ও সিংহী নোভার বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান হয়নি। এর ফলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন শুধু সিংহের মধ্যে নোভা-বাদশাহ আছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘বাদশাহকে যেসসময় আনা হয়, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ১৩ বছর। নোভার বয়স ছিল ১১ বছর। সিংহ-সিংহী আড়াই বছর বয়সেই প্রজননক্ষম হয় এবং তিন বছরের মধ্যে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। ১২ বছর পর এ প্রাণীগুলোর প্রজনন ক্ষমতা আর থাকে না।’

‘সুতরাং বলতে গেলে নোভা ও বাদশাহর মধ্যে সংসার হয়নি। নোভা কোনো শাবকও জন্ম দিতে পারেনি। এখন বাদশাহর বয়স প্রায় ২০ বছর। নোভার বয়স ১৬ বছরেরও বেশি। সিংহ সাধারণত ২০ বছরের বেশি বাঁচে না। বাদশাহ যে কোনো মুহুর্তে মারা যেতে পারে। নোভার আয়ূও শেষ হয়ে আসছে। এজন্য আমরা নতুনভাবে সিংহ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি ক্যাঙারু এবং লামা শিশু দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করবে জানিয়ে শুভ বলেন, ‘ক্যাঙারুর প্রতি শিশুদের আকর্ষণ খুব বেশি। লামা তো ল্যাটিন আমেরিকায় খুব জনপ্রিয়। এভাবে নতুন নতুন প্রাণী এনে আমরা চিড়িয়াখানাকে দর্শনার্থীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় এবং সমৃদ্ধ করতে চাই। কয়েকদিনের মধ্যে সিংহ আসবে, ওয়াইল্ড বিচ, ম্যাকাও পাখি আসবে। বাঘের খাঁচা বানানোর জন্য আমরা এক কোটি টাকায় টেন্ডার দিয়েছি। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে আমরা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে পারব বলে আশা করছি।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন