বিজ্ঞাপন

জাতীয় সরকারে ছোট দলের ‘বড়’ নেতারাও থাকবেন: রুমিন ফারহানা

October 28, 2022 | 8:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিএনপির প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে ছোট দলের ‘বড় নেতাদের’ সম্মিলন ঘটানোর কথা জানিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্য ও হুইপ রুমিন ফারহানা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০টিতে জয়ী হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর ‘চট্টগ্রাম ক্লাবে’ বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংসদ রুমিন ফারহানা এ সব কথা বলেন। ‘জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য’— এ বিষয়ের ওপর বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।\

সভায় বক্তব্যে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলেই প্রথম বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়। আওয়ামী লীগের অধীনে প্রথম যে নির্বাচন হয়, তিয়াত্তরের জাতীয় নির্বাচন, সেই নির্বাচনটি ছিল কারচুপিতে পরিপূর্ণ। অল্পকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাসদের প্রার্থী, ন্যাপের প্রার্থী সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনকেও সুষ্ঠু করার সাহস আওয়ামী লীগ দেখাতে পারেনি। আওয়ামী লীগ তার সেই চরিত্র থেকে এখনও বের হতে পারেনি। তখন চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে সংবিধানের মূল স্পিরিট নষ্ট করা হয়েছিল এবং সেটা করে একদলীয় শাসন একেবারে ফরমালি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল।’

‘বাংলাদেশে এখনও একদলীয় শাসনই চলছে, কিন্তু গণতন্ত্রের তথাকথিত মোড়কে, ভোট নামক প্রহসনের মধ্য দিয়ে। সুতরাং রাষ্ট্রকে এমন একটা জায়গায় গত ১৫ বছরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে আপনি আইন বিভাগ বলেন, বিচার বিভাগ বলেন, নির্বাহী বিভাগ বলেন, দুদক কিংবা পিএসসি- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কোনোটাই আর স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারছে না। সুতরাং বড় আকারে রাষ্ট্র মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘বিএনপি যেহেতু অংশীদারিত্বে বিশ্বাস করে, বহু মত ও পথের মানুষের সম্মিলনে বিশ্বাস করে, সেজন্য বিএনপি বলছে, তারা যদি আগামীতে মানুষের ভোট নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়, তাহলে তারা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে। এই জাতীয় সরকার হবে জয়ী এবং বিজিতের একটি সম্মিলন। আমরা জানি, আমাদের দেশে অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল আছে, যেখানে অনেক প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা আছেন। দল হয়তো ছোট, বাংলাদেশের একেবারে রুট লেভেল পর্যন্ত হয়ত তাদের শাখা প্রশাখা নেই। কিন্তু তাদের অনেক প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ এবং বিদগ্ধ নেতা আছেন।’

‘বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, ইনশল্লাহ সেসব দলের নেতাদের সম্মিলনে একেবারে তাদের সঙ্গে নিয়ে হাতে হাতে ধরে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করব’- বলেন রুমিন

বিএনপির একার পক্ষে রাষ্ট্র মেরামত করা সমীচীন হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের যে সর্বনাশ হয়েছে গত ১৫ বছরে, রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে গত ১৫ বছরে, সেটা বিএনপির একার পক্ষে সমাধান করাটা সমীচীন হবে না। বিএনপি চাইলে করতে পারে, কারণ আজ নয় কাল যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০ আসন পাবে ইনশল্লাহ। সুতরাং বিএনপি চাইলে একাই করতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্র এই বিএনপির হাত ধরে এসেছিল। বিএনপির হাত ধরে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এসেছিল। সুতরাং বিএনপি সবক্ষেত্রে মানুষের অংশীদারিত্ব এবং মানুষের কল্যাণে মানুষের মত নিয়ে আদর্শে বিশ্বাস করে। এজন্যই জাতীয় সরকারের কনসেপ্ট।’

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারণা প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিএনপি শুধু যে বহু দল, বহু মতে বিশ্বাস করে তা-ই নয়। বিএনপি যে শুধু রঙধনুর সাতটি রঙের মতো বিভিন্ন মতে আস্থা রাখে তা-ই নয়, বিএনপি নিজের ক্ষমতাকেও খর্ব করতে প্রস্তুত, শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে। কারণ আমাদের যে তিনটি বিভাগ রাষ্ট্রের- আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। আইন বিভাগের কাজ শুধু আইন প্রণয়ন নয়, রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নও। সুতরাং দেখা যায়, বাই দ্যা পিপল, অব দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপলের সংসদ সেটাও স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারে যদি ব্রুট মেজরিটি থাকে। নির্বাচনে কোনো দল যদি ব্রুট মেজরিটি পায়, সেই সরকারের মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিকতা তৈরি হয়। সেটা যাতে তৈরি হতে না পারে, রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান সেটা চিন্তা করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারণা নিয়ে এসেছেন।’

‘তাহলে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের মধ্যে চেক এন্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা হবে। উচ্চকক্ষে যারা বসবেন তাদের বয়স এবং অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাদের অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগাতে পারব দেশের কল্যাণে। নিম্নকক্ষ অনেকসময় পপুলিস্ট সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। একটা বিষয় হয়তো জনগণ এই মুহুর্তে চাচ্ছে, কিন্তু দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো নয়, কিন্তু সেটা রাজনীতিবিদদের করতে হচ্ছে। কারণ তাদের আবার ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে এ ধরনের পপুলিস্ট সিদ্ধান্ত উচ্চকক্ষে গিয়ে বাতিল হয়ে যায়। এটা সত্য যে, কিছুটা বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে।’

সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, ‘উচ্চকক্ষ সরাসরি জনগণের ভোটের দ্বারা নাকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা অথবা বিশেষ প্রক্রিয়ায় সিলেক্ট করা হবে— এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, আমরা আলোচনা করব। শুধু আজকের নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছি তা-ই নয়, আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশ আসলে কোনদিকে যাবে, বিএনপি যদি মানুষের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে দেশকে কেমন দেখতে চায়, দেশের মানুষকে কেমন দেখতে চায়, সেটার একটা রূপরেখা আসলে আজকে আমরা দিচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহিরউদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এস এম বদরুল আনোয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকেরা।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন