বিজ্ঞাপন

ফারদিনের হত্যাকারী টেকনোলজিক্যালি এক্সপার্ট: ডিবি

November 12, 2022 | 6:01 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৪) হত্যাকারী টেকনোলজিক্যালি অনেক এক্সপার্ট। ফারদিন ঢাকার কোনো এক এলাকায় খুন হতে পারেন বলে ধারণা করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ‘ফারদিনের মোবাইলের ডাটা এনালাইসিস ও বিভিন্ন জায়গায় সে যার সঙ্গে কথা বলেছেন সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে ঢাকা শহরের কোনো এক জায়াগায় খুন হতে পারেন সে। মোবাইলের লোকেশনে আমরা নারায়ণগঞ্জও পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে কোনো ঘটনা ঘটলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দক্ষ টিম কাজ করে। অনেক সময় লেগেছে, কিন্তু ক্লু উদঘাটন করেছি- এমন ঘটনা এর আগেও অনেক ঘটেছে। নিহতের (ফারদিনের) বাবা প্রথমে একটি জিডি করেছিলেন, পরে তিনি মামলা করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি বুশরাকে গ্রেফতার করেছি। পাশাপাশি মামলায় তার নাম এলেও আমরা এখনই মনে করছি না যে সে-ই দায়ী। সে রিমান্ডে এসেছে, আমরা তার সঙ্গে কথা বলছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে ফারদিন যেখানে যেখানে গিয়েছিলেন আমরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেসব স্থান খুঁজে বের করেছি। নিশ্চিত কোনো তথ্য বের করতে পারিনি বলে এখনই কিছু বলছি না। তবে আমাদের কাজ চলছে। ডিবির টিম রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’

এ খুনের নেপথ্যে মাদক সংক্রান্ত কোনো বিষয় আছে কি না- জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘আমরা এ কথা এখনই বলছি না যে মাদকের কারণে খুন হয়েছে। অথবা এটাও বলছি না, মামলার এক নম্বর আসামি যাকে আমরা গ্রেফতার করেছি (বুশরা) সে-ই খুন করেছে। আমরা পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করছি।’

রাজধানীর ডেমরার চরপাড়া বস্তিতে ডিবির অভিযান চলছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে শুধু চরপাড়া বস্তি কেনো, আমরা নারায়ণগঞ্জ গিয়েছি, ডেমরা ও খিলগাঁওসহ সব জায়গায় ডিবির টিম কাজ করছে।’

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন। এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কি না- জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘ডিবির পক্ষ থেকে আমরা কখনোই বলিনি সে (ফারদিন) চরপাড়া গিয়ে মাদকের কারণে মারা গেছেন। আমাদের টিম সবগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার মূল রহস্য আমরা এখনো উদঘাটন করতে পারিনি।’

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দু’দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।

এরপরই তার দুই বন্ধু বুশরা ও সংশপ্তককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই ফারদিন হত্যা মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার (৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা সাংবাদিক নূর উদ্দিন রানা।

বিজ্ঞাপন

ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পরদিন গত ৮ নভেম্বর ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ বলেছিলেন, ময়নাতদন্তে আমরা দেখতে পেয়েছি, ফারদিনের মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেই আঘাত কোনো ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য-উপাত্ত ও আলামত মহাখালী ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে ফারদিনকে কিভাবে খুন করা হয়েছে।

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও এখনো হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রহস্য উন্মোচনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, এলিট ফোর্স র‍্যাব, সিআইডিসহ একাধিক ইউনিট কাজ করছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও কাজ করছে পুলিশ।

তবে এরই মধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, ফারদিনের হত্যাকারী টেকনোলজিক্যালি খুবই স্মার্ট।

সারাবাংলা/ইউজে/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন