বিজ্ঞাপন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল

April 29, 2018 | 9:42 am

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দিনটি ছিল ১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ উপকূলে হঠাৎ একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হলো। মাত্র দুইদিনের মাথায় বাতাসের গতিবেগ বেড়ে নিম্নচাপটি রূপ নিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে। ওই ঝড় অন্য আর দশটা ঝড়ের মতো ছিল না। ক্যাটাগরি-৪ এর শক্তি নিয়ে ২৯ এপ্রিল রাতে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে চট্টগ্রাম উপকূলে। সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার প্রতিঘণ্টার ওই ঝড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অর্থের হিসেবে এর ক্ষয়ক্ষতি ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। নিহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই দিনটি ‘ভয়াল ২৯’ নামে পরিচিতি পায়।

১৯৯১’র পর বাংলাদেশে এরকম বড় অনেকগুলো ঝড় হয়েছে। ১৯৯৭’র ঝড়, ২০০৭’র সিডর, ২০০৯’র আইলা এবং ২০১৩’র মহাসেন। কিন্তু ১৯৯১ সালের মতো ক্ষতি কোনো ঝড় আর করতে পারেনি। প্রতিবারই বড় ঝড়কে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। ২০০৭ এর সিডর অপেক্ষাকৃত বড় ঝড় হওয়ার পরেও সেখানে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম হয়েছে।

‘সেই ভয়াল ২৯ এর মতো অনেক ঝড়কে এখন বাংলাদেশ খুব সহজেই মোকাবেলা করে। বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বিশেজ্ঞরা এদেশে এসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যান।’ সারাবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনেরাবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা তো এখন কমে গেছেই। উপরন্তু, অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে পাঠানো হয় প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।

সিডরের সময় শ্রীলংকায়, হাইতির ভূমিকম্পে, নেপালের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের মেডিকেল টিম গিয়েছিল সহায়তা করতে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ যা করে দেখিয়েছে, তা আমেরিকাও করে দেখাতে পারেনি বলে জানান এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোহসীন বলেন, দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবেলায় সাফল্যের ভাগিদার সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বিমান বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স, স্থানীয় সরকার, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় স্বেচ্ছাসেবকসহ সবাই। সবাইকে নিয়ে গঠিত কমিটি একসঙ্গে কাজ করে আমরা মৃত্যুর সংখ্যা একক অংকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, আমাদের দেশে যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনানীতি রয়েছে যার আওতায় একটা কমান্ড সিস্টেম আছে, দুর্যোগের পূর্বাভাস আসলে কার কী কাজ তা ঠিক করা। তখন যে যার যার মতো নিজের কাজে লেগে পরে।

‘এ ধরনের একটা নীতি আমরাই প্রথম তৈরি করেছি, যা পরে ভারতসহ অন্য অনেক দেশ অনুকরণ করেছে’ বলেন মো. মহসীন।

দুর্যোগে বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করে এ প্রশ্নের জবাবে মো. মোহসীন বলেন, দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে আমাদের তিন হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। আমেরিকার মতো দেশেও এমন কোনো আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা নেই। যখন ঝড়ের বিপদ সংকেত ৭ এ উঠে তখনই দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। আগে থেকেই উপজেলা পর্যায়ে অর্থ ও চাল দেয়া থাকে যেন কেউ ত্রাণের অভাবে মরে না যান।

‘সিডরের সময় প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছিল, ফলে মৃতের সংখ্যা অনেক কম ছিল।’ জানান মো. মোহসীন।

বিজ্ঞাপন

ড. মোকাদ্দেম বলেন, শুধু ঝড়ের পরের ব্যবস্থা না। ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থাটাও খুব সুগঠিত। তৃণমূল পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রাখা হয়েছে। এখানে সরকারের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট এবং স্থানীয় জনগণ ভালো কাজ করছেন।

‘ঝড়ের খবর পৌঁছানোর জন্য আইসিটি বিভাগ, সরকার, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, কমিউনিটি রেডিও এমনকি ইমামরা পর্যন্ত কাজ করছেন। এতেই ক্ষয়ক্ষতি কমে গেছে অনেকখানি।’ মত এ গবেষকের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। ৭২ জন মানুষ কাজ করছেন দুর্যোগের পরে মানুষের মানসিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার কাজে, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

আগে যেমন দুর্যোগের পরে অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব হতো এখন আর তা হয় না। পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হয়, অন্য রোগগুলোকেও মোকাবেলা করা হয় দক্ষভাবে, জানান মো. মোয়াজ্জেম।
তিনি আরও জানান, এবারে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি বড় অংশ রোহিঙ্গাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা। আশা করি মে মাসের মধ্যেই ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। বাকিদের জীবনও যেন সংশয় না হয় তার জন্য আমরা চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ জেলায় নানান ধরণের সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, এ বছর বাজেটে ২৫ শ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। গত বছরই এই বাজেট ছিল ১৬শ কোটি টাকা।

‘এ টাকার শতকরা ৯৫ শতাংশই সরকারের নিজের টাকা। এগুলো কোনো সহায়তা নয়, কোনো ত্রাণ নয়। এভাবেই সরকার দুর্যোগপ্রবণ দেশটির মানুষগুলোকে আগলে রাখছে দুর্যোগ থেকে’ বলেন মো. জাকির।

সারাবাংলা/এমএ/এমআইএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন