রেমিট্যান্স বাড়াতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আরও সক্রিয় করতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করার পাশাপাশি সুবিধাভোগির কাছেও তা নিরাপদে, তাৎক্ষণিকভাবে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্মই হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।

বুধবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত “বৈধ পথে সহজে নিরাপদে ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এতে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা নানা সুপারিশ তুলে ধরেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা রেমিট্যান্স গ্রহণ করেন, তাদের ব্যাংকে গিয়ে লেনদেনের বিষয়ে এক ধরনের সামাজিক ও মনস্তাত্বিক দূরত্ব আছে। ফলে ঘরে বসেই অবৈধ পথে রেমিট্যান্স গ্রহণ করাকেও তারা অপেক্ষাকৃত সহজ মনে করেন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের দূরত্ব কমাতে না পারলে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না। এ জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশের সঙ্গে সপ্তাহে তিন দিন লেনদেন বন্ধ থাকছে। এ কারণে হুন্ডিতে লেনদেনের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। সরকার এসব প্রথা ভেঙ্গে একটা প্রবণতা চালু করতে চায়। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।’

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে ডলারের বাজারে ভারসাম্য রাখতে হবে। বৈধ এবং অবৈধ পথে ডলারের হারের পার্থক্য বেশি হলে প্রবাসী শ্রমিকরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল এইচ খন্দকার বলেন, ‘২০১৯ ও ২০২০ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসা অনেক বেড়েছিল। ওই সময়ে সরকার প্রণোদনা চালু এবং ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। বর্তমানে রেমিট্যান্স আনতে বৈশ্বিকভাবে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি খরচ হচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে দ্রুত ও অনেক কম খরচে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণেই ওই পথ বেছে নিচ্ছেন। বৈধ পথে আনতে এমএফএসসহ ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবস্থা করতে পারলে খরচ ও সময় অর্ধেক কমানো সম্ভব হবে।’

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘রেমিট্যান্স ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত আনা সম্ভব। অল্প সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডিজিটাল মাধ্যমের বিকল্প নেই। এই রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যাংকি চ্যানেলে সহজে ও দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেলে তারা সে পথ বেছে নেবে। যারা দেশে থেকেই রেমিট্যান্স আয় করেন তাদেরকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকের সংজ্ঞা নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন।’

বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অবঃ) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৈধপথে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারী প্রণোদণাসহ বিকাশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এই মুহুর্তে বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে ৭৫টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সেটেলমেন্ট হয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স আসছে। ২০২১ সালে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা সমপরিমানের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই বছর শেষে তা প্রায় চার হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল মওলা বলেন, ‘প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দূর করলে রিজার্ভের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা এখন মোকাবেলা করা সহজ হবে। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স আনা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে মেটানো সম্ভব।’

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে গোল বৈঠক আলোচনা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

সারাবাংলা/জিএস/ইআ