বিজ্ঞাপন

অটিস্টিক শিশুদের আলোকবর্তিকা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

December 8, 2022 | 6:29 pm

তাপস হালদার

অটিস্টিক শিশুরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজের এই অংশটিকে বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। তারাও একজন সাধারণ মানুষ, সমাজের কোন বোঝা নয়। একটু আদর যত্ন পেলে তারাও নিজেদের প্রমান করতে পারেন। এদেশের মানুষের মাঝে এমন বাস্তবতা প্রমান করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি একজন লাইসেন্স প্রাপ্ত স্কুল সাইকোলজিস্ট, ব্যারি ইউনিভার্সিটির স্কুল সাইকোলজি বিভাগে ক্লিনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্যানেলের সদস্য, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এর ‘ভালনারেবিলিটি’বিষয়ক শুভেচ্ছাদূত, অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস বিষযক ক্লাইমেট ভালনারেবল জাতীয় অ্যাডভাইজরি কমিটি ও সুচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপর মাস্টার্স এবং স্কুল সাইকোলজির উপর বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা শুরু করেন। তার গবেষণা ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজের সাফল্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তার উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথম বারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পরামর্শে বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভেলপমেন্ট’ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট -২০১৩’পাশ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যাবলিতে অটিজমের বিষয়টি তিনিই অন্তর্ভুক্ত করেন। এজন্যই তাকে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালে ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’ পদকে ভূষিত করে। এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অটিজম বিষয়ক ‘,শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে দায়িত্ব পান।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার তারই পরামর্শে অটিজম প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ ও অবকাঠামোগত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, অটিজম কর্নার, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাতা প্রদান, উপবৃত্তির ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। যার আওতায় পঞ্চাশ টি বিদ্যালয়ে প্রায় দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম প্রতিষ্ঠা, প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় ১০৩ টি সেবা কেন্দ্র স্থাপন, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল শুধুমাত্র অটিজম নিয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি। বিশ্বের অনেক দেশই এই ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি দেশ মিলে তৈরি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম বা সিভিএফ। আন্তর্জাতিক এই ফোরামের ‘থিমেটিক দূত’ মনোনীত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে দূত হিসেবে আরো রয়েছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ, ফিলিপাইনের উপ-স্পিকার লরেন লেগার্দা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ তোসি এমপানু।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নারীদের নিরাপত্তা, সমঅধিকার নিয়েও তিনি কাজ করছেন। ‘পাবলিক প্লেসে নারীর নিরাপত্তা’ বিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের একটি বক্তব্যে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে সাময়া ওয়াজেদ পুতুল বলেছেন, ‘হ্যা,সেলফ প্রটেকশন স্কিলস জানা উচিৎ, অফকোর্স। কিন্তু আমাদের কেন এভাবে থাকতে হবে। কেন আমরা জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে চলব? আমরা মেয়ে বলে কেন ভয়ে চলতে হবে, অন্যভাবে চলতে হবে? আমাদের যেটা মনে চায়, যেটা ইচ্ছা করে, যেটা আমরা করতে পারি, সেটা কেন আমরা করতে পারব না? তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশকে যেন আমরা এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। যেখানে কোনো মেয়ে হয়রানির শিকার হবে না। কোনো মেয়ের অশ্রদ্ধাও হবে না। আমরা যেন সম্মানের সাথে এগিয়ে যেতে পারি। যে যেটার স্বপ্ন দেখছি, যেটা করতে চাচ্ছি মন খুলে যেন এটা করতে পারি। আমার চার বাচ্চাকে আমি যা শেখাব, আমি চাই আমার দেশে ওরকম ভাবে সবাইকে শেখানো হোক যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো তফাৎ নাই। আমরা ইক্যুয়াল। আমরা সব জায়গায় ঘর হোক, বাইরে হোক, যেখানেই হোক, রাস্তাঘাটে হোক, স্কুলে হোক এবং কাজকর্মের জায়গায় যেন নারীর সম্মান তৈরি করি।’

গত বছর ৯ ডিসেম্বর ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে মেয়ের (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ) জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘একটি অনুরোধ করবো, আজকে আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন, সবার কাছে দোয়া চাই। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পুতুলের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, সে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছে সায়মা ওয়াজেদ। সেটা হলো এখন কেউ এই অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলে তাদেরকে আর লুকিয়ে রাখেনা। একসময় এই অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুরা জন্ম নিলে বাবা-মা লুকিয়ে রাখতো। যদি কোনো মায়ের সন্তান, কিন্তু সেই জন্ম দিলো কেন মাকেও পরিবারে অনেক সময় লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। অনেক সময় স্বামী তালাক দিয়েছে বা আরেকটা বিয়ে করেছে। এই ধরনের একটা সমাজ ব্যবস্থা আমাদের সমাজে ছিল।’

মাত্র কয়েক বছর আগেও অটিজম সম্পর্কে মানুষের বিরূপ ধারণা ছিল। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আরো ব্যাপকভাবে কাজ করতে তিনি তৈরি করেছেন ‘সুচনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অটিজম ও স্নায়ু বৈকল্য বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। অটিজম মেকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসনীয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ব দরবারে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বিজ্ঞাপন

মানুষের জন্য কাজ করা বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্বভাবজাত ধর্ম। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু নেপথ্যে থেকে মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে মানসিক ভারসাম্য ও শারিরীক প্রতিবন্ধী মানুষকে সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের পথে এগিয়ে নিতে তিনিই পরিবর্তনের বাতিঘর, অটিস্টিক শিশুদের আলোকবর্তিকা।

৯ ডিসেম্বর সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শুভ জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন