বিজ্ঞাপন

আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি: মির্জা ফখরুল

November 12, 2022 | 10:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদেশের মানুষের মনের দাবি। কারণ, বিগত দুইটা নির্বাচনে আপনারা (আওয়ামী লীগ) মানুষকে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। কিন্তু এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”

বিজ্ঞাপন

‘এবার কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না, যতক্ষণ না নিরপেক্ষ সরকার করা হবে। এটি আমাদের খুব স্পষ্ট কথা। আমি ক্ষমতা ছাড়ব না। তোমরা যে যাই বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই—এটা আর হবে না, এটা আর হবে না।’

শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুর শহরের অদূরে ‘কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট’মাঠে আয়োজিত ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাজনীতিক মোহন মিয়া, ওবায়দুর রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ই্উসুফের নাম উল্লেখ করে তাদের স্মৃতি প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

দলের দাবি—দাওয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট তৈরি করবে। সেই পার্লামেন্টে যারা আসবে, তারা নতুন সরকার গঠন করবে।’

‘নির্বাচন জয়ী হলে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের নিয়ে আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। সেই জাতীয় সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ করব। আমরা নতুন করে বিচার বিভাগকে সাজাতে চাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে, আমরা নতুন করে প্রশাসনকে সাজাতে চাই সুশাসনের স্বার্থে, আমরা দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ওই যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করছে না যুব লীগের নামে। ওইখানে উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি সংগ্রাম করছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। আর বলবে ভূতে মুখে রাম রাম।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিল, যারা গণতন্ত্রকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল, যাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে যে, কোনো মানুষ ভোট দিতে পারবে না। জোর করে ভোট দেবে। তাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে গুম করা, খুন করা, হত্যা করা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া। তারা বলে তারা নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।’

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আপনি দয়া করে বলবেন, আপনার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কী, ডেফিনেশনটা কী? সেটি কি এই কথা যে, এটি— অন্য কোনো দলকে আামি কোনো কিছু করতে দেব না। হায় রে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রের আওয়ামী লীগ।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ফরিদপুরের এ জনসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য, নস্যাৎ করার জন্য তিনদিন আগে থেকে তাদের আজ্ঞাবহ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক ইউনিয়ন দিয়ে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। পথে পথে সিকিউরিটি চেক বসিয়েছে। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা আটকায়। জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাবেন? বলে যাওয়া যাবে না, রাস্তা বন্ধ আছে— এই হচ্ছে আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র।’

ফখরুল বলেন, ‘এত ভয় কেন? জনগণ থেকে তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছ। জনগণের সঙ্গে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আজকে এদেশে আলেম-ওলামাদের পর্যন্ত তোমরা হয়রানি করছ। তোমরা তাদেরকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে জেলে পাঠাচ্ছ এবং তাদেরকে জামিন দিচ্ছ না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে চার বছর ধরে বন্দি করে রেখেছ। অসুস্থ মানুষ, চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দাও না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজকে তোমরা ক্যাসিনো সম্রাটকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে দাও। সে এখন যুবলীগে মহাসমাবেশে সামনের সারিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে থাকে। কী দেশ আমাদের? যারা লুট করে, যারা মাফিয়া হিসেবে কাজ করে, যারা এদেশের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়, তাদের জামিন হয়, তারা মুক্তি পায়। অথচ গণতন্ত্রের জন্য যিনি ৯ বছর সংগ্রাম করলেন এবং যিনি জীবনের ৩৫টি বছর গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন তাকে তোমরা আটকিয়ে রেখে দাও।’

সরকার আবারও অতীতের মতো মিথ্যা মামলা দায়েরের কৌশল নিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন শুরু করেছে নতুন কায়দা। গত কয়েকদিন আগে নরসিংদীতে একজন আওয়ামী লীগের লোককে ধরেছে। তার বাড়িতে দেশি বোমা ও বারুদ পেয়েছে। ওকে ধরেছে। আর মামলা দিয়েছে যুব দলের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে। এটি নতুন কৌশল।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মনে থাকা উচিত যে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মেরে তার ওপর তোমরা নেচে নেচে ১/১১ আনার ষড়যন্ত্রটা করেছিলেন। আজকে আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, সংবিধানের কথা বলেন। এই সংবিধানকে তো শেষ করেছেন আপনারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হয়েছিলো আপনাদের দাবিতে। আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। তখন জাতীয় পার্টি-জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করে এমন অবস্থা তৈরি করলেন এক অচলাবস্থা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন বুঝতে পারলেন যে, জনগণ এটি চায়। তখন তিনি পার্লামেন্টে এক রাতে, আমি সেই পার্লামেন্টের সদস্য ছিলাম— এক রাতে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাস করেছি।’

আবার বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করব না। আমরা রুখে দাঁড়াব। তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সব মানুষকে জেগে উঠতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের একদফা এক দাবি— এই সরকারের পদত্যাগ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খাজানজিখানায় তো টাকা নাই। টাকা শেষ। এ জন্য বলছেন যে, আর বাড়ানো হবে না ওই দুঃস্থ মহিলাদের তালিকা। কোথাও তাদের টাকা নাই। রিজার্ভে টাকা নেই। সব খেয়ে ফেলেছে। বড় বড় গলায় বলছে, একজন বললেন, আমরা কি টাকা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছি। আমরা বললাম যে, আপনারা টাকা চিবিয়ে খাননি। আপনারা রিজার্ভের টাকা গিলে খেয়ে ফেলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার এমন একটা খাত বাকি রাখে নাই যেখানে তারা চুরি করে নাই, দুর্নীতি করে নাই। আজকে চতুর্দিকে দুর্নীতি। আপনি যেখানে তাকাবেন, সেখানে দুর্নীতি। কোনো কাজ করতে পারবেন না ঘুষ না দিয়ে, কোনো কাজ হবে না টাকা না দিয়ে, কমিশন না দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’

ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম জঙ্গীর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের ও এ কে এম কিবরিয়া স্বপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসুর মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, শাহ আবু জাফর, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া সেলিমুজ্জামান সেলিম, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নায়েবা ইউসুফ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ডা. রফিকুল ইসলাম, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসকে জিলানি, জাসাসের হেলাল খান, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফুল ইসলাম পটু, মোদারেছ আলী ইছা, এ কে কিবরিয়া স্বপন, বি সিদ্দিকী মিতুল প্রমুখ ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন