বিজ্ঞাপন

‘ঢাকায় সমাবেশ বানচাল করতে সরকার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’

November 17, 2022 | 4:28 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতে সরকার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জে আমাদের লোকজনের ওপরে হামলা চালিয়ে, শহীদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করে, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলায় আমাদের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুন্সিগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে আটক করে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, যুব দলের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নুসহ বিভিন্ন থানায় ইতোমধ্যে ৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।’

‘গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে আহত করেছে। এগুলো হচ্ছে খন্ডিত চিত্র। সামগ্রিকভাবে এমন একটা অবস্থা তৈরি করছে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে, মনে হচ্ছে যেন ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় একটা যুদ্ধ হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কঠিন সময়ে উপস্থিত হয়েছি। আপনার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, শত বাধা-বিপত্তি, আক্রমণ, নির্যাতন সহ্য করেও কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগুচ্ছি, শান্তিপূর্ণ পথে এগুচ্ছি। এই অবৈধ সরকার অত্যন্ত অর্বাচিনের মতো এই দেশকে একটা স্থিতিহীনতার দিকে, অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা একটা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’

‘১০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত আন্দোলন নয়’— উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, এখনও বলছি, আবারও বলছি, ঢাকার সমাবেশটা হচ্ছে আমাদের একটা বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে ১০ বিভাগে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছিলাম সেই সমাবেশগুলোর লাস্ট সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকায়। এই সমাবেশ থেকে আমরা পরিবর্তী কর্মসূচি, পরবর্তী দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে সামনে আসব। এটা তো চূড়ান্ত সমাবেশ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক বিভাগীয় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রমাদ বকছে। গণভিত্তি না থাকলে যেটা হয়, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে যেটা হয় আর কি। প্রতিমুহুর্তে এরা দুঃস্বপ্ন দেখে। এই মুহুর্তে বুঝি গেলো গেলো, আমার সব গেলো। ওই ভয়ে ওই আতঙ্কে তারা এখন রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে— ছেড়ে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া হবে না, দেখে নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

ফখরুল বলেন, ‘আরে! তোমরা কি গুন্ডাবাহিনীর সর্দার? তোমরা কি মাফিয়ার সর্দার? তাহলে ঘোষণা করো যে, আমরা তাই। তাহলে আমরা তোমাদেরকে রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাখব না, গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে চিন্তা করব না।’

‘হেফাজতের পরিণতি হবে বিএনপি’— ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শোনেন ওই একটা জিনিসই উনারা পারেন— অভ্যস্ত আর কি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমি খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, হেফাজতের সময় তারা যেটা করেছ্নে এখন জনগণের সঙ্গে সেটা করতে পারবেন না। কারণ জনগণ তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে এবং জনগণ যেকোনো মূল্যে এবার তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে।

তিনি বলেন, ‘এইটুকু নিশ্চয়তা আপনাদের দিতে পারি, আমরা এমন কোনো কর্মসূচি নেব না যে, কর্মসূচিতে জনগণের কষ্ট হবে বা জনগণ বিপদগ্রস্থ হবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমরা জনগণকে নিয়ে, জনগণের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাব।’

নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘নরসিংদীতে এক আওয়ামী লীগের নেতার বাসা থেকে বোমা উদ্ধার করার পর তাকে গ্রেফতার করেছে। আর মামলা দিয়েছে বিএনপির ৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এগুলো হাস্যকর না? বালখিল্য আচরণ না বলেন?’

বিজ্ঞাপন

‘বিদ্যুতের দাম আবারও বৃদ্ধির পায়তারা’ এবং ‘ওএমএসে চালের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন’— জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এমন সংবাদ শিরোনাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা কিসের আলামত? এই আলামত হচ্ছে যে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন-অমূলক করেন নাই। একটা অবস্থা তৈরি করে রাখতে চাচ্ছেন যেটা হতে পারে।’

সরকারে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি হয় সেটা হবে তোমাদের কারণে, তোমাদের দুর্নীতির কারণে, তোমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে, ক্ষমতায় টিকে থাকার ভাবনা নিয়ে তোমারা মানুষের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করছ, তার জন্য হবে। তোমরা বর্গীদের মতো দেশের সম্পদ লুন্ঠ করে নিয়ে চলে যাচ্ছো, তার জন্য হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে রিজার্ভের কথা বলে। রিজার্ভের কথা এতো বলে কেন? এখন খুব ডিফেন্ড করে রিজার্ভকে প্রতিদিন। তাহলে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তারা রিজার্ভের টাকা বের করে নিয়ে গেছে এবং বিদেশে রিজার্ভের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে-কৌশলে তারা বাড়ি-ঘর, অ্যাসেট সব তৈরি করেছে।’

পূঁজিবাজারে ক্যালেঙ্কারি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কালকে একটা পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, শেয়ার মার্কেট। দুর্ভাগ্যক্রমে সাকিবের (সাকিব হাসান) নামটাও উঠে এসে। একেবারে সেলফ সারপ্রাইজ, আমি জানতাম না। সেটাও এসেছে যে, এসব শেয়ার ক্যালেঙ্কারির সঙ্গে অনেক বড় বড় রথী-মহারথীরা যুক্ত হয়ে পড়েছেন।’

তারল্য সংকট নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক তো শেষ। বার বার সেট্রাল ব্যাংক ঘোষণা দিচ্ছে যে, না ব্যাংকে এখন কোনো তারল্য সংকট নেই। না থাকলে এই স্টেটম্যান্ট দিতে হবে কেন? মানুষ ভয় পাচ্ছে কেন? মানুষ আশঙ্কা করছে কেন? কারণ দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমন জায়গা চলে গেছে যে, মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখতেও সাহস পাচ্ছে না। ওখান থেকেও তার টাকা চুরি হয়ে যেতে পারে।’

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন