বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীরের মন বড়, সরকারের বংশ বড়

April 29, 2018 | 12:35 pm

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর থেকে ফিরে: সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুর এখন সরগরম প্রচার-প্রচারণায়। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে প্রাণান্ত খাটাখাটুনি চলছে। নির্বাচনে সর্বশেষ মেয়র দৌড়ে মাঠে রয়েছেন মোট সাতজন প্রার্থী। তবে এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকারকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটারের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড। যাতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও মহিলা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। ভোট কেন্দ্র ৪২৫ টি।

শনিবার দিনভর সিটির নানা অংশে ঘুরে দেখা গেলো ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাস-আলোচনার খণ্ডচিত্র।

বিজ্ঞাপন

নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড-ছোটো দেওড়া। ধীরাশ্রম রোড দিয়ে যতই সামনে যাওয়া যায় ততোই নিরিবিলি আর গ্রামীণ। রাস্তার উপর দিয়ে ড্রেনের পানি বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও খানাখন্দের সঙ্গে নগরবাসীর বাড়তি পাওনা যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। কেবল এ সড়কই নয় এমন বেহাল দশা প্রায় পুরো গাজীপুর শহরের। আর শিল্প নগরী টঙ্গীর অবস্থা আরও সঙ্গীন। এই নগরী দেখভালে যে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো কালে ছিল এমন নমুনা পাওয়া যায় না।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘সাবেক মেয়র নগরীর উন্নয়নের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিংবা তাকে তা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয় নি। তিনি কখন বাইরে থাকতেন আর কখন জেলে থাকতেন সেটিই জানতেন না নগরবাসী। তাই নগরীতে উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তা হয় নি’।

নগরীর ধীরাশ্রম সড়কের মুদি দোকানি এ কে আজাদ বললেন, স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝে তাই এ নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তার মতে, এইবারের নির্বাচনে যদি কিছু একটা হয়।

আজাদ বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তরুন নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে নমিনেশন দিয়েছে। তিনি সাহসী ও বড় মনের মানুষ। নিজের পকেটের টাকায় অনেক কিছুই আগে করেছেন। তাই এবার যদি মেয়র হন তবে তিনি আরও কাজ করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

পাশ থেকে অটো ড্রাইভার হাবিবুর রহমান বললেন, জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিতে বেশি পুরনো না। হাসান উদ্দিন সরকার এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। টঙ্গীর বিখ্যাত সরকার বংশের লোক। গেলবারের বিএনপির মান্নান সাহেবের চেয়ে এইবার টঙ্গী থেকে বেশি ভোট টানবেন তিনি।

২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চন্দনার একটি ছোট্ট বাজারে দুপুরের দিকে কথা হয়ে মোটর গ্যারেজ মালিক সোলায়মান শেখের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘গাজীপুরে বিএনপি পাশ। তয় আমরা জাহাঙ্গীর সাবের নির্বাচন করি।’ বিএনপির পাশ নিশ্চিত বুঝেও কেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন করছেন, এমন প্রশ্নের সোজা উত্তর দিলেন সোলায়মান। ‘দলতো অনেকভাবেই করতে হয়। তাছাড়া জাহাঙ্গীর সাবে লোক ভাল’। এর বেশি কিছু বললেন না তিনি।

শনিবার সারাদিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভর দুপুরে নৌকা ও ধানের শীষের প্রচারণা চলছে সমানে। রিকশায় মাইক দিয়ে রেকর্ড কৃত প্রচার এবং ফাকে ফাকে বাংলা ও হিন্দি গানের প্যারোডিতে মুখর করে রাখছে নগরী। দেয়ালে পোস্টার-বিলবোর্ড লাগানোয় নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোথাও কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে লক্ষীপুরা,চান্দনা, ধীরাশ্রমসহ বেশকিছু এলাকার দেয়ালে নৌকার পোস্টার ও ব্যানার লাগানো দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী অফিস। অডিটোরিয়ামের নিচতলায় বেশকিছু পুলিশের উপস্থিতি জানান দেয় নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা। দো’তলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বললেন, নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভাল। ২৬ এপ্রিল নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ক সর্বশেষ বৈঠকের পর আমরা আবারো পুরো প্রশাসন বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোথাও কোনো সমস্যা রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সামনে যে সব অনিয়ম চোখে পড়ছে কিংবা যে সব অভিযোগ আসছে সেগুলো সমাধানে কাজ করছি।

এদিকে শনিবার বেলা তিনটায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম টঙ্গীর বিসিক এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন। রোববার বিকেলে তিনি জয়দেবপুর হরিনা এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করবেন।

এদিকে ধানের শীষের প্রার্থী মো.হাসান উদ্দিন সরকার রোববার দুপুর ১২টার দিকে ২৪ নং ওয়ার্ডের শিমুলতলী থেকে গণ সংযোগ শুরু করবেন।
আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ফজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির গাজী রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

এছাড়া গত দুইদিনে ২৮৭জন সাধারণ আসনের কাউন্সিলরের মধ্যে ৩১জন এবং ৮৭জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজনসহ মোট ৩৬জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ফলে সর্বশেষ হিসেবে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৭জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৬ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন সহ মোট ৩৪৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সারাবাংলা/এমএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন