বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: ফ্রান্স

November 19, 2022 | 12:42 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

গত বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এ বছরের বিশ্বকাপে আসবে অন্যতম হট ফেভারিট হিসেবে। খেলবে তারা গ্রুপ-‘ডি’তে। ‌বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ দলটির দলের সব পজিশনেই একগাদা প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডারও যথেষ্ট পরিপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

তবে সম্প্রতি নেশনস লিগে ৬টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টি ম্যাচ জিতে কোনোক্রমে তাদের নিজস্ব গ্রুপে বেলজিয়াম এবং ডেনমার্কের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়ে অবনমন এড়িয়েছে‌।

সেই সাথে ইনজুরির সঙ্গে ধুঁকতে থাকা দলটি আসন্ন বিশ্বকাপে তাদের চ্যাম্পিয়ন কোচ দিদিয়ের দেশাম্পের সহায়তায় কিভাবে দাঁতে কামড় দিয়ে লড়াই করবে তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী মুখিয়ে আছে।

বিগত বিশ্বকাপের প্যারফরমেন্স—

বিজ্ঞাপন

ফ্রান্স এবারের বিশ্বকাপসহ ১৬তম বারের জন্য বিশ্বকাপে খেলতে আসছে। বিগত ১৫ বারে তারা ২ বার চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৮ এবং ২০১৮), ১ বার রানার্স আপ (২০০৬), ২ বার তৃতীয় (১৯৫৮ এবং ১৯৮৬) ও ১ বার চতুর্থ (১৯৮২) হয়েছে। আর প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছে ৬ বার (১৯৩৪, ১৯৫৪, ১৯৬৬, ১৯৭৮, ২০০২ ও ২০১০)।

বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ফ্রান্স সর্বমোট ৬৬টি ম্যাচ খেলেছে।‌ তার মধ্যে জয়লাভ করেছে ৩৪টি ম্যাচে, ড্র করেছে ১৩টি এবং পরাজিত হয়েছে ১৯টি ম্যাচে। তার মধ্যে গোল করেছে ১২০টি এবং গোল খেয়েছে ৭৭টি।

দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ফ্যাবিয়েন বার্থেজ (১৯৯৮, ২০০২ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপে) এবং থিয়েরি হেনরি (১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে)। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন জাস্ট ফন্টেইন ১৩টি।

বিজ্ঞাপন

২০২২ বিশ্বকাপে তারা কিভাবে উঠে এলো এবং প্রস্তুতি পর্ব কেমন ছিল—

ইউরোপীয় অঞ্চলের গ্রুপ-‘ডি’ থেকে ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড এবং বসনিয়া হারজেগোভিনাকে পেছনে ফেলে শীর্ষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে এসেছে। ৮ ম্যাচে তারা মাত্র ৩টি গোল হজম করেছিল, আর গোল করেছিল ১৮টি।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ফ্রান্স মোট ৩০টি ম্যাচ খেলেছে যেখানে তারা ১৭টিতে জয়, ৯টিতে ড্র এবং ৪টিতে পরাজিত হয়েছে। ‌‌তবে ন্যাশনস লীগের সর্বশেষ ৬টি ম্যাচ বাদ দিলে তাদের জয় ছিল ১৬টি ম্যাচে, ড্র করেছিল ৭টিতে এবং হেরেছিল মাত্র ১টি ম্যাচে। প্যারফরমেন্স কিছুটা ওঠানামা করেছে গত বছর থেকে, যেমন ইউক্রেনকে ২০২০ সালে ৭-১ গোলে হারালেও এরপরে তাদের বিরুদ্ধে দু দুবার ড্র করতে বাধ্য হয়েছে।

২০১৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবার পর আরো তিনটি বড় টুর্নামেন্টের মধ্যে তাদের সাফল্য ছিল ২০২১ সালের ন্যাশনস লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া, যেখানে তারা ফাইনাল ম্যাচে স্পেনকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে।‌‌ তবে পরবর্তীতে গত বছরের ইউরোতে তারা বাদ পড়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ৩-৩ গোলের ড্র করার পরে ট্রাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল। আর সর্বশেষ ন্যাশনস লীগে তো তাদের ভরাডুবি হয়েছে। তবে আমি সর্বশেষ ন্যাশনস লীগ‌ নিয়ে চিন্তিত নই কারণ বিশ্বকাপের বছরে তারা কিছুটা তরুণ খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দিয়েছে এই টুর্নামেন্টে।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের সময়সূচি—

২৩শে নভেম্বর: ফ্রান্স বনাম অস্ট্রেলিয়া,
২৬শে নভেম্বর: ফ্রান্স বনাম ডেনমার্ক,
৩০শে নভেম্বর: ফ্রান্স বনাম তিউনিসিয়া।

কোচ দিদিয়ের দেশাম্প—

দিদিয়ের দেশাম্প সব সময় তার দলকে ব্যক্তিত্বের অহংকার এবং কেলেঙ্কারি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন। দলে সবসময়ই ওই ধরনের খেলোয়াড়দেরকেই রাখতেন যারা এ ধরনের বদভ্যাস থেকে দূরে থাকতো এবং একে অন্যের সঙ্গে গলা মিলিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে। এভাবেই তিনি ২০১৮ বিশ্বকাপ এবং ২০২১ ন্যাশনস লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের জয়ের পর ডেসচ্যাম্পস তারুণ্যের প্রতি তার আস্থাকে জোরালো করেছেন। তিনি বলেন, “যে মুহুর্ত থেকে আমি খেলোয়াড় বেছে নিচ্ছি, তার মানে আমি তাদের বিশ্বাস করি। যদি তারা নির্বাচিত হয়, তাহলে শীর্ষ স্তরে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই তাদের আছে।”

তবে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হল তিনি অতিমাত্রায় রক্ষণশীল, কারণ দলটিতে বিভিন্ন মাত্রার প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকা সত্বেও তারা তেমন আকর্ষণীয় ফুটবল খেলে না। আবার যে পরিমাণ সাফল্য পেয়েছেন সেই তুলনায় ফ্রেঞ্চ মিডিয়ার প্রশংসা তিনি পাননি। কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা অন্যতম সফল এই মানুষটি প্রায় এক দশক জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার পর বিশ্বকাপের পরেই বিদায় নেবেন।‌‌

দলের ফর্মেশন—

দিদিয়ের দেশাম্প তার স্কোয়াড ঘোষণা করার সময় বলেছিলেন যে তিনি ৪-৩-১-২ পদ্ধতিতে দলকে খেলাতে চান যদিও গত গ্রীষ্মে ইউরোতে ব্যবহার করেছিলেন ৩-৪-১-২ পদ্ধতি৷ ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং করিম বেনজেমা নামের বিশ্বের সেরা দুই আক্রমণকারীর কাছ থেকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের মত রোমারিও ও বেবেতো যা করেছিলেন তার অনুরূপ ফল বের করবার জন্য নিশ্চয়ই তার তার সইছে না।

ইনজুরির কারণে পল পগবা এবং এন’গোলো কান্তেকে হারানোর অর্থ রাশিয়া ২০১৮ জয়ী মিডফিল্ড পুরোপুরি বদলে যাবে। রিয়াল মাদ্রিদের অরেলিয়ান চৌমেনি রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকা পালন করবেন। আর পল পল পগবার জায়গায় খেলার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে অ্যাড্রিয়েন রাবিওট, মাত্তিও গুয়েনডোজি এ ইউসুফ ফোফানার মধ্যে। ফোফানা এবং গুয়েনডোজি হল প্রগতিশীল বিকল্প কিন্তু রাবিওট তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এগিয়ে থাকবে।

তারকা খেলোয়াড়—

গত বিশ্বকাপে বিদ্যুৎ গতি সম্পন্ন ও হাসিখুশি থাকা কিশোর কিলিয়ান এমবাপ্পে এখন মাঠের বাইরে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হয়। গত কয়েক মাস আগে পিএসজি ছাড়ার জন্য গো ধরলে ক্লাব ও জাতীয় দলে তিনি নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাবার জন্য কিছুটা সমালোচিত হন। কিন্তু এরই মাঝে তিনি খেলোয়াড় হিসেবে আরো পরিণত হয়ে উঠছেন। যার প্রমাণ পাওয়া গত ১৮ মাসে ৪৬টি খেলায় ৩৯টি গোল করার পাশাপাশি ২৬টি গোলে তিনি সহায়তা করেছেন। ‌

দলের আরেকজন মূল তারকা হলেন করিম বেনজেমা। ২০১৫ সালের পরে আবার গত ইউরো থেকে ফ্রান্স দলে ফিরে এসেছেন। এসেই তিনি এমবাপ্পের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, তবে এর ফসল তিনি ইউরো এবং নেশনস লীগে তুলতে পারেনি। তাই অপেক্ষায় থাকবেন এই দুই জন মিলে ফ্রান্সকে তাদের সর্বোচ্চ দেবার। গত মৌসুমে ৪৬টি ম্যাচ থেকে ৪৪ গোল করে তিনি তা বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ভালোভাবেই করে রেখেছেন। ‌‌

নেপথ্যের নায়ক—

২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে বিপর্যয় ঘটার পর থেকে তাদের গোলরক্ষক হুগো লরিস এক যুগ যাবৎ দলের অধিনায়ক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত যার কারণে কোচের প্রিয় পাত্রদের একজন। টটেনহ্যামের এই ৩৫ বছর বয়সের গোলরক্ষক আর মাত্র ৩টি ম্যাচ খেললেই ফ্রান্সের হয়ে লিলিয়ান থুরামের খেলা সর্বোচ্চ ম্যাচের রেকর্ড তিনি ভেঙে ফেলবেন।

তরুণ খেলোয়াড়—

ফ্রান্স দলে তরুণ তারকার ছড়াছড়ি। কাকে রেখে কার নাম যে নেই, এ যেন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মত অবস্থা। পরের দশকের জন্য ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যার নাম ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন ২২ বছর বয়সী রিয়াল মাদ্রিদে খেলা অরেলিয়ান চৌমেনি।‌‌ আহত পল পগবা এবং এন’গোলো কান্তের অভাব পূরণের জন্য তার দিকে তাকিয়ে আছে ফ্রান্স। ইউসুফ ফোফানার সাথে জুটি করে ফ্রান্সকে আবার নেশনস লীগের ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিতে তারা কাজ করছেন। তিনি তার ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদে নিয়মিত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলছেন এবং আশা করা যাচ্ছে বিশ্বকাপে ভালো খেললে তার দাম আগামী বছর ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছে যেতে পারে। ‌‌

মোনাকোর ২৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানা যথেষ্ট ব্যস্ত সময় ব্যয় করছেন ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে। ‌তিনি এন’গোলো কান্তের অনুপস্থিতিতে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। কারণ তিনি অনেক বেশি সৃষ্টিশীল এবং টেকনিক্যালি বেশ এগিয়ে। ‌‌এছাড়া মাঠের ভেতর এবং বাহিরে তার নেতৃত্ব গুণ প্রশংসিত হচ্ছে।‌‌

আর্সেনালের ২১ বছর বয়সী ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবা গত বছর ফ্রেঞ্চ লীগের সেরা তরুণ খেলোয়াড় বিবেচিত হয়েছেন। তিনি অনেক শান্ত, মার্জিত এবং নিখুঁত সেন্টার-ব্যাক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন, যিনি ফ্রান্স দলে অন্ততপক্ষে পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে মূল তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের একজন হিসেবে ডান দিকে খেলতে পারেন। তার শারীরিক উচ্চতা এবং ভালো পাস দেওয়ার ক্ষমতা দিনকে দিন তার মূল্য বাড়িয়ে চলতে সাহায্য করছে। ‌

২০ বছর বয়সের এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা জন্মগ্রহণ করেছেন কঙ্গোতে শরণার্থী হিসেবে যার পরিবার অ্যাঙ্গোলা থেকে পালিয়ে এসেছিল যুদ্ধের কারণে। যিনি পরবর্তীতে শৈশবকালে ফ্রান্সে চলে আসেন এবং ফুটবলার হিসেবে নিজেকে আজ বিশ্বকাপের মঞ্চে নিয়ে এসেছেন।‌ রেঁনেতে খেলার সময় তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইয়ের বিপক্ষে ম্যান-অফ-দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। আর এখন তিনি খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। ফলে ফ্রান্স দলে তিনি এ বছরের বিশ্বকাপে একজন দারুন বিকল্প হিসেবে কাজ চালাবেন।

পরিচিত নির্ভরশীল তারকা—

২৯ বছর বয়সী সেন্টার-ব্যাক, রাফায়েল ভারান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আসার পর তার ফর্ম কিছুটা হারিয়ে ফেললেও জাতীয় দলের জন্য তিনি এখনো অপরিহার্য খেলোয়াড়। ‌তার অনুপস্থিতি ফ্রান্স গত সেপ্টেম্বরে ডেনমার্কের সঙ্গে ন্যাশনস লীগে ০-২ গোলে পরাজয়ের পর খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছে। খুব কম বয়সেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন পরিপূর্ণ ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে চেনালেও বর্তমানে ইনজুরি এবং অফ ফর্মের কারণে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আশা করা হচ্ছে বিশ্বকাপের মাধ্যমে তিনি তার ক্যারিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।

ফ্রান্সের আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের মধ্যে ২৬ বছরের কিংসলে কোমান উল্লেখযোগ্য একজন যিনি দুই উইংয়েই এই খেলতে পারেন। বায়ার্ন মিউনিখে খেলা এ মিডফিল্ডার তার গতি এবং ক্রমাগত ক্রস করার জন্য পরিচিত। ‌

বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ২৬ জন খেলোয়াড়ের তালিকা—

গোলরক্ষক: হুগো লরিস (টটেনহ্যাম), আলফোনস আরেওলা (ওয়েস্ট হ্যাম), স্টিভ মান্দান্ডা (রেঁনে)।

ডিফেন্ডার: লুকাস হার্নান্দেজ (বায়ার্ন মিউনিখ), ইব্রাহিমা কোনাতে (লিভারপুল), জুলেস কাউন্ডে (বার্সেলোনা), বেঞ্জামিন পাভার্ড (বায়ার্ন মিউনিখ), থিও হার্নান্দেজ (এসি মিলান), উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল), ডেওট উপামেনকানো (বায়ার্ন মিউনিখ), রাফায়েল ভারান (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), এক্সেল ডিসাসি (মোনাকো)।

মিডফিল্ডার: এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা (রিয়াল মাদ্রিদ), ইউসুফ ফোফানা (মোনাকো), মাত্তেও গুয়েনডোজি (মার্সেই), অ্যাড্রিয়েন রাবিওট (জুভেন্টাস), অরেলিয়ান চৌমেনি (রিয়াল মাদ্রিদ), জর্ডান ভেরেটআউট (মার্সেই)।

ফরোয়ার্ড: করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ), কিংসলে কোমান (বায়ার্ন মিউনিখ), উসমানে দেম্বেলে (বার্সেলোনা), অলিভিয়ের জিরু (এসি মিলান), অ্যান্টোইন গ্রিজম্যান (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), কিলিয়ান এমবাপ্পে (প্যারিস সেন্ট জার্মেই), মার্কাস থুরাম (বরুশিয়া মনচেংগ্লাডবাচ) এবং রান্ডাল মুয়ানি (আইনট্র্যাক্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট)।‌‌

ফ্রান্স দলের ইনজুরি আপডেট—

বিশ্বকাপ ফুটবল, জমজমাট লীগ লড়াই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, নেশনস লিগ প্রভৃতি ফুটবলের চাপে খেলোয়াড়দের চিড়ে চ্যাপ্টা হবার দশা। তাই বিশ্বকাপগামী প্রায় সব দলের খেলোয়াড়রাই কমবেশি ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে ফ্রান্স দলের খেলোয়াড়দের ইনজুরির তালিকাটা একটু বেশি।‌‌

তাদের দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপ কাপের জন্য ঘোষিত ২৬ জনের তালিকা থেকে ইতিমধ্যে ইনজুরির কারণে আগেই বাদ পড়েছেন। এখন নতুন করেও ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন ২৬ জনের সেই তালিকা থেকেই।

তর্কাতীতভাবে ফ্রান্সের জন্য বাদ পড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হলেন চেলসির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এন’গোলো কান্তে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ার আগে তিনি আগস্টে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন। পরবর্তীতে অক্টোবরে তার অস্ত্রোপচার হওয়ার পর তাকে চার মাসের জন্য সাইডলাইনে চলে যেতে হয়েছে।

ফ্রান্সের মাঝমাঠের দুর্ভোগ বাড়াতে পল পগবাও কাতার বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছেন। হাঁটুর ইনজুরির কারণে ২৯ বছর বয়সী এই মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে এক মিনিটও খেলেননি। আশা করা হয়েছিল বিশ্বকাপের আগে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু হায় তিনি আবার উরুর ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েন।

কান্তে এবং পগবার ইনজুরি ফ্রান্সের মিডফিল্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, কারণ দুজনেই ফিট থাকাকালীন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যারা ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিল। এদের পরিবর্তে তরুণ জুটি এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা এবং অরেলিয়ান চৌমেনিকে ব্যবহার করা হতে পারে যারা দুজনেই বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদে হয়ে খেলছেন। জুভেন্টাসের অ্যাড্রিয়েন রাবিওটকেও বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে, যিনি কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়।

ফ্রান্সের বর্তমান এক নম্বর গোল রক্ষক হুগো লরিসের বিদায়ের পর যাকে ভাবা হচ্ছিল তার উত্তরসূরী হিসেবে জায়গা করে নিবেন সেই, মাইক ম্যাগনান অক্টোবরে কাফ ইনজুরিতে পড়ে দলের বাইরে চলে যান। ২৭ বছর বয়সের এই গোলরক্ষক গতবছর এ.সি মিলানের হয়ে লীগ শিরোপা জয় করেন। ‌‌

পিএসজির ২৭ বছরের ডিফেন্ডার, প্রেসনেল কিম্পেম্বে বিশ্বকাপ দলে থাকলেও ইনজুরির পুনরাবৃত্তির কারণে তিনি নিজেই দল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার পরিবর্তে দলে নেওয়া হয়েছে ফ্রান্সের হয়ে এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচ না খেলা মোনাকোর ডিফেন্ডার অ্যাক্সেল দিয়াসিকে। তবে এই দিয়াসিকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।‌ তার কঠিন ট্যাকলের কারণে কয়েকদিন আগে মরক্কোর আমিন হারিতের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে, যিনি কিনা ইঞ্জুরির কারণে ২০১৮ বিশ্বকাপও মিস করেছিলেন।

কিম্পেম্বের ইনজুরির মাত্র কয়েক দিন পরে, ফ্রান্স হারায় তাদের বিশ্বকাপ দলে থাকা আরবি লাইপজিগে খেলা ২৫ বছরের স্ট্রাইকার মিডফিল্ডার ক্রিস্টোফার নকুঙ্কুকে। যিনি প্রশিক্ষণে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন। তিনি দারুণ ফর্মে ছিলেন, কেননা ক্লাব দলে ২৩টি ম্যাচে ১৭টি গোল করেছিলেন। বিশ্বকাপে তার বদলে দলে ডাকা হয়েছে আইনট্র্যাক্ট ফ্রাঙ্কফুর্টের রান্ডাল মুয়ানিকে।‌‌

এর বাইরে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে এখনো পর্যন্ত টিকে থাকা বিভিন্ন খেলোয়াড় নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন। ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমা এই মৌসুমে ক্লাব এবং দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি ম্যাচ মিস করেছেন, যার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে শেষ ৪টি ম্যাচ রয়েছে কারণ তিনি পেশীর সমস্যায় ভুগছেন৷

সেন্টার-ব্যাক রাফায়েল ভারান এবং জুলেস কাউন্ডে যথাক্রমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং বার্সেলোনার হয়ে মৌসুমের কিছু অংশ মিস করেছেন এবং চূড়ান্ত দলে নাম থাকা সত্ত্বেও তারা কতটা অবদান রাখতে সক্ষম হবে তা অজানা।

দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা—

ফ্রান্সের আক্রমণ ভাগ খুবই ভয়ঙ্কর। তারা যে কোনদিন যেকোনো প্রতিপক্ষকে ইচ্ছে করলেই তছনছ করে দিতে পারে। দলের সব স্ট্রাইকাররা মোটামুটি ভালো ফর্মে রয়েছে, এবং যেকোনো মুহূর্তে দলের জন্য প্রয়োজনীয় গোল বের করে নিতে বদ্ধপরিকর। ‌‌তাই দল কিছুটা রক্ষণাত্মক খেললেও দলের স্ট্রাইকাররা সময় মত গোল বের করে নিয়ে আসবেন এবং ম্যাচের লাগাম নিজেদের পকেটে পুরে রাখবেন। আর দলের ট্যাকটিক্যাল মাস্টার
ডেসচ্যাম্পসের যেকোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স আদায় করে নেবার মন্ত্র জানা আছে। ‌

ইনজুরি এবং ক্রমাগত ফর্ম হারানো ফ্রান্সের ডিফেন্স লাইনকে কিছুটা চিন্তার মধ্যে রাখতে পারে। মিডফিল্ডে পগবা এবং কান্তের অভাব দল হাড়ে হাড়ে টের পাবে কারণ তাদের পরিবর্তে যে মিডফিল্ডাররা খেলবেন তাদের অভিজ্ঞতা এই দুজনের কাছে কিছুই নয়। ‌‌

তাছাড়া স্টার প্লেয়ারদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের রেষারেষি বা দ্বন্দ্ব যেকোনো সময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে তা দলের জন্য যথেষ্ট খারাপ ফল বয়ে আনবে। এক সময় শোনা গিয়েছিল পল পগবা জাদুকরের মাধ্যমে দলের মূল খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্ষতি করতে চাচ্ছেন। তাই এক হিসেবে ফ্রান্সের ভাগ্য ভালই বলতে হবে, কারণ পগবা এই মুহূর্তে দলে নেই।

ফ্রান্সের পক্ষে বাজির দর—

  • বিশ্বকাপ জিতবে ফ্রান্স: ৭/১
  • সেমিফাইনালে উঠার সম্ভাবনা: ১৩/৮
  • কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে ফ্রান্স: ৮/১৫
  • গ্রুপ ডি জেতার সম্ভাবনা ফ্রান্সের: ৪/৯
  • কিলিয়ান এমবাপ্পের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতার সম্ভাবনা: ৮/১।

আমার দেখা ফ্রান্সের সেরা ৩০ ফুটবলার (অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে)—

ফ্রান্স বিশ্বের সেরা দলটির মধ্যে একটি, তাই সেরা-১১ বা সেরা-২৩ দল গঠন করা খুব কঠিন। তাই ৩০ জন সেরা খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করেছি, যাদের খেলা আমি এ যাবৎ পর্যন্ত দেখেছি।

গোলরক্ষক:- হুগো লরিস (ম্যাচ: ১৩৯। তিনি ৩৫ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং টটেনহ্যাম ক্লাবের সাথে খেলছেন)।ফ্যাবিয়েন বার্থেজ (ম্যাচ: ৮৭)।

ডিফেন্ডার:-
রাইট উইংব্যাক: লিলিয়ান থুরাম (ম্যাচ: ১৪২ এবং গোল: ২)। উইলি স্যাগনোল (ম্যাচ: ৫৮)।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ৫) লরেন্ট ব্ল্যাঙ্ক (ম্যাচ: ৯৭ এবং গোল: ১৬)। মার্সেল ডেসাইলি (ম্যাচ: ১১৬ এবং গোল: ৩)। উইলিয়াম গ্যালাস (ম্যাচ: ৮৪ এবং গোল: ৫)। রাফায়েল ভারান (ম্যাচ: ৮৭ এবং গোল: ৫। তিনি ২৯ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের সাথে খেলছেন)।

লেফট উইংব্যাক:বিক্সেন্টে লিজারাজু (ম্যাচ: ৯৭ এবং গোল: ২)। প্যাট্রিস এভরা (ম্যাচ: ৮১)।

মিডফিল্ডার:

ডিফেন্সিভ মিড: দিদিয়ের দেশাম্প (ম্যাচ: ১০৩ এবং গোল: ৪)। প্যাট্রিক ভিয়েরা (ম্যাচ: ১০৭ এবং গোল: ৬)। ক্লদ মাকেলেলে (ম্যাচ: ৭১)। এন’গোলো কান্তে (ম্যাচ: ৫৩ এবং গোল: ২। তিনি ৩১ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং চেলসি ক্লাবের সাথে খেলছেন)। ব্লেইস মাতুইদি (ম্যাচ: ৮৪ এবং গোল: ৯)।

অ্যাটাকিং মিডি: জিনেদিন জিদান (ম্যাচ: ১০৮ এবং গোল: ৩১)। মিশেল প্লাতিনি (ম্যাচ: ৭২ এবং গোল: ৪১)। জিন-পিয়েরে পাপিন (ম্যাচ: ৫৪ এবং গোল: ৩০)। ফ্রাঙ্ক রিবেরি (ম্যাচ: ৮১ এবং গোল: ১৬)। এরিক ক্যান্টোনা (ম্যাচ: ৪৫ এবং গোল: ২০)। পল পোগবা (ম্যাচ: ৯১ এবং গোল: ১১। তিনি ২৯ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং জুভেন্টাস ক্লাবের সাথে খেলছেন)। রবার্ট পিরেস (ম্যাচ: ৭৯ এবং গোল: ১৪)। ফ্লোরেন্ট মালুদা (ম্যাচ: ৮০ এবং গোল: ৯)। ইউরি জোর্কাইফ (ম্যাচ: ৮০ এবং গোল: ৯)। অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান (ম্যাচ: ১১০ এবং গোল: ৪২)।

ফরোয়ার্ড: থিয়েরি হেনরি (ম্যাচ: ১২৩ এবং গোল: ৫১)। করিম বেনজেমা (ম্যাচ: ৯৭ এবং গোল: ৩৭)। কিলিয়ান এমবাপে (ম্যাচ: ৫৯ এবং গোল: ২৮। তিনি ২৩ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং প্যারিস সেন্ট জার্মেই ক্লাবের সাথে খেলছেন)। ডেভিড ট্রেজেগুয়েট (ম্যাচ: ৭১ এবং গোল: ৩৪)। অলিভিয়ের জিরু (ম্যাচ: ১১৪ এবং গোল: ৪৯। তিনি ৩৬ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দল এবং এ.সি মিলান ক্লাবের সাথে খেলছেন)।

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন