বিজ্ঞাপন

রাবি ছাত্রলীগের পদ পেতে মাঠে অছাত্র, চাঁদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী!

November 9, 2022 | 10:21 am

আবু সাঈদ সজল, রাবি করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: আসছে ১২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে। ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৯৩ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে শীর্ষ এই দুই পদে আসার দৌড়ে আলোচনায় আছেন প্রায় এক ডজন নেতা। যাদের মধ্যে রয়েছে অছাত্র, ড্রপআউট, চাঁদাবাজ ও তালিকাভুক্ত মাদকব্যবসায়ী। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাওয়া— গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের শীর্ষ দুই পদে নিয়মিত ছাত্র, সৎ, যোগ্য, সাংগঠনিক ও ক্লিন ইমেজধারীরা নেতৃত্বে আসুক।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পর সপ্তাহ না যেতেই আরেক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়।

সম্মেলন ঘিরে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন বিতর্কিত নেতা মেহেদী হাসান মিশু। ২০১৬ সালে রাবি ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য করেন। বিভিন্ন হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে হলে হলে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের সিটে ওঠান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হলে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এবারের ২৬তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তিনি। জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, মেহেদী হাসান মিশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ ছয় শিক্ষাবর্ষের মধ্যে সম্মান শেষ করতে হয়। সে হিসেবে ২০২২ সালে ৮ বছর পেরিয়ে গেছে তার সম্মান শেষ করার সময়সীমা। তবে বিভাগ সূত্র জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হয়েছেন তিনি। সে হিসেবে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক।

বিজ্ঞাপন

মিশুর বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বিজয় কৃষ্ণ বণিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তাকে (মিশু) বিভাগ থেকে প্রত্যয়নপত্র দিতে পারিনি। যদি তার ছাত্রত্ব থাকতো তাহলে প্রত্যয়নপত্র দিতে কোনো সমস্যা হতো না। এখন বাকিটা আপনারাই বুঝে নিন।’

ড্রপ আউটের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান মিশু বলেন, ‘আমার ছাত্রত্ব নেই, বিষয়টি ঠিক নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে একটু রেজাল্ট খারাপ করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষ ছাত্রত্ব রাখতে পারে। আমি বিভাগে এ বিষয়ে আবেদন করেছি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং রাজশাহীর অভিভাবকরা অবগত আছেন।’ চাঁদাবাজির অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের চক্রান্ত বলে দাবি করেন তিনি।

আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদের দৌড়ে বেশ আলোচনায় আছেন বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়। সে ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক সরবরাহে জড়িত তালিকায় তার নাম আসে। এছাড়া, চলতি শিক্ষাবর্ষে রাবি’র ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির ঘটনায়ও তার নাম আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি তন্ময়ের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পরে তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য সিভি জমা দেন।

বিজ্ঞাপন

ক্যাম্পাসে প্রচার আছে, তন্ময় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। যার মাধ্যমে লবিং করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তিনি। এবার সেই ব্যক্তির মাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদটি ভাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা। এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এছাড়াও শীর্ষ এই দুই পদের একটি পেতে বিভিন্ন স্থানে লবিং ও দৌড়ঝাঁপ করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ড্রপআউট ও শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু টানা তিনবছর প্রথম বর্ষ অতিক্রম করতে না পারায় ড্রপ আউট হয়ে যান তিনি। পরে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্স শেষ করেছেন বলে দাবি তার।

গালিব আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি শুধু এসএসসি ও এইচএসসির তথ্য দিয়েছেন বলে জানান। পাশাপাশি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বলে জীবনবৃত্তান্তে দাবি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগে ভর্তির কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড, যা প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন- তা জীবনবৃত্তান্তে জুড়ে দেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে আসাদুল্লা হিল গালিব বলেন, ‘আমার ছাত্রত্ব আছে। বর্তমানে আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ছাত্রত্ব বজায় রাখতে যা করার আমি সব করেছি। আমার সিভিতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া আছে। প্রয়োজনে আপনারা বিভাগের শিক্ষকদের কাছে খোঁজ নিতে পারেন।’ এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অনার্সে ড্রপ আউটের বিষয়টি এড়িয়ে যান। মাদক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করানো হোক। তাহলেই বোঝা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

সম্মেলন বিতর্কিত প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যর কাছে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে সম্মেলনের বিতর্কিতদের বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এখানে ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমাদের কাছে যেসব সিভি জমা দেওয়া হয়েছে- তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এর মধ্যে বিতর্কিত, অছাত্র এবং ড্রপ আউটে অভিযুক্তরা কোনো ভাবেই নেতৃত্বে আসতে পারবে না।’

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন