বিজ্ঞাপন

তাবলীগ জামাতের দ্বন্দ্বের নেপথ্যে ‘মারকাজ’ দখল

April 28, 2018 | 3:48 pm

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে শনিবার (২৮ এপ্রিল) তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র (মারকাজ) দখল নিয়ে দিল্লীর মাওলানা সাদপন্থী ও সাদ বিরোধীদের মধ্যে এ হাতাহাতি হয়।

এর আগে সোমবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও অচলাবস্থা দেখা দেয় কাকরাইল মসজিদ এলাকায়। ওই সময় তাবলীগ জামাতের কয়েকজন সুরা সদস্যকে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগও ওঠে। এছাড়া মাওলানা সাদের অনুসারী সুরা সদস্যদের অবরুদ্ধ করে তাদের মারকাজ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিরোধীরা।

সাদপন্থীদের অভিযোগ, মাওলানা যোবায়ের গ্রুপের অনুসারীরা সোমবার কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করে। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কওমি মাদ্‌রাসার ছাত্ররাও আসে। এরপর তারা তাবলীগের সুরা সদস্যদের রুম, মাশওয়ারা কক্ষ ও বিদেশি অতিথিদের কক্ষ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এর জের ধরে শনিবার সকালে কাকরাইল মসজিদ এলাকায় তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ এপ্রিল) কাকরাইল মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মসজিদের ভেতরে উভয় গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে রমনা বিভাগের পুলিশ উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, সবাই জানে কাকরাইল মসজিদ থেকেই সারাদেশের তাবলীগ জামাত পরিচালিত হয়। এখানে দুই গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করলে পুলিশ আসে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বৈঠক হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন, এখন থেকে স্বাভাবিকভাবে তাবলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, পুলিশের কাজ ছিল উত্তেজনা নিরসন করা। আমরা কাউকে বের করে দিইনি। যাদের ব্যাগ ও মালপত্র নেই আমরা তাদের প্রবেশ করতে দিইনি। শান্তি বজায় রেখে তাবলীগ জামাত আগের মতো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে সবাইকে বলা হয়েছে।

কাকরাইলে ১১ সুরা সদস্য নিয়ে তাবলীগ জামাত পরিচালিত হয়। এদের মধ্যে ছয় জন দিল্লীর মাওলনা সাদ পন্থী আর পাঁচজন জন সাদ বিরোধী। সাদ পন্থীরা হলেন মাওলনা ওয়াসীবুল ইসলাম, মা. মোশারফ হোসেন, মা. সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আহমেদ নাসিম, প্রফেসর ইউনুস শিকদার, মা. মোজাম্মেল হক ও মা. ইঞ্জিনিয়ার শেখ নুর মোহাম্মদ। আর সাদ বিরোধীরা হলেন, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, মা. রবিউল হক, মা. মোহাম্মদ হোসাইন, মা. ফারুক ও মা. ওমর ফারুক।

তাবলীগ জামাতের সাধারণ সদস্য শাহজাহান সিরাজ সারাবাংলাকে বলেন, গত সোমবার (২৩ এপ্রিল) হঠাৎ করে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে মাওলানা যোবায়ের ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার ছাত্র নিয়ে আসেন। তারা মাদ্রাসায় অবস্থান নেয়। গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে (২৬ এপ্রিল) শোক গুজারির নাম করে মশোয়ারা ঘর (মুরুব্বিদের পরামর্শ ঘর) দখল করে।

বিজ্ঞাপন

সাদপন্থী ওয়াসীবুল ইসলাম পুলিশকে খবর অভিযোগ করলে রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন এসে তাদের সেখান থেকে মসজিদে সরিয়ে দেন। এরপর পুলিশ চলে গেলে রাত ৯টার দিকে পরামর্শ ঘরে পুনরায় দখল করে। ওয়াসী হুজুর বাসায় চলে গেলে তারা হুজুরের ঘরে লাথি মারে ও গালাগাল করে। রাত ১টার দিকে ওইসব ছাত্র মোহাম্মদ হোসাইন ও মোজাম্মেলের কক্ষ দখল করে জ্যামার ডিভাইস বসিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ওয়াসী হুজুর কাকরাইল মসজিদে আসেন। এ সময় ছাত্ররা তাকে কটূক্তি করতে থাকে। বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মসজিদের এক খাদেম পুলিশকে খবর দেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ এসে দুই জ্যামার নিয়ে যায়। আজ শনিবার মাওলানা রবিউলের সভাপতিত্বে পরামর্শ সভা শুরু হয়। সেখানে চারটি বিষয় পাস করা হয়। এর মধ্যে মাওলানা সাদের কোনো কথা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হবে না। যারা সাদকে মানেন তাদের কোনো ফয়সালা এখানে চলবে না। কাকরাইলে আগে ফয়সাল (পরামর্শক) ছিলেন ৬ জন, সাদ ২ জন বাড়িয়ে ৮ জন করেছেন, বাড়তি ২ জনকে তারা মানবেন না। আর মাওলানা যোবায়েরসহ পাঁচজন যে ফয়সালা দেবেন তা তাবলীগ জামাত অনুসারীদের মানতে হবে।’

এরকম পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে সাদ পন্থীরা যখন কাকরাইলে প্রবেশ করছিলেন, সে সময় মাদ্‌রাসার ছাত্ররা তাদের কয়েকজনকে মারধর করেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি গরম হয়ে ওঠে।

যোবায়ের পন্থীদের মধ্যে মাওলানা একরামুল হক বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে সামান্য, কিন্তু সাদপন্থীরা তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। কথায় কথায় পাকিস্তানপন্থী বলে গালিগালাজ করেন সাদপন্থীরা।’

তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখন আগের মতোই তাবলীগ জামাত পরিচালিত হবে।’

বাইরে থেকে ছাত্র এনে ‘মারকাজ’ দখল চেষ্টার বিষয়ে সাদবিরোধী মাওলানা যোবায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে বাইরের কোনো ছাত্রকে আনা হয়নি। যারা আছে তারা তাবলীগ জামাতের। সাদপন্থী কিছু অনুসারী আছে যারা আমাদের পাকিস্তান ও হেফাজতি তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে। এ সব অন্যায় মেনে নেওয়ার মতো না।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

আরও পড়ুন

কাকরাইল মসজিদে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের হাতাহাতি

 দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন