বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে ১০ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, ভেসে এলো মহিষের পাল

October 25, 2022 | 9:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রামে প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। নগরীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পতেঙ্গা জেলেপল্লিতে। ঘরবাড়ি হারানো সাগরপাড়ের বাসিন্দাদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। জেলার উপকূলীয় এলাকা এবং নগরীর নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার নগরীর খাতুনগঞ্জে আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন পণ্য।

বিজ্ঞাপন

জোয়ারের পানিতে সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলে ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। ভেসে এসেছে মহিষের পাল। এছাড়া মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোনসংলগ্ন সাগর উপকূলে বালিবোঝাই ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টায়ও যাদের সন্ধান মেলেনি।

সোমবার (২৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড জোরে দমকা হাওয়া বইতে থাকে। সেইসঙ্গে বৃষ্টিও নামে। সাগরে জোয়ারের পানি বেড়ে ঢুকে পড়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন লোকালয়ে। নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আকমল আলী সড়কে মৎস্যঘাট-সংলগ্ন জেলেপল্লিতে প্রায় দুই শতাধিক ঘর ছিল, যা বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে মাইকিং করে জেলেপল্লির বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ ঘর ছেড়ে বের হননি। জেলেপল্লিটি বেড়িবাঁধের সাগরের অংশের দিকে। রাত ২টার দিকে যখন জোয়ারের পানি ঘরে ঢোকা শুরু হয়, তখন তারা প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়ে আসতে থাকে। এর মধ্যে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জেলেপল্লির আড়াই হাজার বাসিন্দাকে দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাই। এজন্য ঘরবাড়ি হারালেও তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তারা নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

জেলেপল্লিতে ঘরের সঙ্গে জাল ধরার মাছ ভেসে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৮৫৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। নগরীতে আরও প্রায় সমান সংখ্যক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৮ হাজার ৫৭২ জন মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলা মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৫০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করা হয়েছে। তাদের জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবার, ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ সামগ্রী ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারি বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের আড়ত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। রাত পার করে মঙ্গলবার সকালেও ছিল কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমড় সমান পানি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাটার টান শুরু হলে পানি নেমে যায়। পানি ঢুকে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়ৎ ও দোকানে থাকা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, চাল, গমের মত নিত্যপণ্যের বস্তায় পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে। চাক্তাই ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘ধান-চালের প্রায় ৩০০ আড়ৎ আছে। দোকান আছে হাজারখানেক। অধিকাংশ আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে ধান, চাল নষ্ট হয়েছে।’

এছাড়া সোমবার রাতে জোয়ারের পানিতে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, হালিশহর, চকাবাজার, বাদুরতলা, কাগাসগোলা, রহমতগঞ্জ, তিন ‍পুলের মাথা, ওয়াপদা, শান্তিবাগ, আনন্দবাজার, কাট্টলীর বিভিন্ন অংশ, ফইল্যাতলি, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, শুলকবহর, মুরাদপুর পানিতে তলিয়ে যায়। বিভিন্ন ভবনের নিচতলা, কাঁচা ও সেমিপাকা কলোনি, বস্তি, সড়ক পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল জোয়ারের মধ্যে সোমবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শায়েরখালী ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোনে বসুন্ধরা গ্রুপের তিন নম্বর জেটি সংলগ্ন সাগরে একটি বালিবোঝাই ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। দিনভর তল্লাশি চালিয়ে শ্রমিকদের কারও খোঁজ মেলেনি বলে জানিয়েছেন মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় কাসোয়া শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড সংলগ্ন সাগর উপকূলে আনুমানিক তিন মাস বয়সী এক কন্যাশিশুর লাশ ভেসে আসে। নৌ পুলিশের ধারণা, জলোচ্ছ্বাসকবলিত এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুটি জোয়ারের পানিতে সাগরে ভেসে এসেছে।

এছাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে সাগরে ভেসে সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায় এসেছে প্রায় শ’খানেক মহিষ। এসব মহিষ সন্দ্বীপের চরাঞ্চল থেকে ভেসে আসে বলে ধারণা স্থানীয় বিভিন্ন স্থানীয়দের। মঙ্গলবার দুপুরের পর সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের উপকূলে মহিষের পাল ভেসে আসে বলে স্থানীয়রা জানান।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায় ভেসে আসা মহিষগুলোকে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে কোনো ব্যক্তি মালিকানা দাবি করলে প্রমাণপত্র উপস্থাপন সাপেক্ষে মহিষ হস্তান্তর করা হবে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন